তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। দেশের সবচেয়ে বড় এই রপ্তানি খাত বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজের তৃতীয় অবস্থানকে আরো পাকাপোক্ত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা)-এর ডেটা সূত্র বলছে, বাংলাদেশী রপ্তানিকারকরা চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৬০.৩% রপ্তানি বৃদ্ধি করে ৫.০১ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।
২০২১ সালের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৩.১৩ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।
অটেক্সা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বাজার শেয়ার ৯.৪৩% বেড়েছে। যেখানে চীন ও ভিয়েতনাম যথাক্রমে ২৩.৫৪ ও ১৭.৪৯% শেয়ার নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোট পণ্য রপ্তানি ৪৯.৫৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা এক বছরে ৪০.১৪% বেড়েছে।
তথ্যে আরো জানা যায়, জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক মাসের পোশাক রপ্তানি আয় ৬৬.২০% বেড়ে ৯০৬.০৬ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। যা গত বছর একই সময়ে ৫৪৫.২১ মিলিয়ন ডলার ছিল।
২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে পোশাক রপ্তানি আয়তনের দিক থেকে ৪৪.১৭% বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৬০ মিলিয়ন বর্গ মিটারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ২০২১ সালের একই সময়ে ১২২১ মিলিয়ন বর্গ মিটার ছিল।
শুধুমাত্র জুন ২০২২ সালে, পোশাক রপ্তানি ২০২১ সালের একই মাসে ১৯২.৭৭ মিলিয়ন বর্গ মিটার থেকে ৪৬.৫% বৃদ্ধি পেয়ে ২৮২.৪৯৪ মিলিয়ন বর্গমিটারে উন্নীত হয়েছে।
কেন এই ঢেউ
নির্মাতারা বলছেন, মার্কিন বাজারে বাংলাদেশী পোশাকের সবসময়ই ভালো অবস্থান ছিল। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রপ্তানি বৃদ্ধির এই প্রবণতা ধরে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করছেন।
অটেক্সা বলছে, চীন ও ভিয়েতনাম ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মার্কিন বাজারে যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থান দখল করেছে।
২০২২ সালের প্রথমার্ধে চীন থেকে মার্কিন পোশাক আমদানি ২০২১ সালের একই সময়ের মধ্যে ৭.৩১ বিলিয়ন থেকে ৪০.১৫% বৃদ্ধি পেয়ে ১০.২৫ বিলিয়ন হয়েছে।
ভিয়েতনাম ২০২২ সালের জানুয়ারি-জুন মাসে ৯.১৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের মধ্যে ৬.৮১ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩৫.০৩% বৃদ্ধি পেয়েছে, ১৭.৪৯% বাজার শেয়ার দাবি করেছে যা তাদের দ্বিতীয় অবস্থানে রেখে গেছে।
৩.২ বিলিয়ন ডলার তৈরি পোশাক রপ্তানি করে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ভারত।
২০২২ সালের শুরুতে প্রথমার্ধে ইন্দোনেশিয়া থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৬০.২৭% বেড়ে ৩ মিলিয়ন ডলার হয়েছিল। একইসময়ে ৫২.৫২% রপ্তানি বেড়ে ২.১৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে কম্বোডিয়া। এভাবে বাজারের শেয়ারে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে উঠে আসে দুটি দেশ।
তবে দেশিয় উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি তীব্রভাবে বেড়েছে। সে কারণে বিক্রয়কেন্দ্রে কাপড়ের বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
এছাড়া সব ধরনের জ্বালানির দামের আকস্মিক বৃদ্ধিও নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এতে করে উৎপাদন খরচ আরও ২০-৪০% বৃদ্ধি পেলে লাভের হার কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি।
“কিন্তু এই আদেশগুলি মে মাসে দেওয়া হয়েছিল যখন বৈশ্বিক পরিস্থিতি এখনকার মতো অস্থির ছিল না। বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের ধারণা অনুযায়ী এই বৃদ্ধি একটি স্বল্পমেয়াদী ঘটনা হতে পারে,” তিনি যোগ করেছেন।
মার্কিন গ্রাহকদের মধ্যে কেনাকাটা ইতিমধ্যেই হ্রাস পাচ্ছে জানিয়ে রুবেল বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী এবং ভূ-রাজনৈতিক সংকটের পরে বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতি ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।
তিনি আরো বলেন, জ্বালানীর উচ্চ দাম ও সরবরাহের ঘাটতি বিশ্ব পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সুতার দাম ৬২%, পরিবহন খরচ ৫০০% এবং রাসায়নিক খরচ ৬০% বৃদ্ধির কারণে আমাদের শিল্পও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ন্যূনতম মজুরি গত বছরের শুরুতে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে গড় উৎপাদনে গত ৫ বছরে খরচ বেড়েছে ৪০-৪৫ শতাংশ।
বিজিএমইএ কর্মকর্তা আরও বলেন, উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা আমাদের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ। বাংলাদেশে গড় উৎপাদনশীলতা প্রায় ৪৫%। কিন্তু ভিয়েতনাম ও তুরস্কে তা যথাক্রমে ৫৫% এবং ৭০%।
তিনি উল্লেখ করেন, এই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা নিজ নিজ সরকারের কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছেন, যা তাদের এগোতে সাহায্য করছে। আমরাও সরকারের কাছ থেকে কিছু নীতিগত সহায়তা চাই।
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, পণ্য তৈরি এবং বাজারের অতিরিক্ত ঘনত্ব, বিশেষ বাজারে অনুপস্থিতি, ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের উন্নতি ইত্যাদির মতো দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।খরচ কমিয়ে আমাদের দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে প্রতিযোগিতামূলক থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।