নারীশক্তি
দলিত মেয়ের কান্না ভাসে
বারুদ হাওয়ায়, আগুন জ্বালায়
খড়ের গাদায়, পুকুর কাদায়
একলা পেয়ে আসিস ধেয়ে
জানিস না ওরাই মেয়ে!
ওদের জন্য ধামসা মাদল
আজও বাজে ছন্দেসুরে
বেবাক ভুলে এক্কেবারে
জ্বালিয়ে দিলি, পুড়িয়ে দিলি?
জ্বলছে আগুন বুকের মাঝে।
দুন্দুভিতে দামামা বাজে
সাবধান ওরে সাবধান
একা নারীর শক্তি অসীম
সেই বুঝে কি হাড়ে হিম
জ্বলছে মণীষা, এখন নিশা।
আগুন নিয়ে খেলার খেলা!
ঘুমিয়ে এখন শান্ত চিতা
হঠাৎ জ্বলে উঠবে নারী
ভুলিস না মেয়ে তেপান্তরী
ওই মণীষা আসছে ধেয়ে।
ওরা আজও আছে
ওদের বিলাস নেই, ওদের শব্দ গোনার মুহূর্ত নেই
ওদের কান্না নেই, ওদের উচ্ছ্বাস নেই
ওরা ফৌজি, জয়জোয়ান
সেলাম সেলাম সেলাম।
কচি শিশুর হাতের মুঠোয়
সূর্যের ওই ঝিলিক মারা,
কুয়াশার মেঘ সরিয়ে দিয়ে
কফিন নিয়ে আসছে কারা
ওদের প্রেম নেই, ওদের বিলাপ নেই
ওদের ছন্দ নেই, ওদের অপেক্ষা নেই
সহবাসের মুহূর্তেই ঘরণীর ঘরছাড়া
প্রতিশ্রুতি আঘাত করে
পাহাড় পাহাড়ে দিচ্ছে সাড়া
নববধূর নবরাগ সূর্যোদয়ের একি বিষাদ
বিজ্ঞানেরই অভিশাপে
স্তব্ধ হল শিশুর ডাক
সেলাম সেলাম সেলাম
ওরা ফৌজি, ওরা জয়জোয়ান।
ওদের উল্লাস নেই, ওদের ক্লান্তি নেই
ওদের খিদে কথা বলতে নেই।
পাহাড়ের বুক চিড়লে পরে দেখবে কত রক্ত ঝরে
পাহাড়রা সব এক হয়ে আজ
একই সুরে সুর ধরে
পাহাড় ঘেরা ঝরনাতলায়
রক্তের স্রোত ওই বয়ে যায়
ওইখানেতে আছে যত ভারতমাতার সন্তান
ওরা ফৌজি, জয়জোয়ান
সেলাম সেলাম সেলাম।
মাগো তোমার কোলেই এলাম
ছোট্ট শিশু ওই হামা দেয়
বাবা কে যে চিনলো না হায়
কিশোরী সে অপেক্ষায় তার
আজও বসে দিন গুনে যায়।
পাহাড় বেয়ে একে একে ঝরনা কত
স্বচ্ছ ফেনায় অবিরত
খিদের জ্বালায় বারুদ হাওয়ায়
আজও কত দেহ হারায়,
ভারতমাতার কোলের কাছে
এ কী শ্মশান সৃষ্টি হল
যুদ্ধ শেষে পাহাড় কোলে আজই নাকি ফুল ফুটল।
উপমা
প্রগতির উপমা তুমি
প্রগামী বাংলা তোমার ভালোবাসা
ভালোবাসার গুনে রক্তাক্ত হৃদয়
আমাদের ভাবনাগুলো বাংলা ভাষায়।
বট পাকুড় বকুল শাখায়
উপমা তুমি আকাশে বাতাসে
দেশান্তরের রুদ্ধশ্বাসে
দূষিত বায়ু কেবল হাসে।
সৌরশক্তি লাগুক প্রাণে
লেখনী যার শাণিত নিশান
প্রগতির পথ প্রসারিত হোক
নির্ভয়ে জাগুক বাংলার সন্তান।
প্রগতির হাতিয়ার ভাষা
বাংলা মাটির গানের সুরে
উপমা তুমি এগিয়ে চলার
ভোরের আকাশ নেইকো দূরে।
প্রগামী বাংলা দীপান্তরে
জলোচ্ছ্বাসে ঊর্ধ্বশ্বাসে
তীব্র গতিতে দেশান্তরে
উপমা তুমি অন্তরে।
ভেসে উঠলো শিশুকাল
ভাঙাচোরা স্কুলের বাক্স থেকে ভেসে উঠলো শিশুকাল।
ছেঁড়াজোড়া সাপ লুডো হাত-পা বিহীন মেয়ে পুতুল
তারে নাচা বাঁদর আর দুটো চকের টুকরো
গায়ে সুতির আধময়লা ফ্রক, ধুলোমাখা আলতা পরা পা
এক দৌড়ে প্রজাপতি হয়ে যায় মেয়েটা।
যতক্ষণ দেখা যায় দেখি তাকে
বাড়ির একদিকে জামগাছ অন্যদিকে বিশাল পুকুর।
সারিবাঁধা তাল নারিকেল সুপারি, নিমেষে উধাও নীল আকাশ
নিস্তব্ধ দুপুর, নিরালা স্নানের ঘাটের স্বচ্ছতায় দেখি
সেই মুখ, সেই মেয়েটির দুইখানি মুখ
স্বচ্ছতা পূর্ণতা পায়।
বুকে ভার নামে, নিঃশেষ হয় রাঙা দীর্ঘশ্বাস
বোশেখের বিকেলে ধানের গোলার পাশে
ভালোবাসাবাসি, সেই সব দিন আজ শেষ।
গাছের পাশে আর এক গাছ স্নানের ঘাটে অন্য পুরুষ
অচেনা মেঠো পোকার মত স্বপ্ন যায় সরে সরে
জ্যৈষ্ঠের দগ্ধ দুপুরে তৃষ্ণার মত আর এক পুরুষ
দুবাহু বাড়ায় মেঠো পথের বাঁকে।
সকালের প্রতিবেদন
অবিশ্বাসের অপমান হাতে নিয়ে ফেরা
রোজকার নামতা পড়া ছেলেটার মত
বিশ্বাসের বায়ুতে দূষণের গন্ধ
অকালের উত্তরসূরীরা নেতা হয়।
আমাদের নরম ভাবনার কুসুমগুলো
খুন হয়ে যায় ভালবাসার প্রত্যূষে
দাগি রাতের অপেক্ষায় সারা মেলে
ঘাগড়া চোলি রঙিন গ্লাসের।
নরম হাওয়ায় গরম হয় লিকারের কেটলি
জমে ওঠে সাট্টার আসর
চরম মুহূর্তে মাটি যায় ভিজে
একালের নক্ষত্রের সংখ্যা বাড়ে আকাশে।
আমাদের সুন্দর চিন্তার উঁকিঝুঁকি
এখনও দেখা দেয় তেমাতার মোড়ে
বয়সের ভারে বৃদ্ধ বটগাছের নীচে
একটু জিরিয়ে নেওয়া আজকের পথভোলার।
পথের খেয়ালীপনায় হারায় মানুষ
নাকি হারিয়ে যাওয়ার জন্য পায়ের অপরাধ
ধর্মের কাছে চেয়ে নেওয়া উত্তর
খুন হয়ে যাওয়া ভোর প্রতিদিন জানায়।
মৃত্যুই সুসময় আনে
কুচো পয়সা আর খই ছড়িয়ে
অগরু আর ধূপের গন্ধ বিলিয়ে
আমায় নিয়ে চলে গেলে
ঘরে ফিরে দেখবে দাঁড়িয়ে আছি
রাতের যবনিকা জুড়ে।
তোমার মনের লুকনো ছবি
জাগাবে কত ক্ষোভ
তীব্র থেকে তীব্র হবে
মায়ার চোরা স্রোত
দেখবে শুধু বেঁচে আছি না মরে।
একান্তে পিছের ঘটনা স্মরণ
আমারই হাত ধরে নামবে
আরও কত জন
যাঁদের হারিয়ে ভেবেছ মৃত
তাঁরাও বুকের মাঝে আজও জীবিত।
রাতের আকাশে পরিক্রমা
দীর্ঘ পরিত্যক্ত প্রত্ন যন্ত্রণা
বুঝবে মৃত্যুই সুসময় আনে
প্রেম বেঁচে থাকে শুধু
মৃত্যুর মাঝখানে।