তোমার ভালোবাসা
সোনালী সন্ধ্যার মতো
আমিও জানি
তুমি রাগ করেছো!
কিন্তু কেন!
পৃথিবীর ঝড়-বৃষ্টিকে
তুমিও তো একদিন
প্রাণের চেয়ে ভালোবেসেছিলে!
আরো ভালোবেসেছিলে
ফুল- নদী -পাহাড়- সমুদ্র
আকাশ- বাতাস- গ্রহ- নক্ষত্র
কিন্তু আমার আফশোষ হয়
হয়তো তোমার অজ্ঞাতেই
তুমি এ কাজ করেছো!
আমি তোমাকে সাবধান করেছিলাম
তুমি শুনেও উপেক্ষা করেছো
পৃথিবীকে শ্মশাণ ক’রে
নিজের স্বর্গ স্থাপন করেছো
তোমার ভুলটা তোমার কাছে
সামান্য হলেও
পৃথিবীর কাছে অসামান্য ;
কারণ, তুমি মানুষকে
কোনদিনই ভালোবাসোনি।
জীবন রহস্য
কখন যে নেমে এলো গাঢ় অন্ধকার!
হিসাব রাখিনি তার
যেতে হবে আরও পথ –দিনরাত
কোথায় কিভাবে, ঠিকানা নেই তার
অসংখ্য তারা ফুটে চেয়ে আছে
নিষ্পলক চোখে
কখন কথা হবে চোখে চোখে
সীমাহীন সেই প্রত্যাশায়।
গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয় অন্ধকার
আমার দু চোখে লুকোচুরি খেলে;
নিঃশব্দে অন্য স্বপ্নের সমাহার
সাগরের ঢেউ গুলো পাড়ে এসে চলে যায়
খবর না দিতে পারার অপরিসীম লজ্জায়
শূন্যতার মই ধরে মন খোঁজে মহাশূন্যে
জীবনের অপার রহস্য!
যুগ-যুগান্ত ধরে জ্ঞানের অভিযান,
শূন্য গর্ভ জগতের মিথ্যা অলংকার
মরীচিকা- মরুদ্যানে,অজ্ঞতার অহংকারে
আরো কত যুগ নিঃশব্দ কেটে যাবে
ক্ষুদ্র পৃথিবী এখনো পায়নি তার সন্ধান।
সন্ধান
অনেকটা বছর কেটে গেছে
যাকে আমি সত্য বলে মানি
আজ মনে হয় সবই যেন ভুল!
কল্পনার রঙিন দিনগুলো
জীবনের ধাপে ধাপে সব যেন;
ধূসর হয়ে গেছে!
চেনা পথ অচেনা মনে হয়
অকালে ঝরে যায় বসন্তের ফুল
কোকিলের গানে নেই হৃদয়ের আস্বাদন
যমুনার তীরে তীরে
বাঁশরীর নীরব ক্রন্দন
বিদীর্ণ করে অন্তঃকরণ
অন্ধকারে ক্ষত- বিক্ষত হয়ে তবুও
আমি চলি নিঃশব্দ অভিসারে।
সত্য যদি দূরে থাকে,
আমি তবে কোন প্রত্যাশায়
মিথ্যার বাঁকা পথে
করে যাবো আত্মসমর্পণ!
মিথ্যার কোন নাগপাশে
সৃষ্টি কর্তা বাঁধা আছে
জীবনের পথে পথে
আমি চিরদিন করে যাবো
তারই সন্ধান।
স্বপ্নের দেশ
তুমি বললে জীবনটা গল্প
মৃদু প্রতিবাদ জানিয়ে বললাম
ঠিক গল্প নয়
গল্পের মতো সত্য।
রূপকথার দেশে
সব স্বপ্নের সমাধান হয়।
ছোটবেলায় মায়ের মুখে
এই বিচিত্র গল্প শুনে
হারিয়ে গিয়েছিলাম
তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে
স্বপ্নের দেশে একদিন পৌঁছুলাম
কিন্তু ঘরে ফেরা আর হ’লো না।
রূপকথার ঘরে ঘরে
মায়ের গল্পটা খুঁজে বেড়াই
জীবনের সব অংক
কেমন যেন ধূসর হয়ে যায়!
কোথায় সেই রাজপ্রাসাদ!
আর কোথায় সেই রাজকন্যা!
সোনার কাঠি,রূপোর কাঠি
সবই যেন ব্যর্থ আজ
রাজকন্যার ঘুম ভাঙ্গাতে
জীবনটা গল্প…
কিন্তু গল্পই জীবন নয়!
ঠিকানা
এ পৃথিবী কারো ঠিকানা নয়
সবাইকে চলে যেতে হবে নিঃশব্দে
নিজের ঠিকানায়।
তবু দিনরাত
খেলাঘর বাঁধা হয়
সব কথা ভুলে গিয়ে
এ পৃথিবী আপন মনে হয়।
বিদায় যখন ঘনিয়ে আসে
মুছে যায় পৃথিবীর সব ঠিকানা
শূন্য আকাশে খুঁজি তার চেনা মুখ
যে ছিল সবারই একান্ত আপন।
পৃথিবীর আনন্দ যত
ফুটেছিল মুখে যার
দু ‘চোখের জলে তার
দিতে হলো প্রতিদান!
তবু সান্ত্বনা
লুপ্ত হয়নি স্মৃতিটুকু তার
প্রাসাদে প্রাসাদে
তারই যেন প্রতিধ্বনি হয়!
সীতা
আমার করুণ চোখের জলে
তোমার রাজ্যাভিষেক হয়েছিল
উজ্জ্বল আলোর ঝলসানিতে
তুমি ভুলে গেছো
কিন্তু আমি ভুলিনি
কারণ,তোমার রাজ্যাভিষেক
আমার বনবাসের এবং
একান্ত দুঃখের দুঃস্বপ্নের কারণ হয়েছিল।
আকাশে মেঘের আনাগোনা
আমার ধূসর জীবনের
বার্তা নিয়ে ব্যঙ্গ করে যেত
আমি নিঃশব্দে হাসিমুখে
বর্ষা কিংবা বসন্তের
অভিসারের স্বপ্ন বুকে নিয়ে
দূরে…বহু দূরে…
হৃদয়ের প্রসারণ ঘটাতাম!
আলোর আড়ালে ধীরে ধীরে
তুমি অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছো
গভীর বনের নির্বাসন
আমার অন্তরে আঘাত করলেও
আরও আলোকিত করে তুলতো!
আমি জানি চলার পথে
যে পথের ভুলে
আমাকে নির্বাসন দিয়েছো
যে প্রজাদরদী মন
তোমার অন্তর সত্তাকে
অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছে
যে রাজকীয়তার অহংকারে
তোমার বিচার বোধ
প্রকৃত ন্যায় বিচারে ব্যর্থ
তার জাগরণ একজন ঘটবেই।
সেদিন তুমি শুধু কাঁদবে
আমি তোমার কান্নার
করুণ সিংহাসনের উপর দাঁড়িয়ে
নিঃশব্দে হেসে যাবো
শত-সহস্র চেষ্টা করেও
আর আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না
কারণ সীতার পাতাল প্রবেশ
যুগে যুগেই ঘটে থাকে!