ডি. এন. এ. টেস্ট হলে যে তাঁকে হাতেনাতে ধরা পড়তে হবে, তা নিয়ে সুবিমলের মধ্যে কোনো সন্দেহ ছিল না। ঘটনার দিন ভোররাতে মালতিকে যে বাপের বাড়িতে ফিরে আসতে হয়েছিল, তাও জানা ছিল সুবিমলের। সেই থেকে কোনোদিন সুবিমল মালতির বাড়িতে যান নি। ডাক্তারবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করে মালতি সম্পর্কে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জয়কে জানানো যায় না বলেই ভাবলেন। ভয় একটাই, সব কিছু শুনে নেওয়ার পরে ডাক্তারবাবু নিজেই তাঁকে বিপদে ফেলে দিতে পারেন। শুধুমাত্র পাঁচকান করে দিলেই বিপদের শেষ থাকবে না, গড়ে ওঠা পাবলিক ইমেজ মাটিতে মিশে যাবে। ভাবনার অস্থিরতায় ছটপট করতে লাগলেন। একটা পথ তাঁকে বের করতেই হবে। এতদিন কূটনীতির চালে সবাইকে কাবু করে দিতে পেরেছেন কিন্তু তাৎক্ষণিক বিড়ম্বনা এত জটিল যে কূটনীতির চালবাজি কোনো কাজে আসবে না বলেই সুবিমলের বিশ্বাস। সন্ধের দিকে পটলার দোকানে গিয়ে শুনলেন, মথুরাপুর গ্রামীণ হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডাক্তার তপতী চ্যাটার্জীকে নিয়ে ভীষণ হইচই শুরু হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, ওই লেডি ডাক্তারের চক্রান্তে জীবিত পুত্র সন্তানকে সরিয়ে মায়ের কোলে মরা শিশু ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তপতি চ্যাটার্জি সাফ বলে দিয়েছেন, মরা শিশু জন্মালে কিছুই করার নেই কিন্তু অভিভাবকরা তা বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। তাই নিয়ে এত হইচই।
শোনার পরে সুবিমল কেমন যেন উত্তেজিত হলেন, পটলাকে বললেন, দ্রুত চা দে, ক্রিম কেকার বিস্কুট দিস্।
এতদিনের অভ্যেসে পটলা বুঝতে শিখেছিল, নতুন কোনো প্লট মাথায় এলে রায়বাবু এমনি করে বাড়তি গরম চা খেতে চান, খেতে খেতে আনমনা হয়ে পড়েন, কখনো বিস্কুট খেতে ভুলে যান, অনেকবার অধের্ক চা খেয়ে উঠে চলে গিয়েছেন।
হাসিমুখে পটলার প্রশ্ন, স্পেশাল গরম চা চাচ্ছেন তো?
‘স্পেশাল’ কথাটা জুড়ে দিলি যে?
জানি রায়বাবু, মাঝে মাঝে কড়া গরম চা খুব কাজে আসে আপনার।
বেশ তো তাই দে। আনমনা সুবিমলের মধ্যে অন্য ভাবনার গভীরতা। ডাক্তার তপতী চ্যাটার্জী কেন শিশুপুত্রদেরকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলছেন, তা মাথায় এল না, তবে বুঝলেন, নিশ্চয় পিছনে রয়েছে অন্য মতলব। পটলাকে তাড়া দিয়ে বললেন, হ্যাঁরে হল?
আরেকটু গরম হলেই দেব।
তাড়াতাড়ি দে।
পটলার মুখে হাসি।
হাসছিস যে?
নতুন প্লট পেলেন বুঝি?
তুইও এসব বুঝিস?
প্লট তৈরিতে ব্যস্ত থাকলে আপনাকে ঠিক চিনতে পারি।
কী রকম?
যেমন বাড়তি গরম চায়ের অর্ডার দেওয়া, বিস্কুট না খেয়ে চলে যাওয়া, আনমনা হয়ে ভাবনায় ডুবে থাকা কিংবা অর্ধেক খেয়ে সাইকেলে চেপে বসা।
সুবিমল না হেসে পারলেন না। সেদিন প্রথম বুঝলেন, অনুশীলনের জোরে যে কোনো মানুষ পারে জটিল মানসিক ঘূর্ণাবর্তের অন্তরালকে আয়ত্ব করতে। পটলার জীবনে সেই উত্তরণ ঘটেছে। তারিয়ে তারিয়ে চা খাওয়া শেষ করে হাসপাতালে যাওয়ার জন্যে সাইকেলে উঠে বসলেন। ডাক্তার তপতী চ্যাটার্জীর দাবি প্রকৃত বাস্তব কিনা, তা জানতে খুব ইচ্ছা করছে।
ভিতরে বসে দেখলেন, দশ পনোরো জন লোক এসে জড়ো হয়েছে দোকানের সামনে। পটলাকে উদ্দেশ্য করে তাদের প্রশ্ন, রায়বাবু কী ভিতরে আছেন?
সুবিমল বের হয়ে এসে বললেন, কী ব্যাপার? দল বেঁধে এখানে তোমরা?
হাসপাতাল নিয়ে একটা ব্যবস্থা করুন দাদা। লেডি ডাক্তারের এ স্পর্ধা মেনে নেওয়া যায় না।
তোমরা কী শুনেছ?
প্রসবের পরে ছেলেটাকে নিয়ে অন্য ঘরে গিয়েছিলেন, প্রসূতি তখন ঠিকমতো চৈতন্য অবস্থায় ছিল না, পরে সেবিকার মাধ্যমে একটা মরা শিশু পাঠিয়ে দিয়েছেন। মায়ের দাবি, সে জীবন্ত পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছে। নিজের কানে ছেলের কান্নাও শুনেছে। আপনি একটু কড়া ব্যবস্থা নিন রায়দা, মনে হয়, পিছনে লেডি ডাক্তারের অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে।
সন্তান প্রসবের পরে হাসপাতাল থেকে কোনো এ্যাম্বুলেন্স বের হয়ে গিয়েছিল কী?
আমি দেখেছি রায়দা, মিনিট দশেক পরে একটা অ্যাম্বুলেন্স বের হয়ে গিয়েছিল।
কোনো জরুরি পেশেন্টের ফটো তোলার প্রয়োজনে নয় তো?
তা বলতে পারব না।
এসব হলে হাসপাতালের খাতায় নিশ্চয় এন্ট্রি করা আছে, ওটা আমিই জেনে নিতে পারব।
সুবিমলদা, আপনাকে একটা কিছু করতেই হবে।
রায়বাবু মাথা নেড়ে সাইকেল নিয়ে হনহনিয়ে এগিয়ে চললেন। হাসপাতাল চত্বরে ঢুকেই দেখলেন, লোকে লোকারণ্য, সবার মধ্যে একটাই কৌতূহল,ডাক্তার তপতী চ্যাটার্জী এত বড়ো কান্ড ঘটাতে পারলেন কী করে? কেউ লেডি ডাক্তারকে আর বিশ্বাস করতে পারছে না, বরং তারা প্রতিকার চায়, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়, খাঁটি নেতৃত্বের অভাবে মনে মনে ধুকছে। সুবিমলকে সামনে পেয়ে সবাই হামলে পড়ল, এই তো রায়দা এসে গেছেন, কী করলে হয় করুন। এত বড়ো অন্যায়, কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
ওই লেডি ডাক্তার এখন কী ডিউটিতে?
শুনেছি ভয়ে নিজের কোয়াটারে লুকিয়ে আছেন।
কোয়াটারটা কোথায় জানো?
ওই তো দেখা যাচ্ছে, উত্তর-পূর্ব কোণের ঘরটাতে থাকেন।
তাহলে তো গিয়ে দেখা করতে হয়।
তাই করুন রায়দা, কেবল আপনিই ওঁকে কব্জা করতে পারেন।
বোধ হয় অনেকদিন ধরে এসব চালাচ্ছেন।
আমরাও তাই ভাবছি।
একটা কাজ করতে হবে তোমাদের।
কী করতে হবে বলুন? সকলের দুচোখ সুবিমলের দিকে।
হাসপাতাল চত্বরটা এখনিই ফাঁকা করে দিতে হবে।
আমরা কিন্তু এসেছি ওকে ধরে থানায় তুলে দিতে।
সেটাই বড়ো বিপদের হয়ে উঠতে পারে।
কেন রায়দা?
জোর করে ঘর থেকে তো বের করে আনা যায় না। সেক্ষেত্রে নিজেরাই অপরাধী হয়ে যাবে। তোমরা এখানে থাকলে লেডি ডাক্তার কিছুতেই মন খুলে কথা বলতে চাইবেন না। ভাববেন, যে কোনো সময় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই বলছি কী….।
আর বলতে হবে না রায়দা, আমরা বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি, আপনি যা করলে হয় করুন।
আসর ফাঁকা হতে শুরু করল, কৌতূহলী মানুষের উদ্বেগে তখন আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে। একমাত্র সুবিমল পারেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে, অন্য কারুর পক্ষে তা সম্ভব নয়।
সুবিমল পায়ে পায়ে কোয়াটারের সামনে গিয়ে দেখলেন, সামনের দুটো জানালা বন্ধ। লেডি ডাক্তার যে যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন, তা বেশ বুঝতে পারলেন, তবুও গলা চড়িয়ে ডাকলেন, ম্যাডাম, আমি সুবিমল রায়। জড়ো হওয়া জনতাকে হাসপাতাল চত্বর থেকে সরিয়ে দিয়েছি। কথা বলতে এসেছি আপনার সঙ্গে।
সামনের জানালা খুলে ডাক্তার তপতীর প্রশ্ন, আপনি?
আপনার বিপদের কথা শুনে তড়িঘড়ি চলে এলাম।
দরজা খুলে দিয়ে তপতী বললেন, ভিতরে আসুন। বড়ো প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে আপনার মতো লোকের সাহায্য খুব প্রয়োজন। কথা বলতে আসার জন্যে ধন্যবাদ দিলাম।
সুবিমল ভিতরে গিয়ে বসলেন। কী ভাবে কথা শুরু করবেন, সেই ছক কষছেন নিজের মতো করে।
লেডি ডাক্তার পরম সাগ্রহে বললেন, আগে চা খান, পরে সব কিছু শুনবেন। আপনাকে ম্যাজেসিয়ান বলে মনে হচ্ছে।
এভাবেই ভাবছেন?
আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা সে কথাই বলছে। একটানা দশ বছরের চাকরি। এটাই আমার তৃতীয় কর্মক্ষেত্র। সর্বত্র একই চিত্র দেখে আসছি। হট্টোগোল হলে পুলিশ আসবে, প্রশাসনের বড়ো বড়ো কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসবেন, তাতে কাজ না হলে লাঠি চার্জ করা হবে উশৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে। আজ সেসবের প্রয়োজন হল না। বোনাপার্ট নেপোলিয়নের মতো আসলেন, আম-মানুষকে বুঝিয়ে সুজিয়ে চত্বর ছাড়া করে দিতে পারলেন, তারপর আমার কোয়াটারে এসেছেন আলোচনা চালাতে। আমিও দিব্যি বিশ্বাস করে দরজা খুলে দিলাম। এটা কী আপনার ম্যাজিক পাওয়ার নয়?
নেতৃত্ব ধরে রাখতে গেলে এটুকু করতে হয়, সত্যি সত্যি চা করছেন নাকি?
অবাক হচ্ছেন?
আগে কোনোদিন কোনো লেডি ডাক্তারের কোয়াটারে গিয়ে চা খাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি।
আমাকে ব্যতিক্রম হিসেবে ভাবছেন?
সেটাই স্বাভাবিক।
এত বড়ো ঝক্কি থেকে উদ্ধার করতে পারলেন, তুলনায় এক কাপ গরম চা সামান্যই।
তবুও আপনার মানবিক বদান্যতা নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে।
দারুন কথা বলতে পারেন দেখছি।
রাজনীতি করতে গেলে কথার কারবারি না হলে যে চলে না।
এক অর্থে তা সত্যি। আমাকে নিয়ে একটু ভাবুন, ততক্ষণ চা করা হয়ে যাবে, গ্যাসে দু-তিন মিনিট লাগবে।
তপতীর তৎপরতা শুরু হল। জল ফুটিয়ে দুধ চিনি মিশিয়ে সুবিমলের সামনে চায়ের কাপ মেলে ধরলেন। এবার বলুন কী জানতে এসেছেন?
অভিযোগ গুরুতর, আগে আপনার বিবৃতি শুনতে চাই।
সবই মিথ্যে গুজব।
গত মাসের দুটো ঘটনাও গুজব?
তপতী চ্যাটার্জী যেন আকাশ থেকে পড়লেন? কোন্ দুটো ঘটনার কথা বলছেন?
এভাবে চেপে যাবেন না, থানা ঘুরে এখানে এসেছি, ওসি আপনাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। শুধু প্রমাণ পাচ্ছেন না বলেই। আমি আপনাকে বাধা দিতে আসি নি, সহযোগিতা করতে এসেছি।
ঘুরিয়ে বেশ তো চাপ তৈরি করলেন।
মূল প্রসঙ্গটা জানতে পারলে আমার সুবিধে হয়। তাহলেই জট দ্রুত সরে যেতে পারে। গত মাসেই আপনি দু-দুটো শিশু গোপনে সরিয়ে দিয়েছেন। ডায়মন্ডহারবার মূল ঠেক, সেখান থেকে কলকাতা। অস্বীকার করলে ওসিকে সঙ্গে নিয়ে এ্যাকশানে নামতে বাধ্য হব।
তপতী থমকে না গিয়ে পারলেন না, মুখে স্মিত হাসি, এভাবে রাগছেন কেন? ভুল দেখলে বড়দাদা হিসেবে অবশ্যই শুধরে দিতে পারেন।
নরম করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন? আগে স্বীকার করুন, গত মাসে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে দুটো সদ্যজাত শিশুপুত্র পাচার করেছেন হাসপাতাল থেকে।
তপতী স্তম্ভিত মুখে চেয়ে থাকলেন সুবিমলের দিকে। মনের গভীরে একটাই প্রশ্ন, এত সব জানলেন কী করে?
সুবিমলের কৌতুককর ঠাট্টা, আরে, টাকার ভাগ চাচ্ছি নে।
ঢোক গিলে তপতীর কথা, না মানে বলছিলাম….।
নতুন করে আবার কী বলতে চাচ্ছেন? একটাই তো কথা, আমাকে দায়িত্ব নিয়ে এসব চেপে দিতে হবে।
ডাক্তার তপতী চেয়ে থাকলেন সুবিমলের দিকে।
আপনার মনের কথা প্রকাশ করে কী ভুল করলাম?
তা বলছি নে, ভাবছি, মননে আপনি এতটাই সূক্ষ্ম?
এসব আমার রাজনৈতিক জীবন দর্শনের সঙ্গে জড়িয়ে কিন্তু সমস্যা অন্যত্র।
তপতী আবার দুচোখ রাখলেন সুবিমলের উপর।
ওসি সব জানেন, ওকে ম্যানেজ করব কী করে?
ডাক্তার তপতী নতুন কী একটা প্রসঙ্গ তুলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু সুবিমলের কথা শুনে থমকে যেতে বাধ্য হলেন।
এভাবে ভাবিত হবেন না, প্রয়োজন মনে করলে নিজেই ওসির সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
না না, আপনার মাধ্যমে কথাবার্তা চললে অনেকখানি সুবিধে পেয়ে যেতে পারি।
ভুলে যাবেন না, ওসি আপনার মতো খরিদ্দার খুব আন্তরিকভাবে চান।
উপযাচক হয়ে হেল্প করতে এসেছেন, আপনাকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু হতে পারে না।
ওসি অন্য কিছু ভাববেন না তো?
তাও গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ, তবুও চাচ্ছি আপনিই ম্যানেজ করুন।
প্রতিটা শিশুর জন্যে পান কত করে?
চমকে উঠলেন ডাক্তার তপতী চ্যাটার্জী।
অস্বাভাবিক প্রশ্ন করলাম কী?
তা নয়, তবুও ভাবছি।
ভুলে যাবেন না, থানার ওসি ইতিমধ্যে সব খবর পেয়ে গেছেন। গত মাসে দুটো শিশু পাচার করেছেন, এ মাসে একটা হয়ে গেল। এখন ডিসেম্বর চলছে। সরল হিসেব হল, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ হাসপাতাল থেকে মোট কত শিশু পাচার হয়েছে, সব হিসেব ওসি সাবকে দিতে হবে। কানাকানি জানাজানি হলে মানুষের রোষে আপনার চাকরিও চলে যেতে পারে। অবশ্য সেজন্যে থানার ওসিকে আপনার বিরুদ্ধে কেস স্টার্ট করতে হবে। সেই সুযোগ দিতে যাবেন কেন? তখন হয়তো আমাকে নিয়ে ভাববেন, নতুন পরিচয় কোনো উপকারেই এল না। এখানে জয়েন করেই জেনেছেন আমিই এলাকার ডাকসাইটে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আমাকে নিয়ে ওসিকেও সমঝে চলতে হয়। আপনার ক্ষেত্রে যদি উতরে যেতে না পারি, নিজেই নিজের অবস্থানটা অনেকখানি দুর্বল করে তুলব। সেজন্যে খুব ইচ্ছা করছে আপনার হয়ে সমস্ত ড্রিলটা আমিই সম্পন্ন করি। ওসি নিজেই আমার কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন কেস স্টার্ট করবেন বলে। একটা প্রমাণ হাতে পেলেই হল। সেজন্যে বলছি, সামনের বিপদটাকে একেবারে ছোটোখাঁটো হিসেবে ভাববেন না।
তা ভাবছি নে সুবিমলবাবু, যা লাগে তা তো দিতেই হবে, শুধু চাচ্ছি, আপনিই ওসির সঙ্গে কনট্রাক্ট সেরে নিন।
রাজি না হলে?
একটু বেশি দিলেই বোধ হয়….।
তাহলে আজ সন্ধেয় কথা বলব কিন্তু কটা শিশুর জন্যে শেষ পর্যন্ত কত দিতে চাচ্ছেন, তা না জেনে চুক্তিতে আসব কী করে?
ডাক্তার তপতী মানসিক দ্বিধায় জড়িয়ে পড়লেন।
আবার বলছি, ওসিকে এভাবে ছোটো করে দেখবেন না। ইতিমধ্যে সব তথ্য জেনে ফেলেছেন, ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করা হয়ে গেছে। আসার সময় আমার হাতে যে কপি তুলে দিয়েছেন, তা পড়ছি, মিলিয়ে নিন।
লেডি ডাক্তার তপতী স্তম্ভিত না হয়ে পারলেন না।
জানুয়ারি মাসে তিনটে, ফেব্রুয়ারি মাসে একটা, মার্চ মাসে চারটে, এপ্রিল মাসে এমন ঘটনা ঘটে নি, মে মাসে দুটো, প্রথম কেসটাতে আপনি ফেঁসে যেতে পারতেন। সেই ভয় ছিল বলেই জুন মাসে হাত পা গুটিয়ে বসে ছিলেন, জুলাই মাসে মাত্র একটি, ডায়মন্ডহারবার যাওয়ার পথে শিশুটা মারা গিয়েছিল। অগাস্ট মাসে আবার নতুন করে সফলতা পেয়েছেন, সংখ্যা ছিল তিন। সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র একটি, অক্টোবরে দুটি, নভেম্বরে নেই। ডিসেম্বর চলছে, ইতিমধ্যে একটা কেসে সফলতা পেয়েছেন, মাস শেষ হতে এখনও বেশ কিছুদিন বাকি। মোট ১৮টি শিশু পাচার করতে পেরেছেন। এসব তথ্য ওসির কাছ থেকে পাওয়া, যদিও ব্যক্তিগতভাবে খুব করে চাচ্ছি, আপনি যাতে বিপদে না পড়েন। আপনাকেই বলে দিতে হবে কত টাকার চুক্তিতে আসব। চা তো বেশ করেছেন, স্বাদে অতুলনীয়, প্রতি চুমুকে মনে হচ্ছে, আপনার পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া আমার সামাজিক কর্তব্য।
ডাঃ তপতী চ্যাটার্জী গম্ভীর হয়ে মুখ নীচু করে বসে থাকলেন। সুবিমলবাবু যে তন্ন তন্ন করে খোঁজ নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকল না তপতীর মনে। রফার বাইরে যাওয়া আরও বেশি বিপদজনক। তো তো করে বললেন, সব তথ্য পেয়ে গেছেন যখন আপনিই বলুন, কত দিলে ওসির মুখ বন্ধ করা সম্ভব। এমন এ্যামাউন্ট বলবেন না যা টানতে আমার কষ্ট হতে পারে।
আরে, আমি তো আগাছা, মূল শক্তি ওসি নিজেই; অবশ্য রাজনীতি করি বলেই ওসিসাব আমাকে যথেষ্ট সমীহ করে চলেন। প্রয়োজন হলে ওই রকম গন্ডাকয়েক ওসিকে ট্যাঁকে গুঁজে নিতে পারি। সমস্যা কোথায় জানেন, এ ওসি হাড়ে হাড়ে হারামি, শুধু টাকা চেনেন, প্রতি পাচারের জন্যে পৃথক টাকা দাবি করলে কিছুই করার থাকবে না। তাই বলছি, সংখ্যাটা আপনিই বলে দিন, প্রেসার পলিটিকস করে অঙ্কটা সেই সংখ্যায় দাঁড় করিয়ে রাখতে শেষতম চেষ্টা করব।
ডাক্তার তপতী মহা সমস্যায় পড়ে গেলেন, নিজের মুখে কিছুতেই সংখ্যাটা বলতে চাচ্ছেন না। ঘোড়েল সুবিমল তা মর্মে মর্মে অনুভব করে বললেন, পাচার পিছু এক লাখের কথা বলব?
এত টাকা দেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।
তাহলে কী পঞ্চাশ হাজারে নামব?
তাও তো বেশি হয়ে যাচ্ছে।
পাচার পিছু পঞ্চাশ করে হলে মোট ন’লাখ হয়, সাতে সেরে দেওয়ার চেষ্টা করি, প্রয়োজন হলে ওসির উপর জোর খাটাতে হবে।
তপতী থমকে গেলেন সুবিমলের কথার ভাঁজে। একবার বলছেন, ওসি কথা না শুনলে কিছুই করার নেই, আবার বলছেন, প্রয়োজন হলে ওসির উপর জোর খাটাবেন। হয়কে নয় করে দেওয়ার ভালো ছলনা জানেন দেখছি।
সুবিমলের মুখে আবার প্রচ্ছন্ন হাসি। এভাবে চুপ করে থাকলেন যে?
তাহলে তাই করুন।
আরেকটা বিষয়ে আপনাকে একটু Consider করতে হবে। আমাকে সংগঠন নিয়ে চলতে হয়। মিটিং মিছিল রয়েছে, রোজ পার্টি অফিস খুলতে হয়, সেখানে লোকজন থাকে, তাদের না দেখলে নয়। না, না, ওসির জন্যে বরাদ্দ সাত থেকে এক পয়সাও নিতে পারি না আমি। সবটাই সাহেবের জন্যে বরাদ্দ। বলছি কী, পরবর্তী কেসগুলো থেকে সংগঠনের জন্যে সামান্য কিছু দেবেন, একটা বড়ো শক্তি থাকল আপনার সঙ্গে, কেউ টু শব্দ করতে পারবে না। কয়েকটা কেস আমিই আপনার হাতে তুলে দেব। চার পাঁচদিন পরে একটা নতুন কেস পেয়ে যেতে পারেন। পাশে থাকলে তা নির্ভয়ে সারতে পারবেন। সারাক্ষণ হাসপাতালে উপস্থিত থেকে সবটা সামলে নেওয়ার দায়িত্ব না হয় নিজের কাঁধে নিলাম।
ডাক্তার তপতী চ্যাটার্জী খুশি না হয়ে পারলেন না। সুবিমল উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আজকের মতো আসছি। এখন পাবলিক সামলাতে হবে। রাস্তার উপরে এসে দেখলেন, তখনও বহু মানুষ থম মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শিশু পাচারের মতো ঘটনা, তাদের কৌতূহল আকাশের মতো উঁচু। সুবিমল গলা চড়িয়ে বলতে শুরু করলেন, ডাক্তার তপতীকে ভালো মতো শাসিয়ে দিয়ে এসেছি। ওসির কাছে যাচ্ছি, প্রয়োজন হলে আজই কেস স্টার্ট করব। এত অনাচার কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তোমরা এখন বাড়িতে ফিরে যাও, দু-তিন দিনের মধ্যে একটা গুরুতর খবর শুনতে পাবে।
একটু খুলে বলবেন?
ডাক্তার তপতীকে এ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। কাল যাচ্ছি স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। সাপের লেজে পা দিয়ে চুপ করে থাকলে চলবে না। অনেক ভালো হবে যদি সাপটাকে মেরে বাকি সকলের প্রাণ বাঁচাতে পারি।
জমে থাকা লোকজন খুশি মনে হাসপাতালের চার দিক থেকে ঘরমুখো হতে শুরু করল। সকলের ধারণা, সুবিমলবাবু লেগেছেন যখন একটা ব্যবস্থা না করে ছাড়বেন না। আগের অনেক ঘটনায় সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছেন।
সুবিমল খুশি মনে সাইকেলে এগিয়ে চললেন। থানার পাশে হাইস্কুল মাঠে প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে, জয় রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে, সুবিমলের সচকিত প্রশ্ন, কোনো ডেপুটেশন চলছে নাকি?
মঞ্চে কে বসে আছে দ্যাখেন?
কার কথা বলছিস?
আপনার ক্লাসমেট রাজিবুল।
সুবিমল চমকে উঠলেন। রাজিবুল সরোষে বক্তব্য রাখছেন, ক’দিন পরে শুনতে পাবেন, সাদা মুখের সাহসী রাজনীতিক ডি.এন.এ. টেস্টের ফলে কী সাংঘাতিক কুকীর্তির নায়ক হয়ে উঠেছেন। তখন নিশ্চয় সেই সাদা মুখ কালো হয়ে যাবে, থানা থেকে টানাহ্যাচড়া শুরু হবে, এলাকায় মুখ দেখাতে পারবেন না, প্রদীপকে ফাঁদে ফেলার ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যাবে।
সুবিমলের ভিতরের অস্বস্থি বাড়লেও তা বাইরে এতটুকু প্রকাশ করলেন না, জয়কে বললেন, এসব শুনে লাভ নেই রে, রাবণ মরলে রাম রাজত্ব পাবে, সবই ভবিষ্যৎ কল্পনা, রাজনীতি করতে গেলে কঠোর বাস্তবে পা রাখার মন্ত্র জানতে হয়। হ্যাঁরে, সেই বাঁদরটা মঞ্চে আছে নাকি?
প্রদীপের কথা বলছেন তো? ওই তো রাজিবুলদার পাশে বসে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ছেলেটাও লেগে পড়তে পারল?
তাই তো দেখছি।
মূল কারণ বলতে পারবি?
নিজেকে সামলাতে এ ছাড়া কোনো পথ ছিল না।
বেশ বললি রে, কেবল আমার ভয়ে কয় শালা এক ঘাটে জল খেতে শুরু করেছে। চল্, পটলার দোকানে গিয়ে গরম চায়ে চুমুক দিই, তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে।
তাই চলুন।
সুবিমল সামনে সামনে এগিয়ে চলেছেন, পিছনে জয়। মুখে কিছু না বললেও সুবিমলের বুকের গভীরে সমুদ্রের ঢেউ চলাচলের প্রলয় শুরু হয়ে গেছে। রাজিবুল তার ঘনিষ্টতম বন্ধু, প্রাইমারি স্কুল থেকে কলেজ জীবনের শেষ পর্যন্ত একে অপরের বন্ধু হিসেবে থেকে গিয়েছিল। প্রদীপ তাকে কাছে টানল কী করে? সভায় সংখ্যালঘু মানুষের সমাগম দেখেও সুবিমল মনে মনে শঙ্কিত। রাজিবুলের সৌজন্যে এমনি নতুন অবস্থান তৈরি হল নাতো? প্রদীপের মধ্যে এমন কী যাদু দেখল যে তার খপ্পরে পড়তে বাধ্য হল? তবুও শেষ আশা সুবিমলের, সুচরিতার মতো রাজিবুলকে নিজের দিকে টেনে আনতে পারবেন।
রাত আটটা, সভার কর্মসূচী শেষ, মানুষের ঢল ঘরমুখো হয়ে ফিরে চলেছে। মুখে মুখে DNA Test নিয়ে আলোচনা। তির যে সুবিমলের দিকে তা বেশিরভাগ মানুষ ধরতে পারল না। থানায় ঢোকার জন্যে ভিতরে ভিতরে ছটপট করতে লাগলেন, জয়কে বললেন, তুই কী এখন বাড়িতে ফিরবি?
আপনি?
ভাবছি একবার থানায় যাওয়া প্রয়োজন।
নতুন কোনো সমস্যা?
অভিনব সভা শেষ হল, তলানিতে রাজনীতির গন্ধ রয়েছে, তা নিয়ে ওসি কী ভাবছেন, তা জানতে হবে না?
জয় একটু হাসল কিন্তু কোনো মন্তব্য করল না। সুবিমল সাইকেল নিয়ে থানার দিকে এগিয়ে চললেন। পরিচিত কর্তব্যরত এক কনস্টেবলকে সামনে পেয়ে বললে, ওসি আছেন তো?
বড়বাবুর অফিস একেবারে ফাঁকা, গেলেই কথা বলতে পারবেন।
ওসিকে কীভাবে আগেভাগে ম্যানেজ করা সম্ভব তা নিয়ে সুবিমল থানার সামনে থমকে দাঁড়িয়ে নিজেকে আরেকবার মেপে নিলেন। চেম্বারে ঢুকে বললেন, ভালো আছেন?
আপনারা এলেই ভালো থাকি।
লোকজন এত কম দেখছি কেন?
প্রয়োজন থাকলেই আসেন, নতুবা নয়।
সুবিমলের মুখে এক চিলতে হাসি, স্যার, না জানিয়েই একটা বড়ো অফার আপনার জন্যে হাত পেতে নিয়েছি।
কী ব্যাপারে বলুন তো?
আগে গুণে নিন।
আছে কত বলুন?
এক লাখ।
তাহলে আবার গুণতে বলছেন কেন? বরং কোন সূত্র থেকে এল বললেই খুশি হই।
সুবিমল বুঝলেন, ওসি টোপ গিলে ফেলেছেন। হাত বাড়িয়ে টাকার বান্ডিলটা গুঁজে দিয়ে বললেন, কাল পরশু এসে সব কিছু খুলে বলব।
ওসির মুখে চওড়া হাসি। ভালো করেই জানেন, সুবিমলকে ঘাঁটিয়ে খুব বেশি লাভ হবে না বরং সদ্ভাব রেখে চলতে পারলে নিরাপদে চাকরি করা সম্ভব। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার সুবিমলের একছত্র মুন্সিয়ানার দৃষ্টান্ত তাঁর জানা হয়ে গেছে। তাই আর কথা বাড়ালেন না।
সুবিমল সাইকেল নিয়ে বের হয়ে পড়লেন, মালতির সঙ্গে কথা বলার জন্যে মনে মনে উদগ্রিব হয়ে উঠলেন। জয়কে সঙ্গে নিলেন না এই ভেবে যে বিকেলের সভার গর্জনের সঙ্গে মিল করে ছেলেটা নতুন সূত্র খুঁজে পেতে পারে। এতদিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে সহজে অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। ভেতরের প্লট জেনে ফেললে তাঁর প্রতি যে শ্রদ্ধা ছিল, তা বাষ্প হয়ে উবে যাবে। সেই সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না।
একটা নিতান্ত সাধারণ বাড়ি। সামনে একচিলতে উঠোন। কুঁড়ে ঘরের সামনের অংশে খড়ের ছাউনি। গত বর্ষায় পচে গেছে। আসছে বর্ষার আগে নতুন করে খড় দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। সুবিমল থমকে দাঁড়িয়ে বেল বাজিয়ে নিজের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিলেন। মালতির মা এসে বলল, ভিতরে আসুন।
মালতি কই?
ও তো লজ্জায় আর বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না, সময়ও হয়ে এসেছে।
সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি। এই টাকাটা নাও, পরশুদিন সন্ধেয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে লেডি ডাক্তার ওকে ভর্তি করে নেবে। আজ কথা বলে ঠিক করে এসেছি। প্রদীপ যে অন্যায় করেছে, সেটাই শুধু প্রচারে রাখো। তাহলে আর লজ্জায় মুখ ঢাকতে হবে না। ওই হারামজাদাকে কঠোর শাস্তি না দিয়ে ছাড়ব না। হেঁতালগাছটা ঝড়ে কেমন পড়ে যায় দ্যাখো।
যা ভালো বোঝেন করুন।
তোমাকে কিস্সু ভাবতে হবে না। আবেগে গতি এলেই সুবিমল কিছুকে কিস্সু উচ্চারণ না করে পারেন না। সাইকেলে উঠে বসে প্যাডেল চাপ দিয়ে মাথার ভিতরে যোগ বিয়োগের অঙ্ক নিয়ে এগিয়ে চললেন। পথে রঘু মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে। সুবিমলের মুখে হাসি, তোর আবার কী হলরে?
ওকে নিয়ে আর পারছি নে সুবিমলদা, বায়না ধরেছে, ক’দিনের জন্য বাপের বাড়িতে যাবে, ভয় সেখানেই, গেলে কী ফিরে আসবে?
তোর আদর পেয়ে এখনও অতীতের কথা ভুলে যেতে পারে নি?
সারা দিন মুখ ভার করে বসে থাকে, তাতেই যত ভয়।
ভালো করে হাসাতে পারিস না?
চেষ্টা তো করি কিন্তু….।
বুঝতে পেরেছি।
সেই ভয়ে ওকে বাজারে পর্যন্ত যেতে দিই না সুবিমলদা।
রায়বাবুর মুখে হাসি, কবে বাপ হচ্ছিস বল্ তো?
ভগবান কবে দয়া করেন?
ঈশ্বরে বিশ্বাস করিস?
খুব করি গো সুবিমলদা।
তাহলে ঈশ্বর মুখ তুলে না তাকিয়ে পারবেন না। এখন নিশ্চিন্তে বাড়িতে ফিরে যা, কাল পরশু ভেবেচিন্তে একটা সিদ্ধান্তে আসতেই হবে।
তাহলে আসছি সুবিমলদা।
সাবধানে যাস।
রঘুর মুখে এক চিলতে হাসি। ভালো করেই জানে, শরীরী চলাফেরায় হঠাৎ বিপদ এলে সাবধানে চলার কোনো তাৎপর্য বাস্তবে কাজে আসে না। সুবিমল সাইকেলে বাড়ির দিকে দ্রুত এগিয়ে চললেন। চিন্তার জট কিছুতেই মাথা থেকে দূর হচ্ছে না। রাতের খাওয়া সেরে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু তা সম্ভব হল না, অন্ধকার প্রহর সেই চিন্তাস্রোতে নতুন গতি এনে দিল। বুকের গভীরে ঢিপঢিপ শব্দদোল, তাতেই সুবিমল নতুন বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন। সুচরিতা থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাবে নাতো? ভাবনার গতিপথে নিজেকে কেমন যেন অসহায় মনে হচ্ছে। মালতিকে নিয়েও নতুন বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। সন্তান জন্মানোর পরে তাঁর নাম প্রকাশ করে দিলে বিপদের শেষ থাকবে না। এ অভিযোগ রাজনৈতিক জীবনের উপর কত বেশি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে, তা সুবিমল মর্মে মর্মে বোঝেন। রাতের শেষ লগ্ন, দুশ্চিন্তা আর টেনে নিয়ে যেতে পারছেন না, তন্দ্রার অমাবশ্যা এসে সেই দুশ্চিন্তায় ছেদ টেনে নিল।
চলবে…