আত্ম পরিচয়
পরিযায়ী পাখির ডানার গতি থামাতে চাওয়া মুর্খামি;
আশ্বিনের আকাশে নক্ষত্ররা ঠাঁই নাড়া হয় না কখনও।
সদ্য জন্ম নেওয়া প্রজাপতির পাখায় লেখা থাকে না শুঁয়োপোকার নাম।
আষাঢ়ের যুবতী নদীকে জিজ্ঞেস করি না
উৎস কোথায়?
সন্ধিপুজোর একশ আট পদ্মের কাছে জানতে চাই না সে কোন স্বচ্ছ দিঘি না পেঁকো পুকুর থেকে উঠে এলো।
তুমুল বর্ষণের মেঘের কাছে জানতে চাইনা
কোথা থেকে কেনো সে দামাল হয়ে এলো।
অথচ তুমি যদি মানুষ হও
হাজারো প্রশ্ন
কোন রঙ? কোন জাতি? কোন রাষ্ট্র?
আদিম নারী হবো আবার
তোমার সঙ্গে আমি নির্দ্বিধায় চলে যেতে রাজী…
যেখানে অন্ধকার ঘেঁটু ফুলের ঝোপে থোকা থোকা জোনাকি।
জমাট অন্ধকার মেখে পড়ে থাকে ধূ ধূ মাঠ
নির্জন গ্রামে নিশুতি রাত।
যদি কেউ বেড়ে দেয় পাতে গরম মোটা চালের ভাত,
যদি চাঁদ উঠে আসে গভীর রাতে খোড়ো চালের ওপরে;
বাতাবি লেবু ফুলের গন্ধ ভাসে
চৈতি বাতাসে
আমি ছেড়ে যাব নির্ঘাৎ
এই মেকী সভ্যতার হাত
আদিম নারী হব আবার।
লক্ষণরেখা হীন
তুমি যদি একটু ভালোবাসতে আমায়
লজ্জা পেত বিজ্ঞাপনের সুন্দরী নারী।
বুকের ভেতর এত আগুন ছিল পুড়তে চাইলে না।
মাতালের অশ্রাব্য কথায় রাত্রির বাতাস বিষাক্ত হলো গোটা যৌবন।
চারপাশে কোনো লক্ষণরেখা নেই ভেবে
অনেক কামার্ত দৃষ্টি আমায় বিবস্ত্র করলো
রোজ।
সবাই বোধহয় বুঝেছিল এ দ্রৌপদীর সখা নেই কেউ যে বস্ত্র জোগায়।
সেই যে এক গোধূলি লগন
সিঁথির আকাশ জুড়ে রক্তিম আলেয়া
তাই নিয়েই আজীবন সন্তান পালন, সংসার;
সন্তান যে এতটা শূন্যতা ভরে দিতে পারে
বুঝেছি সবচেয়ে আমি।
তবু হিমঝরা আশ্বিন সন্ধ্যায়
বাতাস বড় বেহিসেবী।
বৃষ্টি শেষে
বৃষ্টি শেষের গাছের পাতায় এক অলীক ঘ্রাণ;
গোলোক চাঁপার পাতা চুঁয়ে পড়ে
টুপটাপ জল…
রমন সিক্ত রমনীর মতন দেখায় ওকে।
ভরা আষাঢ়ের নদীও এক তপ্ত যৌবনা নারী যেন;
ঘোলা জল পাড় ছুঁয়ে বেজে ওঠে খল খল
পাড় ছুঁয়ে সঙ্গম পিপাসায়।
বৃষ্টি শেষের নারীও ভিজে যাওয়া হাসনাহানা যেন মধ্যরাতে।
বৃষ্টি শেষের মাটি যেন সাত জন্মের
পরিচিত মায়ের হলুদ মাখা আঁচল।
রোদ চোর
শ্রাবণের দুপুরবেলা অচেনা মেঘের হাটে
কে যেন বেচে দিয়েছে চেনা রোদকে।
আবছা আলো ছায়ায় শরীরী ছন্দে কে যেন দামামা বাজায় গর্জনে গর্জনে।
তুমুল বর্ষণ শেষে… মেঘ ছেড়ে দিয়েছিল রোদকে
সূর্য ডোবার কিছুটা আগেই।
রোদ বেচার বদলে গোটা গোটা ধানখেত
দিগন্তে মিশে গেছে।
রোদ চোর মানুষ ভাত চায় না আর।
পাথরে মুড়ে দেয় রোদ।
ধবধবে ফ্যাকাশে ত্বক।
আপাত সুখী ম্যাড়ম্যাড়ে সুখ কিনে নেয়
রোদ চোর মানুষ।
সোনালি স্তন ভরেছে অমৃত পানীয়ে
ঋতুমতী পৃথিবীর গায়ে আঁশটে গন্ধ পেয়ে
আকাশ অঝোর ধারা দিল তাকে।
ভিজে যাবার সুখে
পৃথিবীর গর্ভবতী ধানফুলে
নীল আকাশ দিল তার উত্তরীয় খুলে।
পৃথিবীর পিঠে কাঁধে
সোনালি শস্যের ভার
মুঠো মুঠো প্রাণ।
জড় নয়। সোনা নয়।
ধান।
মুঠো মুঠো প্রাণ।
পৃথিবীর পিঠে চাঁপার ঘ্রাণ
খোঁপায় বকুল হাসনাহানায়
মাতাল রাত।
ধরণী তার বুকের আঁচল দিল খুলে…
সোনালি স্তন ভরেছে অমৃত পানীয়ে।