রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট: ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়

টুনু কর্মকার
টুনু কর্মকার
5 মিনিটে পড়ুন
চিত্রকর: তাপস কর্মকার।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোকের দিন। বাংলার আকাশ-বাতাস, প্রকৃতির অশ্রুসিক্ত হওয়ার দিন। কেননা ১৯৭৫ সালের এদিনে আগস্ট ও শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের মর্মছেঁড়া অশ্রুর প্লাবণে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্রে সামরিক বাহিনীর কতিপয় উশৃঙ্খল ও বিশ্বাসঘাতক সদস্যের হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন। জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।

তাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানাই অন্তরের অন্থস্তল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা, তাঁর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, পুত্র লেঃ শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ ও তাঁর কন্যা বেবী সেরনিয়াবাদ, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাদ, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভ্রাতুষ্পুত্র শহীদ সেরনিয়াবাদ, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল আহমেদ এবং ১৪ বছরের কিশোর আব্দুল নঈম খান রিন্টু সহ ১৮ জনকে ঘাতকরা নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের প্রত্যেককে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।

শেখ মুজিব ১৫ আগস্ট 1 রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট: ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়
রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট: ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় 37

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হওয়ার পরে দেশে সামরিক শাসন জারী করা হয়। গণতন্ত্রকে হত্যা করে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়- শুরু হয় হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। কেড়ে নেয়া হয় জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার। সারা বিশ্বে মানবিকার রক্ষার জন্য হত্যাকারীদের বিচারের বিধান থাকলেও বাংলাদেশের জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচারের হাত থেকে রক্ষার জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এই আইন করে সংবিধানের পবিত্রতা নষ্ট করে দেয়া হয়। খুনীদের বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরী দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।

অতএব এসব হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে যে সব কারণে বাধাগ্রস্থ করেছে সেগুলোকে তদন্ত করার জন্য ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। তবে শেষ সময়ে, বাংলাদেশ সরকারের অসহযোগিতার কারণে এবং একজন সদস্যকে ভিসা প্রদান না করায় এ উদ্যোগটি সফল হতে পারেনি।

- বিজ্ঞাপন -

তবে অধ্যাপক আবু সাইয়িদের- ”বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ফ্যাক্টস এণ্ড ডকুমেন্টস” – গ্রন্থে এ কমিশন গঠনের বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, মুনসুর আলীর পুত্র মুহম্মদ সেলিম ও সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র আশরাফুল ইসলামের আবেদন ক্রমে স্যার থমাস উইলিয়ামস, কিউ, সি, এমপির নেতৃত্বে এ কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও বিদেশে অনুষ্ঠিত জনসভাগুলোতে এ আবেদন ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়।

কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে একথা সুস্পষ্ট যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে শুরু করে অনেক ঝড়-ঝাপটা, চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬সালের ২৩জুন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ২ অক্টেবর ধানমণ্ডি থানায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তাঁর পরিবারের সদস্যগণকে হত্যার জন্য এজাহার দায়ের করা হয়। ৮ নভেম্বর ১৯৯৮ সালে জেলা দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ৭৬ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণায় ১৫জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। এরপরে ২০০২-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়েত জোট সরকারের সময়ে মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।

২০১০সালের ২ জানুয়ারী আপীল বিভাগের আসামিদের রিভিউ পিটিশন দাখিল এবং তিনদিন শুনানী শেষে ২৭ জানুয়ারী চার বিচারপতি রিভিউ পিটিশন খারিজ করেন। এদিনে মধ্য রাতের পর, ২৮ জানুয়ারী পাঁচ ঘাতকের মৃত্যুদণ্ড করা হয়। এভাবে একের পর এক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি দীর্ঘ ৩৪ বছর পর কার্যকর করা হয়।

অতএব আলোচনার নিরিখে ১৫ আগস্ট: ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়। এদিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে বাঙালি জাতি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে পালন করেন। কেননা তিনি বাংলাদেশকে এশিয়ার সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। গড়তে চেয়েছিলেন দুর্নীতি মুক্ত, ক্ষেতে-খামারে, শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা সহ নানামুখী পদক্ষেপ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ঘাতকের নিষ্ঠুর আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। বাংলাদেশ হারায় ললাটে রাজটীকা পরানোর বিরল সম্মান। এ দুর্ভাগ্য গোটা বাঙালি জাতির। আর পৃথিবীর বুকে দিনটি ঘৃণিত অধ্যায়।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
প্রাবন্ধিক, সমাজসেবক ও অধাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!