ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি, জননেতা, চট্টলগৌরব, ইংরেজি দৈনিক ‘দি মোহামেডান অবজারভার’ পত্রিকার সম্পাদক, মরমী কবি ডিপুটি শাহসুফি হযরত শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলম এর ৯২তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে স্মরণসভা করেছে ‘বাংলাদেশ ইতিহাস চর্চা পরিষদ।’
গত রোববার (২১ আগস্ট) বিকেলে দারুল সালাম মার্কেটের গণস্বাস্থ্য হোমিও অডিটরিয়ামে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ইতিহাস চর্চা পরিষদের সভাপতি ও ইতিহাসবেত্তা সোহেল মো. ফখরুদ-দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় কবিতা মঞ্চের সভাপতি কবি মাহামুদুল হাসান নিজামী। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সান্তা-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি’র সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মুন্সী। অনুষ্ঠানে আলোচনা সভার সূচনা করেন বিশিষ্ট লেখক ও কবি নজরুল ইসলাম বাঙালী।
আলোচনা সভার শুরুতে ভারত উপমহাদেশের মুসলমান কর্তৃক প্রকাশিত ইংরেজিতে প্রথম দৈনিক পত্রিকা ‘দি মোহামেডান অবজারভার’ এর সম্পাদক ডিপুটি হযরত শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলম এর জীবন ও কর্ম বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ ইতিহাস চর্চা পরিষদের সাধারন সম্পাদক এবং ডিপুটি শাহ বদিউল আলমের প্রপৌত্র মোহাম্মদ নাজমুল হক শামীম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এরশাদ হোসেন খান, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি সিরাজুল করিম, বিশিষ্ট মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ও লেখক ড. শরীফ সাকী, বহুমাত্রিক লেখক, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক, কবি সৈয়দা রুখসানা জামান সানু, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠক ও লেখক খায়রুল আলম, বিশিষ্ট কবি আতিক হেলাল, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. এস এম সরওয়ার, কবি শিহাব রিফাত আলম, বদিউল এহেসান, সাংবাদিক-কবি আজম পাঠোয়ারী, কবি অসীম ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিল্পী আঁখি আলম, সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক নুর মোহাম্মদ রানা, কবি রবিউল আলম রবি, আদিলুর জামান, এইচ এম হাসান মাহমুদ, সাব্বির আহমদ, নাছির হোসেন অপি, ওস্তাদ আলম মাহমুদ, শামসুল আলম কাজল, মৌলানা জহিরুল ইসলাম জাহেরী, বিটিভির গীতিকার ও সুরকার মো. এনামুল হক মুকুল, সংগীতশিল্পী ইমতিয়াজ আয়মান, মরমী লেখক ও সুফী গবেষক ও কবি নায়লা পাইলট, কবি মোজাম্মেল হক, কবি গোলাম মাওলা, সালমা আক্তার লিজা, কবি প্রীতি সারমান, মোহাম্মদ আদিল, কবি ও গবেষক মো. আবদুল আলীম, কবি জুলিয়াস খান, মো. বেল্লাল হাওলাদার, সোহেল আহমদ, মনজুরুল হক, হারুনুর রশিদ, ইউসুফ রেজা, কবি জাগ্রত হিরো মাইনুদ্দিন, সোহা মনি মিষ্টি প্রমুখ।
কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে পূর্ববঙ্গ এবং চট্টগ্রামের যে সকল দেশপ্রেমিক কীর্তিমান ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম পুরোধা পুরুষ ছিলেন ডেপুটি শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলম। তাঁর জীবনকর্ম ও আদর্শ আমাদের নবপ্রজন্মের কাছে উন্মোচনের লক্ষ্যে জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান বক্তারা।
বক্তারা ডিপুটি শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলমের লেখা কালজয়ী মুল্যবান বইগুলোর পাণ্ডুলিপি থেকে বাংলা একাডেমি ‘শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলম রচনা সমগ্র’ শিরোনামে প্রকাশের দাবী জানান।
উল্লেখ্য, তদানীন্তন বঙ্গদেশের কৃতিপুরুষ, চট্টলাগৌরব ডেপুটি শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলম (জন্ম ১৮৫৬, মৃত্যু ১৯৩১) ৯১ বছর আগে ১৪ মহরম, ১৩৫০ হিজরী, ইংরেজি ১ জুন ১৯৩১ সালে নিজ গ্রাম বাঁশখালী থানার ইজ্জত নগরের সাহেব বাড়ীতে (কালিপুর) তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে জানাযায়, তিনি মানুষ – মানবতা, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, দ্বীন, ধর্ম, গ্রন্থ প্রনয়ন ও তরিকায়ে জাঁহাগিরিয়ার পতাকা কে উজ্জল করে দ্বীন ও আখেরাতের শিক্ষায় মানুষকে আলোকিত জীবন দান করেছিলেন সারা পৃথিবী ব্যাপি। তাঁর লিখিত গ্রন্থ হোয়াট ইজ ম্যান (মানুষ ও বিশ্বজনীন ধর্ম) বর্তমানে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ানো হয় ও গবেষণা চলছে। তাঁর লিখিত অন্যান্য গ্রন্থ- আদবে মুরিদ, আদবে তরীকত, জাহাঁগীর দর্পণ, আমার পীর, ফতুহুল গায়ব, আজকার আসগাল, ইসলাম ও সংগীত বিদ্যা, ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য।
এছাড়াও তিনি ঐতিহ্যবাহী সাতকানিয়া মির্জাখীল দরবার শরীফের মুরিদ ও মহান খলিফা ছিলেন। তিনি বৃটিশ শাসন আমলে সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯১৪ সালে একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ হোয়াট ইজ ম্যান রচনা করেছেন। এই মূল্যবান বইটি আজ থেকে ১০৮ বছর আগে প্রকাশিত হয়। তার এই বইটি সহ আরো অনেক মূলবান বই পৃথিবীর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে।
এ স্মরণসভায় বক্তারা আরও বলেন, পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রামের কালজয়ী কৃতী মানুষ বিপ্লবী হাবিলদার রজব আলী, বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেন, কাজেম আলী মাস্টার, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, ডিপুটি শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলম, আবদুল হামিদ ফখরে বাংলা, কবিয়াল করিম বকস, বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মৌলভী সৈয়দ সুলতান, বিপ্লবী কল্পনা দত্ত, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারসহ এই অঞ্চলের ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেয়া ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় ব্যক্তিদের জীবন ও কর্ম আমাদের এই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য ইতিহাস লেখক, গবেষক, কবি-সাহিত্যিকদের আরও অধিকতর সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
সবশেষে বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পীবৃন্দ মরমী সঙ্গীত পরিবেশন করেন।