বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ হওয়া ৮৭ মৎস্যজীবীকে ভারতে উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে রবিবারই উদ্ধার হয়েছেন ২৭ জন। বাকিদের গত কয়েক দিনের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি ঢাকায় এই সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছে দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাগরে নিখোঁজ অন্যদের উদ্ধারে তল্লাশি চালাচ্ছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
দুই দিন আগে বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপের কারণে নিখোঁজ হয়ে যায় বাংলাদেশের তিনটি মাছ ধরার ট্রলার। একটি ট্রলার উদ্ধার করা গেলেও বাকি দুটি ট্রলার সমুদ্রে ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়।
রবিবার সকালে হলদিয়া ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী বাংলাদেশের ২৭ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে। পাশাপাশি একটি মাছ ধরার ট্রলার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা মৎস্যজীবীদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আপাতত তারা সুস্থ রয়েছেন।
ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর ডর্নিয়ার এয়ারক্রাফট এবং দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ গভীর সমুদ্রের বিচ্ছিন্ন এলাকায় অনুসন্ধান কাজ চালাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের ডিআইজি পঙ্কজ ভার্মা বলেন ‘মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে। দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গোপসাগর থেকে ৬০ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় ট্রলারের মৎস্যজীবীরা। এছাড়া উপকূলীয় রক্ষী বাহিনী আরও ২৭ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করেছে। সব মিলিয়ে ৮৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্ধার হওয়া সব বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে রাখা হয়েছে। প্রশাসন ও মৎস্যজীবী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পোশাক ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকজন অসুস্থ থাকায় কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার রায়দিঘিতে ১১ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে আনা হয়। পরে রাতে কয়েক দফায় আরও ৪৪ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার বিকালে আরও ৫ জনকে উদ্ধার করে কাকদ্বীপে আনা হচ্ছে। গত ১৮ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে বাংলাদেশের একাধিক ট্রলার ডুবে যায়। নিখোঁজ হয় দুইশ’র বেশি মৎস্যজীবী।
এই নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের অনেকেই ভাসতে ভাসতে ভারতীয় জল সীমানায় বাঘেরচর এলাকায় চলে আসে। ভারতীয় মৎস্যজীবী ট্রলার এদের উদ্ধার করে। এরা তিন থেকে চারটি ট্রলারের মৎস্যজীবী বলে ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে। সুন্দরবন পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে উদ্ধার করা মৎস্যজীবীদের।
কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘আমাদের ট্রলার ও উপকূল রক্ষী বাহিনী তাদের উদ্ধার করেছে। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। প্রত্যেককে হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে। সুস্থদের ত্রাণশিবিরে রাখা হয়েছে। সরকারিভাবে তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’