টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধভাবে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ১০ জনের মধ্যে চার জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি ছয় জনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) বিকালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফারজানা হাসানাত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
টাঙ্গাইল আদালতের পরিদর্শক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘এ মামলায় দুপুরে ১০ জন আসামিকে আদালতে তোলা হয়। এরমধ্যে চার জন দোষ স্বীকার করেছে। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারক। বাকি ছয় জনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিচারক।’
জবানবন্দি দেওয়া চার জন হলো, আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান, রাসেল তালুকদার, আলাউদ্দিন ও নাঈম সরকার। রিমান্ডে নেওয়া ব্যক্তিরা হলো, মাহমুদুল হাসান মুন্না ওরফে রতন হোসেন, আব্দুল মান্নান, সোহাগ মণ্ডল, বাবু হোসেন জুলহাস, জীবন প্রামাণিক ও হাসমত আলী।
এর আগে সোমবার (৮ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে রতনসহ গ্রেফতার ১০ জনকে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে আনা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রবিবার (৭ আগস্ট) তাদের ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব-১২ ও ১৪।
র্যাব জানায়, বাসের হেলপারের ছদ্মবেশে ২০১৮ সাল থেকে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছিল রতন হোসেন (২১)। রতন এই চক্রের দলনেতা। তার অধীনে ১৩ থেকে ১৫ জন্য সদস্য রয়েছে। ডাকাতির ঘটনায় দুই দফায় কারাভোগ করেছে সে। দ্বিতীয় দফায় ৯ মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আসে এবং পুনরায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি করে দলনেতা হয়।
টাঙ্গাইল র্যাব-১২-এর ৩ নম্বর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, সোমবার রাত ৮টার দিকে রতনসহ গ্রেফতার ১০ জনকে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে আনা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রসঙ্গত, ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসে। গন্তব্য ছিল নারায়ণগঞ্জ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পৌঁছে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে। মহাসড়কের পাশের ওই হোটেলে যাত্রীরা খাওয়া-দাওয়া করেন। যাত্রাবিরতি শেষে রাত ১২টার দিকে গন্তব্যে রওনা দেয় বাসটি। এরপর সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে তিন ধাপে ১৩ জন বাসটিতে ওঠে। পরে বাসে শুরু হয় ১৩ ডাকাতের তাণ্ডব। প্রথমে ছুরি ঠেকিয়ে বেঁধে ফেলে চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে। এরপর যাত্রীদের বেঁধে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে লুট করে মালামাল। লুটপাট শেষে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে তারা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ডাকাতি চালিয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ায় একটি বালুর স্তূপে বাসটি উল্টে গেলে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মধুপুর থানায় ওই বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এ ঘটনায় প্রথমে রাজা মিয়া, আউয়াল ও নুরনবীকে গ্রেফতার করা হয়। সব মিলিয়ে এই মামলায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হলো। রাজা মিয়া, আউয়াল ও নুরনবী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই তিন জন বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে রয়েছে।