বাঁচা-মরার ম্যাচ। এশিয়া কাপে অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে বাংলাদেশের এই ম্যাচ জয়ের বিকল্প ছিল না। একই হিসেব শ্রীলঙ্কার বেলাতেও। ১৮৪ রানের টার্গেট দিয়েও হাইভোল্টেজ ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জিততে পারেনি। তীরে এসে ডুবেছে তরি। ৪ বল হাতে রেখে বাংলাদেশকে ২ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে শ্রীলঙ্কা।
পুরো ম্যাচই শেষ দিকে রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে। তখন চলছিল ১৮তম ওভার। মনে হচ্ছিল কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে শুধু শানাকা। তখনও হুমকি হয়ে মেহেদীর চতুর্থ বলে তুলে নিলেন বাউন্ডারি। পরের বলে উঠিয়ে মারতে গিয়ে তালুবন্দি হলেন মোসাদ্দেকের। ঠিক তার বিদায়ের পরেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছিল বাংলাদেশের মুঠোয়! কিন্তু এবাদতের ব্যয়বহুল ১৯তম ওভারে ম্যাচ আবার চলে যায় লঙ্কানদের হাতে। অভিষিক্ত পেসার ১৭ রান দিয়েছেন এই ওভারে। চামিকা করুনারত্নের উইকেট নিতে পারলেও ম্যাচটা হাতছাড়া করতে দেননি লঙ্কানদের লেজের দিকের ব্যাটাররা। যেহেতু ৬ বলে ৮ রান প্রয়োজন। তার পরের তিন বলেই শ্রীলঙ্কা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে। অবশ্য কঠিন মুহূর্তে নো-ওয়াইড বল দেওয়ার মতো বিলাসিতাও করেছে সাকিবের দল।
সেজন্য এই জয়ের মঞ্চ গড়ে দিতে দায় আছে বাংলাদেশেরও। লঙ্কানদের টেনে আনা কুশল মেন্ডিসকে চারবার জীবন দিয়েছে। শুরুতেই মারাত্মক ভুল করে বসেন মুশফিক। তাসকিনের দ্বিতীয় ওভারে কুশল মেন্ডিসের ক্যাচ ফেলেছেন। তার পরই তার তো হাত খুলতে থাকা। মনে হচ্ছিল পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের ৫৫ রানও তারা টপকে ফেলবে। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে এবাদত এসে রাশ টেনে ধরেন। অভিষেক ম্যাচে জোড়া আঘাতে চাপে ফেলে দেন লঙ্কানদের। শুরুতে উইকেট নেন পাথুম নিসাঙ্কার। শেষ বলে নতুন নামা আসালাঙ্কাকেও ১ রানে তালুবন্দি করালে পাওয়ার প্লেতে চাপে পড়ে যায় লঙ্কানরা।
অবশ্য সপ্তম ওভারে কিছুটা নাটকীয়তারও সৃষ্টি হয়েছিল। কুশল মেন্ডিসকে গ্লাভসবন্দি করিয়েছিলেন শেখ মেহেদী। কিন্তু নো বল হওয়ায় জীবন পেয়ে যান তিনি। অষ্টম ওভারে এসে এবাদত আবারও বিপদে ফেলেন লঙ্কানদের। আরেকটি শর্ট বল দিয়ে গুনাথিলাকাকে (১১) তালুবন্দি করেছেন। একই ওভারে তৃতীয় জীবন পান সেই মেন্ডিসই। আবারও বাংলাদেশের ভুলে। এবাদতের বল তার গ্লাভসে লেগে কিপারের কাছে গেলেও বাংলাদেশ রিভিউ-ই নেয়নি।
এই সময় অপরপ্রান্ত নড়বড়ে থাকলেও বার বার জীবন পাওয়া মেন্ডিস স্কোরবোর্ড সচল রেখে তাদের টেনে তুলেছেন। অষ্টম ওভারে আবারও সঙ্গী হারা হতে হয় তাকে। নতুন নামা রাজাপাকশে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তাসকিনের বলে। ৪ বলে ২ রান করতে পারেন তিনি।
১১তম ওভারেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল মেন্ডিসের। রান আউট থেকে চতুর্থ জীবন পেয়েছেন। সব সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার পর মেন্ডিস-শানাকার জুটিতেই লঙ্কানদের জয়ের পথে চলা।
৩৫ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়েন দুজন। মেন্ডিসকে ৬০ রানে শেষ পর্যন্ত বিদায় দেন মোস্তাফিজ। তার পরেও হুমকি হয়ে থেকেছেন লঙ্কান অধিনায়ক শানাকা। নতুন নামা হাসারাঙ্গা ২ রান করতে পেরেছেন। তাকে মেহেদীর তালুবন্দি করিয়ে লঙ্কানদের ওপর শেষ দিকে চাপ সৃষ্টি করেন তাসকিন। শানাকা সেই চাপের কাছে পরাজিত হলেও ততক্ষণে জয়ের খুব কাছে চলে যায় তার দল। শেখ মেহেদীর বলে ফেরার আগে ৪৮ বলে করেছেন ৪৫ রানের দারুণ একটি ইনিংস। তাতে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছয়।
শুরুতে দারুণ বল করা এবাদত ব্যয়বহুল ছিলেন সবচেয়ে বেশি। ৫১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। ২৪ রানে দুটি নিয়েছেন তাসকিন। একটি করে উইকেট মোস্তাফিজুর ও শেখ মেহেদীর।
এর আগে টস হেরে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে তুলেছে ১৮৩ রান। ওপেনিংয়ে নামা মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ ব্যাটিংই দারুণ সূচনা এনে দেয়। ২৬ বলে ২টি চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ রান করেছেন তিনি। তার পর সাকিবও স্কোরবোর্ড সচল রাখেন ২২ বলে ২৪ রানের ইনিংস খেলে। সাকিবের বিদায়ে ছন্দ পতন হলেও আফিফ-মাহমুদউল্লাহর ৩৭ বলে করা ৫৭ রানের জুটি বড় স্কোরের মঞ্চ গড়ে দিয়েছে পরে। টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিংয়ে ২২ বলে ৩৯ রান করেন আফিফ। তার ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছয়। মাহমুদউল্লাহও ২২ বলে ২৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসে অবদান রেখেছেন। তবে শেষের দিকে ক্যামিও ইনিংসে স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করতে অবদান ছিল মোসাদ্দেক হোসেন ও তাসকিন আহমদের। দুজনে শেষ ওভারে তুলেছেন ১৭ রান।
মোসাদ্দেক ৯ বল খেলে ২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। তাতে ছিল ৪টি চার। আর তাসকিন ৬ বলে এক ছক্কায় ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
লঙ্কানদের হয়ে ৪১ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন হাসারাঙ্গা, ৩২ রানে দুটি নেন করুনারত্নেও। একটি করে উইকেট নিয়েছেন মাদুশাঙ্কা, থিকশানা ও ফার্নান্ডো। ম্যাচসেরা কুশল মেন্ডিস।