বাড়ি ফেরার পথ
বাড়ি ফেরার পথে শুয়ে থাকে
গৃহকাতর রোদ,
শেষ বিকেলের রোদ নিস্তরঙ্গ হলে
নিঃসঙ্গ নদীর কাছে শোনা যায়
নিখিলের স্বর,
কোথাও একটা রোদ পড়ে থাকে
মায়ের মুখের মতো।
করতলে সন্ধ্যাতারার ছায়া,
ধূসর বাড়িতেও জ্বলে ওঠে আলো
উদ্বিগ্ন দরোজা কিম্বা জানলা খুলে
শিশুর চোখ
কারো কারো
বাড়ি ফেরার পথের মতো চেনাপথ
থাকেই না।
লোকাল ট্রেন
সন্ধ্যের লোকাল ট্রেন টের পায়
পরিত্যক্ত ভূমির দীর্ঘশ্বাস!
ঘরমুখী উড়াল পাখির সংক্রামে
আঁধার হয়ে আসে আকাশ
জোনাকির শব্দে রাত্রির হাতছানি
ট্রেন থামে,
নেমে যায় সারিবদ্ধ লোকজন
দোকানপাট পেছনে রেখে
নিরুক্ত টালিঘরের
আলোর আবছায়ায় শোনা যায়
শিশুর কলস্বরঃ
‘বাবা এসেছে’।
বীজ
নাভীর মধ্যে অনন্ত মোহমন্ত্র
সঙ্গে আমি!
প্রতি ক্ষণে জেগে ওঠে স্মৃতি ও বিভ্রম
জেগে ওঠে জ্যোতির্ময় অক্ষরবৃত্ত
ফাগুন পূর্ণিমা রাতে,
ছিল কিছু গূঢ়শব্দ, আর আরো
কিছু গূঢ় অর্থ
ঐসব মর্মলিপি, অলৌকিক ভাষা
সঞ্চয় করে রাখি
কোন এক অমোঘ মঞ্চে
কাঁদতে পারি ভেবে…
কি যে চলে যায় নাভীমূল ছেড়ে
আগুন নিভে যাওয়ার পর!
ঝরাপাতার স্বর
পোড়ো উঠোনে বাসা বেঁধেছে সময়ের চড়ুই
কালের উত্তাপে ঝরে পড়ে বেদনা
অন্ধকারের ভেতর বাড়িয়ে আছি হাত
আরো গাঢ় তমস্বিণীকে ছুঁয়ে।
অতসীগন্ধে কতবার ডুবে গেছে চাঁদ!
দুপুরের আতপ্ত প্রহরে শরীর জুড়ে
নেমে আসে বসন্তবেদনা!
সীমানা হারিয়ে দিগন্তে খুঁজি
লুপ্ত মানচিত্র আর ঝরাপাতার স্বর।
সমকাল
সমকালের মাটি আমায় ছুঁয়ে থাক
মহাকালের উৎকীর্ণ অবয়বে
সতৃষ্ণ হয় না আমার হৃদয়।
সমকালের বৃষ্টিতে ভিজবো বলেই বাইরে দাঁড়াই,
ফোঁটা ফোঁটা জলের কণা অলিন্দ ভেদ করে
ঘরে পৌঁছালে নিজেকে পরিস্নাত মনে হয়।
অধ্রুবক
নিরর্থ অন্ধকারে শুনি জীবনের শাশ্বত ধ্বনি
শূন্যতায় স্থবিরতা নেই, আছে স্পন্দন
মাটির দিগন্ত বিস্তারে লীন হয়ে
আছি, এই আমি; এই শুধু!
যতদূর ফিরে দেখি
আদি থেকে উপান্ত
শূন্যের ভেতর বিষণ্নতার প্রতিভাকণা
অধ্রুবক অনন্ত সঞ্চালন
শাশ্বতের দিকে।
ধন্যবাদ জানাই।