প্রকৃতিতে অনেক বিচিত্র আকৃতির ফুল দেখা যায় যার একটির সঙ্গে আরেকটির কিছু না কিছু মিল হয়তো খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু ভাদ্রার সাথে অন্য ফুলের মিল পাওয়া বেশ কঠিন। বলতে গেলে পুরো গাছটাই অন্যরকম। ভাদ্রা (Gmelina philippensis Cham) একটি কাষ্ঠল লতা, তবে গাছ বেশি উঁচু হয় না, ২০ ফুটের ওপরে তো নয়ই। আরো উঁচু হলে গাছের রূপটা ভালমত চোখে পড়ত না আমাদের। ভাবতে ভালো লাগে, মানুষের দেখার সুবিধার জন্যই হয়তো প্রকৃতির এই আয়োজন। আইভির মতো পাতাসহ ভাদ্রার ডালগুলো নুয়ে থাকে নিচে যার মাথায় ঝুলে থাকে মঞ্জরিপত্র। মঞ্জরিপত্রের মাথায় থাকে অনিন্দ্যসুন্দর ফুল দেখতে যেন ছোটো ছোটো সামুদ্রিক শঙ্খ।
গাছ থেকে একটু পেছনে এলেই মনে হয়, সারা গাছ জুড়ে ঝুলছে এক রাশ সোনালি কানের দুল। এই দুলগুলো কখনো কখনো এক বিঘতের চেয়েও বেশি লম্বা হতে দেখা যায়। কাছে থেকে দেখলে বোঝা যায় কত নিপুণভাবে এর মঞ্জরিপত্রগুলো সাজানো থাকে মাছের আঁইশের মতো। মঞ্জরিপত্রের ভেতর থেকে বেরিয়ে দীর্ঘদন ধরে ক্রমাগত ফুটতে থাকে ভাদ্রার ফুল।
সারা ভাদ্রমাস ধরে সোনালি রঙের এই ফুলগুলি যখন ফুটে থাকে বাদামি মঞ্জরিপত্রের গায়ে তখন এ দৃশ্য যে দেখেনি সে পুষ্প জগতের এক বিস্ময় হারিয়েছে। ভাদ্রার ফুল ফোটে রাতের বেলা, সারাদিন গাছে থাকে, পরিবেশ অনুকূল হলে দুদিন পর্যন্ত সৌন্দর্য বিকিরণ করে ঝরে পড়ে। ফুল ফোটা শেষ হয়ে গেলে মঞ্জরিদণ্ডের মাথায় ফল ধরে সবুজ রঙের কিন্তু তখনো তার সৌন্দর্য বজায় থাকে। এই ফুল ফোটানোর সৌন্দর্য চলতে থাকে ৪০-৫০ বছর ধরে।
ভারত, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ এশিয়ার আদিবাসী এই গাছের জন্য আর্দ্রতা চাই, সূর্যালোক চাই, কিন্তু আংশিক ছায়ার মধ্যেও এই গাছ বেশ সুন্দরভাবে লালন করা যায়। শীত-সহিষ্ণু নয় বলে বাগানবিদরা উপদেশ দেন, ঠাণ্ডার দেশে একে গৃহমধ্যে লাগানোই ভাল। একটি ফলে মাত্র একটি বীজ হয় ভাদ্রার, তাই কাটিং থেকে গাছ তৈরি করাটাই শ্রেয় বলে মনে করেন শৌখিন বাগানবিদ এবং ভাদ্রা ব্যবসায়ীরা। ভাদ্রার পাতা হলুদ হয়ে গেলে বুঝতে হবে পানির পরিমাণ বেশি হয়েছে অথবা জল নিঃসরণ হচ্ছে না গাছের গোড়া থেকে। এই গাছ থেকে সুন্দর বনসাই তৈরি করা যায়। এদের ৩ ইঞ্চি পাতা বনসাই করলে আধা ইঞ্চির আকারে চলে আসে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে ফুলের আকার বেশ বড়ই থাকে।
এই গাছকে কিছু দেশ যেমন- মরিশাস, তানজানিয়া ও কেনিয়ায় ল্যান্ডস্কেপিংয়ের কাজে বেশ সফলভাবে ব্যবহার করা হয়। কিছু জায়গায় হেজ হিসাবে লাগানো হয়, কারণ গাছে কিছু কাঁটা থাকে এবং এর পাতাও গবাদিপশু খায় না। এই গাছকে যদি নিয়মিত ছেঁটে রাখা যায় তবে এটা গুল্মরূপে থাকে নতুবা বৃদ্ধি পেতে থাকে লতার স্বভাবে, তারপর ডালসহ ঝুলে পড়ে নমনীয় উইলোর মতো।