ইতিহাসের ভয়াবহতম বন্যায় ধুঁকছে পাকিস্তান। চলমান এই দুর্যোগে দেশটিতে ইতোমধ্যেই ১১শ’র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহায়তা চাইতে বাধ্য হয়েছে ইসলামাবাদ। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে চলমান বন্যাকে সর্বোচ্চ স্তরের স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসাবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
একইসঙ্গে আহতদের চিকিৎসা, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহ এবং রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের জন্য জরুরি তহবিল (সিএফই) থেকে ১ কোটি মার্কিন ডলার ছাড় করেছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
বুধবার এক ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, ‘আমাদের অভ্যন্তরীণ গ্রেডিং সিস্টেমে পাকিস্তানের বন্যাকে তৃতীয় গ্রেডের জরুরি অবস্থা হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে ডব্লিউএইচও।’
‘এ ধরনের তালিকায় এটিই সর্বোচ্চ স্তর। যার অর্থ সংস্থার তিনটি স্তরই এখন এই দুর্যোগ মোকাবিলার সাথে জড়িত। এই তিনটি স্তর হচ্ছে- দেশ, আঞ্চলিক অফিস এবং সদর দপ্তর।’
ড. টেড্রোস বলেছেন, কয়েক সপ্তাহের ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে ব্যাপক বন্যা এবং ভূমিধস হয়েছে। যার ফলে প্রাণহানি, বাস্তুচ্যুতি এবং অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং প্রায় ৯০০ টি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘পাকিস্তানের তিন-চতুর্থাংশ জেলা এবং ৩ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষের জরুরিভাবে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অবকাঠামোর ক্ষতি, চিকিৎসকের ঘাটতি এবং সীমিত চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ব্যাহত করছে। এর ফলে শিশু, গর্ভবতী নারী এবং সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন এমন মায়েরা বর্ধিত ঝুঁকিতে পড়েছেন।’
টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলছেন, পাকিস্তান ইতোমধ্যেই করোনা, কলেরা, টাইফয়েড, হাম, লেশম্যানিয়াসিস, এইচআইভি এবং পোলিও-সহ স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। আর এখন এই বন্যার ফলে ডায়রিয়াজনিত রোগ, ত্বকের সংক্রমণ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং আরও অনেক নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ফসল ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এই সম্পদের ওপর নির্ভরশীল অনেক সম্প্রদায়কে তাদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।