আশা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ। ‘ফেভারিট’ আফগানিস্তানই শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বের করে নিল। ‘দুই জাদরান’ ইব্রাহিম এবং নাজিবুল্লাহর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বোলারদের তুচ্ছ করে জয় তুলে নিল আফগানিস্তান। আর তাতে এশিয়া কাপ গ্রুপ ‘বি’র চ্যাম্পিয়ন হয়েই সুপার ফোরে জায়গা করে নিয়েছে মোহাম্মদ নবির দল। আর আফগানদের বিপক্ষে হোঁচট খেয়ে এশিয়া কাপ মিশন শুরু হলো টাইগারদের। বাংলাদেশের দেওয়ার ১২৮ রানের লক্ষ্য ৯ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় আফগানিস্তান। ৭ উইকেটের বড় হার উপহার দেয় বাংলাদেশকে।
ইনিংসের শুরুতে আফগান শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ১১ রান করে সাজঘরে পাঠান স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে। এরপর হজরতউল্লাহ জাজাই ইনিংসকে বড় করার চেষ্টা করলেও মোসাদ্দেকের বলে লেগ বিফোরের কবলে পড়ে ২৩ রান করে মাঠ ছাড়েন। তৃতীয় উইকেট হিসেবে মোহাম্মদ নবী দ্রতু ফিরে গেলে কিছুটা চাপে পড়ে আফগানরা। তবে পরবর্তীতে সে চাপকে জয় করে মাঠ ছাড়েন দুই ব্যাটার ইব্রাহিম জাদরান এবং নাজিবুল্লাহ জাদরান।
এদিন প্রথম থেকেই বাংলাদেশকে ম্যাচে রেখেছিলেন টাইগার বোলাররা। তবে ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে ১৭ এবং ১৮তম ওভারে। প্রথমে মুস্তাফিজ এরপর সাইফউদ্দিনকে কচুকাটা করেছেন আফগান ব্যাটার নাজিবুল্লাহ। ১৭ বলে ৪৩ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। এছাড়া ৪১ বলে ৪২ রান করে অপরাজিত থাকেন ইব্রাহিম জাদরান।
বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব, মোসাদ্দেক এবং সাইফউদ্দিন একটি করে উইকেট নেন। মোস্তাফিজ ৩ ওভার বল করে ৩০ রান দিলেও পাননি কোন উইকেট, এছাড়া সাইফউদ্দিন ২ ওভার বল করে দিয়েছেন ২৭ রান।
এর আগে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন এই ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্বে ফেরা সাকিব আল হাসান। নিশ্চয়ই ব্যাটসম্যানদের প্রতি আস্থা রেখেই আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। তবে ব্যাটসম্যানরা যেন সেটার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মুজিব বোলিংয়ে আসতেই ঘাম ছুটে যায় বাংলাদেশের দুই ওপেনারের। সেই ওভারের শেষ বলে তার ক্যারম বল বুঝতে না পেরে লাইন মিস করে বোল্ড হন নাঈম (৮ বলে ৬)।
তার পরের ওভারের শেষ বলে আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়ে ব্যাটের সঙ্গে বলের সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হন বিজয়, বল গিয়ে আঘাত হানে পায়ে। রিভিউ নিয়ে বিজয়ের ধীরগতির ইনিংসের সমাপ্তি নিশ্চিত করে আফগানিস্তান। সাজঘরে ফেরার আগে ১৪ বলে মোটে ৫ রান করেছেন তিনি।
দুই ওপেনারকে ফিরিয়েই ক্ষান্ত হননি মুজিব। নিজের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিবকেও ধরাশায়ী করেছেন তিনি। আগের ওভারে পেসার নাভিন-উল-হকের টানা দুই বলে দুই চার মেরে শুরুতে উইকেট হারানোর চাপ হালকা করার চেষ্টা করেছিলেন সাকিব। তবে মুজিবের ঘূর্ণিতে তাকেও হার মানতে হয়। মুজিবের বলে জায়গা করে নিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্প বাঁচাতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। দলের বিপদ বাড়িয়ে ফিরেছেন ৯ বলে ১১ রান করে।
এরপর বোলিংয়ে এসে নিজের দ্বিতীয় বলেই মুশফিকুর রহিমের (১) উইকেট তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম সেরা স্পিন জাদুকর রশিদ খান। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাওয়া আফিফ হোসেনও (১২) কাটা পড়েছেন তার বলেই। মুশফিক-আফিফ দুজনকেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরের পথ চিনিয়েছেন রশিদ। মাত্র ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে এর আগে কখনো এত কম রানে ব্যাটিং লাইনআপের অর্ধেক হারায়নি টাইগাররা।
রশিদের বলে সাজঘরের পথ ধরার আগে পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ২৫ বলে ২৫ রানের জুটি গড়েছিলেন আফিফ। এরপর ষষ্ঠ উইকেট মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকের ৩১ বলে ৩৬ এবং সপ্তম উইকেট জুটিতে মোসাদ্দেক-মেহেদী হাসানের ২৪ বলে ৩৮ রানের জুটিতে ১২৭ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
২৭ বলে ২৫ রান করে রশিদ খানের বলে হাঁটু গেঁড়ে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে তালুবন্দি হন মাহমুদউল্লাহ। ১২ বলে ২ চারে ১৪ রান করে শেষ ওভারে রান আউট হয়ে ফেরেন মেহেদী হাসান। আর ৩১ বলে ৪ চার এবং ১ ছয় সহযোগে দলীয় সর্বোচ্চ ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন।