রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়ার সাকি বিমানঘাঁটির যেসব স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশিত হয়েছে তা মিথ্যা নয়। ধারণা করা হচ্ছে, ৯টি রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের পর ছবিতে এসব যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ খুব অল্পই দেখা যাচ্ছে।
ওরিক্স-এর বিশ্লেষণ অনুসারে, ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত রাশিয়া যত সংখ্যক যুদ্ধবিমান হারিয়েছে মঙ্গলবার ধ্বংস হয়েছে এক-পঞ্চমাংশ। মোট ৪৭টি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে রাশিয়া। অবশ্য রাশিয়ার অস্ত্রাগারে এখনও বেশ কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান রয়েছে। ইউক্রেনের সাফল্যের মাত্রা ও তাৎক্ষণিক প্রোপাগান্ডার মূল্য খুব বাড়িয়ে বলার সুযোগ নেই।
অবশ্য যুদ্ধ শুরুর ক্রিমিয়াতে ইউক্রেনের এটিই প্রথম হামলা নয়। তবে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। শুধু ১১০ মাইল দূরে বা যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে দূরে এই হামলা হয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, এই হামলা হয়েছে হাজারো পর্যটকের চোখের সামনে। ভিডিওতে দেখা গেছে, রুশরা তাড়াহুড়ো করে সূর্যের আলো থেকে সরে যাচ্ছেন। দূরে বিস্ফোরণের পর আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। পরে রাস্তায় যানবাহনের জট তৈরি হয়েছে।
ইউক্রেনীয় প্রচারণাকারীরা বিষয়টিকে কাজে লাগাতে খুব কম সময় অপচয় করেছে: প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাশিয়ার সাধারণ অবসর যাপনকারীদের লক্ষ্য করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, গ্রীষ্মকালীন ছুটির কাটানোর কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। কিন্তু সতর্ক করে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে ক্রিমিয়াকে নির্বাচন করা হবে বড় ভুল। এতে সৈকত থেকে বিস্ফোরণের একটি ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার সাধারণ মানুষের সামনে ভিন্ন চিত্র থাকতে পারে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই সেন্সরশিপ এড়িয়ে কিছু খবর ঠিকই পৌঁছে যাচ্ছে তাদের কাণে। সাকি বিমানবন্দরে যুদ্ধবিমানের ধ্বংস এপ্রিলে কৃষ্ণ সাগরে ফ্ল্যাগশিপ যুদ্ধজাহাজ মস্কোভার মতো বড় ঘটনা কিংবা মার্চে ডনবাসে বিলোহরিভকা নদী পার হতে ৭০টি সাঁজোয়া যানের ব্যর্থতার মতোই। মুখে মুখে প্রচারের ফলে এসব ঘটনার প্রভাব বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
যদিও যুদ্ধে জড়ালে ক্ষতির মুখে পড়তেই হয়। ফলে পরের প্রশ্ন হলো: এই হামলার সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব কেমন হবে? প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করছে ইউক্রেন। যদিও কর্মকর্তারা একান্ত আলাপে তা স্বীকার করছেন। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কিয়েভ চাইছে কীভাবে হামলা হয়েছে তা সম্পর্কে রহস্যময়তা জারি রাখতে। অন্তত তাদের আশা থাকতে পারে ভবিষ্যতে আবারও এমন হামলার পুনরাবৃত্তি করা।
নিশ্চিতভাবে হামলাকারীরা জানতেন তারা কী লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছেন। অলস বসে থাকা যুদ্ধবিমানের পাশে একাধিক গোলাবারুদের গুদাম বা জ্বালানি ডিপোতে আঘাতের ফলে বিস্ফোরণ ও আগুনের ভয়াবহতা শুধু যে স্যাটেলাইট ছবিতে দৃশ্যমান হয়েছে তা নয়, কাছের একটি পার্ক থেকে ধারণ করা ভিডিওতেও ভয়াবহতা ধরা পড়েছে। এমন নির্ভুল হামলা শুধু সঠিক স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার ফলেই চালানো সম্ভব। যা রুশদের জন্য উদ্বেগের একটি কারণ।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা থিংকট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট-এর বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রংক মনে করেন, প্রাথমিকভাবে হামলার সামরিক তাৎপর্য ধ্বংস হওয়া যুদ্ধবিমানের সংখ্যায় নিহিত নয়, রুশ বাহিনীর নিরাপত্তার মনোভাবে এর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। রুশ বিমান বাহিনীর আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। এর ফলে রাশিয়াকে তাদের বিমানঘাঁটির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও বেশি সেনা, সরঞ্জাম ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন হবে।