খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী এখন ডুবন্ত জনপদ। প্রায় দুই হাজার মানুষ সোমবার (৫ আগস্ট) স্বেচ্ছাশ্রমে চরামুখা গ্রামের কপোতাক্ষ নদের প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ মেরামত কাজ শেষ করেন। কিন্তু বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই প্রবল জোয়ারে সেটি ভেঙে আবারও লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ডুবে যায় ১০ টিরও বেশি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ১৫ হাজারের বেশি মানুষ।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওসমান গনি খোকন বলেন, “বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে দক্ষিণ বেদকাশী, চরামুখা, হলুদবুনিয়া, বিনাপানি, পাতাখালী, উত্তর চোরামুখা, পদ্মপুকুরসহ ১০টির বেশি গ্রামে। প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।”
মঙ্গলবার সকালে আবারও বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
ইউনিয়নের পদ্মপুকুর গ্রামের তৈয়েব আলী বলেন, “গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ গিয়ে ছয় ঘণ্টা কাজ করে বাঁধ দিয়ে বাড়ি ফিরেন। কিন্তু এরপর আবারও ওই ভেঙে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়েছে।”
বীণাপাণি গ্রামের গোপাল মিস্ত্রি জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ছয় বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছিলেন। লবণ পানিতে তা ডুবে গেছে।
তিনি বলেন, “ধানের আশা ভরসা শেষ। নদীর জোয়ার-ভাটার সঙ্গে মিলে মিশে চলছে জীবন। গবাদীপশু রাখা জায়গা নেই। ঘর-বাড়ি ডুবে সীমাহিন কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন এলাকার মানুষ।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার একই স্থানে বাঁধ ভাঙছে। কিন্তু সঠিক মেরামত না হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফিলতিকেই দুষছেন স্থানীয় লোকজন। তাদের দাবি, এক মাস আগে রিং বাঁধ দেওয়া হলেও সেটি রক্ষণাবেক্ষণ বা মজবুত করার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পাউবো কর্তৃপক্ষ।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় নদীর পানি অনেক বৃদ্ধি হচ্ছে। এ কারণে দক্ষিণ বেদকাশীর যে বাঁধটি মেরামত করা হচ্ছিল তা আবার ভেঙেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে বিভিন্ন টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। দরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”
পাউবোর সাতক্ষীরা বিভাগ-২ এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, “প্রথম বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর রিং বাঁধ দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি মজবুত করা যায়নি। সেখানে মাটির মান খুব বেশি ভালো নয়। তাছাড়া জোয়ার-ভাটার কারণে বেশি সময় কাজ করা যায় না। এ কারণেই মূলত বাঁধটি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আপাতত পানি প্রবেশ বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর রিং বাঁধ মজবুতের চেষ্টা করা হবে”।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই ভোরে চরামুখার এই বাঁধের প্রায় ১৫০ মিটার ধ্বসে যায়। সে সময় ভাঙা স্থানে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হয়। এরপর ১৩ আগস্ট দুপুরে উচ্চ জোয়ারে ওই রিং বাঁধের ৫০ ফুট ভেঙে গিয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কয়েকশ মানুষের চেষ্টায় তা মেরামত করা হয়। তবে নদীর পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল শতাধিক মাছের ঘের। সেই বাঁধটি ১৪ আগস্ট ২০০ মিটার ভেঙে যায়।