সুইস ব্যাংকে জমা রাখা বাংলাদেশি টাকার বিষয়ে সুইস রাষ্ট্রদূত নাতালি শুয়ার্ড মিথ্যা কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “রাষ্ট্রদূত মিথ্যা কথা বলেছেন।”
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও অর্থ-সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সঙ্গে এই বিষয়ে আলাপের পর এ কথা বলেন মোমেন।
বাংলাদেশ সুইস ব্যাংকে জমা রাখা বাংলাদেশি টাকার বিষয়ে তথ্য চাইলেও সুইস পক্ষ এই প্রশ্নের জবাব দেয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং নতুন অর্থ সচিবকে এ বিষয়ে আমি জিজ্ঞাসা করেছি। তারা জানিয়েছেন, ‘আমরা চেয়েছি কিন্তু তারা কোনো উত্তর দেয়নি।’ আমি বলেছি, আপনি এটি সবাইকে জানিয়ে দেন। কারণ এভাবে মিথ্যা কথা বলে পার পাওয়া উচিৎ নয়।”
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ডের কাছে তথ্য চায়নি, এটা ঠিক নয়।”
এ বিষয়ে সুইস দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “গভর্নর সাহেব আগে বিবৃতি দিক, অর্থ মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিক, তারপরে আমরা তাদের বলবো।”
এর আগে ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেন, “বাংলাদেশ সরকার সুইজারল্যান্ড সরকারের কাছে নির্দিষ্ট করে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা নিয়ে কোনো তথ্য চায়নি। ফলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ সম্পূর্ণরূপে অনুমাননির্ভর।”
রাষ্ট্রদূত বলেন, “সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশি গ্রাহকদের ব্যক্তিগত আমানতের পরিমাণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। সুইজারল্যান্ড অবৈধ অর্থ রাখার জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল নয়।”
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনে তথ্য পাওয়া গেছে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ অর্থ জমা হয়েছে গত বছর। বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে এসব অর্থ জমা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। ২০২১ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ৫৪ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৮৭১ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (সিএইচএফ) (৮৩.১৮ বিলিয়ন টাকা) হয়েছে। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৬৩ মিলিয়ন সিএইচএফ।
এ সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত জানান, সুইজারল্যান্ড সত্যিই আন্তর্জাতিক মান বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ধরনের তথ্য আদান-প্রদানের জন্য তাদের দেশের সঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও চুক্তি হতে পারে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “তারা অবশ্যই অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করে না এবং সুইস ব্যাংক ব্যবস্থা সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং আন্তর্জাতিকভাবে সংযুক্ত সিস্টেম।”
রাষ্ট্রদূত বলেন, “সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই সর্বদা অপব্যবহারের ঝুঁকি থাকে। তবে সুইজারল্যান্ড সরকার সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধন করতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”