তিন দিন স্থিতিশীল থাকার পর সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে ফের কমেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডলারের মান বাড়তে থাকা ও অন্যান্য মুদ্রার মান স্থিতিশীল, কিংবা হ্রাস পাওয়াই সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কাই তেলের দাম নিম্নমূখী হওয়ার মূল কারণ।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার বিশ্ব বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ৯৫ দশমিক ১৪ ডলার থেকে ১ দশমিক ৫৮ ডলার কমে হয়েছে ৯৩ দশমিক ৫৬ ডলার। শতকরা হিসেবে এই হ্রাসের হার ১ দশমিক ৬ শতাংশ।
আর ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ১ দশমিক ৭ ডলার কমে হয়েছে ৮৯ দশমিক ০৭ ডলার। শতকরা হিসেবে মূল্য কমার হার ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তিন দিন স্থিতিশীল থাকার পর সোমবার ফের কমল তেলের দাম। শতকরা হিসেবে দেখা গেছে— সপ্তাহের এই মাঝামাঝি পর্যায়ে ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআিই— দুই ধরনের তেলের দাম কমায় আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস পেয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
জাপানভিত্তিক অর্থনৈতিক সংস্থা নোমুরা সিকিউরিটিজের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ তাতসুফুমি ওকোশি এ বিষয়ে রয়টার্সকে বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডলার শক্তিশালী হচ্ছে, আর অন্যান্য মুদ্রার মান হয় স্থিতিশীল আছে, নয়তো কমছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের ভারসামীহীন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’
‘তেলের জন্য ডলার কেনা বাবদ এখন অতিরিক্ত দেশীয় মুদ্রা ব্যায় করতে হচ্ছে বিভিন্ন রাষ্ট্রের। আবার ডলারের শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকায় ব্যাংকগুলোর সুদের হারও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণে স্বাভাকিভাবেই কম পরিমাণ তেল কিনছে বিভিন্ন দেশ।’
‘মূলত চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেই তেলের দাম কমছে বিশ্ববাজারে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত যদি এই পরিস্থিতি থাকে, সেক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা আছে।’
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কয়েকটি বড় অর্থনীতির দেশ ও অঞ্চলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে ডলারের মানের সূচক উর্ধ্বমূখী রয়েছে; অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে স্থিতিশীল রয়েছে, কিংবা হ্রাস পাচ্ছে যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুদ্রা ইউরো এবং চীনের মুদ্রা ইউয়ানের।
এসব মুদ্রার মধ্যে পাউন্ড ও ইউরোর মান প্রায় স্থিতিশীল থাকলেও ইউয়ানের মান কমেছে। ‘জিরো কোভিড নীতি’ নেওয়ার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়াই এই হ্রাসের মূল কারণ বলে মনে করছেন বৈশ্বিক অর্থনীতিবিদরা।
চীন বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ক্রেতা। কিন্তু ইউয়ানের মান কমে যাওয়ায় বিশ্ব বাজার থেকে তেল আমদানি কমিয়ে দিয়েছে চীন। কিন্তু একই সময়ে রাশিয়া থেকে কম দামে বিপুল পরিমাণ তেল কিনছে দেশটি।
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নিষেধজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্ববাজারে আসতে পারছে না রাশিয়ার জ্বালানি তেল।