কবি প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় এর ছ’টি কবিতা

প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়
প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়
4 মিনিটে পড়ুন

বেলুন

(এক)

আমার যৌনতা দেখি উড়ে যাচ্ছে ট্রাউজারবিহীন
উত্তরভারত হয়ে উত্তরপূর্বের কোনও দেশে;
মহান কবির খোঁজে পাঠহেতু ঝুলে আছে হুকে।
প্রগতির অহংকার কালো হয়ে মিশে যাচ্ছে যমুনার জলে!

আমার বাঁদিকে যারা রত্নাকর, দ্বৈপায়ন এবং বিধ ভাবে বর্তমান
শুনেছি তাঁদের কথা শিষ্ট ছাত্রের ভাবাবেশে
এবং ডাইনে যাঁরা; লিঙ্গশরীর হয়ে, বেলুনের মতো ভাসমান
খুঁজতে তাঁদের মুখ, পা-গুলোই বড় হয়ে ভাসে।

(দুই)

- বিজ্ঞাপন -

মরে যাচ্ছি ‘ক’ লিখতে; মেঘ এঁকে ফেললাম খাতায়
তখন দোয়াত ছিল, এখন তা মেঘের সামিল
মাস্টারের কথা মতো ‘ম’ লিখতে ‘মাইরি’ লিখেছি
‘ব’ লিখতে অসভ্যের অন্য কোনো শব্দ মনে আসে
এ হচ্ছে বঙ্গদেশ, ‘মা’ বললে মাসি মনে ভাসে!

বন্য ঘোটকী

অন্ধকারে ছোঁড়া ঢিল লক্ষগুণ শক্তি নিয়ে ফিরে এল উঠোনে আবার
ফুলে উঠল জলরাশি, দুলে উঠল বহুতল, ঝালাঅঙ্গদ্যুতিতে ত্রিতাল
পাল্লা দিচ্ছে তরঙ্গের মুহূর্মুহূ অভিঘাতে, আঙুলেরা এতই চপল!

আজ থেকে ধরা যাক ৩৬৩তম পুরুষের আগে এক দুপুর বেলায়
৮০তলা গাছেদের ঘিরে থাকা কোনো এক উপলখণ্ডকে কাছে পেয়ে
পাথর-কুড়ুল আর নিজেদের ধনুর্বান, পাতার পোশাক খুলে রেখে,
বাছুরের ঝলসানো মাংস আর সোম নিয়ে বসে পড়ল
সে যুগের প্রেমিক-যুগল…
সোনার উজ্জ্বল রং দুজনার খোলা চুল হাওয়াতে ছড়িয়ে দিয়ে কাছে ঝর্ণায়
ঘন হয়ে মিশে গেল পিঙ্গল বর্ণের দেহ; সাক্ষী থাকল শুধু বন, নদী ও পাহাড়
ছেলেটি সে পুষ্পধন্বা, মেয়েটির নাম রতি; ভাই-বোন, যাকে ঘিরে প্রকৃতি উত্তাল!
ভোল্গার তট ছঁয়ে চঞ্চলতা উঠে এল ‘জন-দম’ মধ্য থেকে ছড়াল হাওয়ায়
এখানে নারীরা কারো অধিকারভুক্ত নয়; বুনো ঘোটকীর মতো দুরন্ত, স্বাধীন
সন্তানেরা সকলেই দেবত্বের অধিকার, ব্রহ্মাণী-জনের অংশ, পবিত্রতা অগ্নিশিখার …

বন্দী ছড়ার গান

অন্ধ আকাশ মেঘের কাছে চাইতে গেলাম বর
মা বলল ‘খোকন সোনা, এবার শুয়ে পড়’
মেঘ ডাকল ‘আয় কাছে আয়,দিচ্ছি ফোটা ফোটা
মধুর সমান জলের ধারা, মুক্তো গোটা গোটা

রাত বেড়ে যায়, ঘুম আসে না, হঠাৎ ডাকে পাখি
মেঘের কোলে মুখ লুকিয়ে সুর্য দিল উঁকি
মাথার উপর জানলা দিয়ে দেখি পাতার ঘর
একটা চড়ুই দেখতে পেলাম অনেকদিনের পর

- বিজ্ঞাপন -

কাচবন্দী বাইস তলায় বন্দী আমি একা
আন্টি এসে বকে শুধু, পাচ্ছিনা মা’র দেখা
অন্ধ আকাশ ঝলক দিচ্ছে, বলছে ‘খোকা, পড়’
আমি শুনছি মায়ের ডাক ‘খোকা, শুয়ে পড়’

স্বপ্ন দেখা জলে

তখন হাতের সামনে শুধু এক নোংরা বওয়া নদী
সেই জলে স্বপ্ন দেখা, সেই জলে আমার শর্বরী
আমার গোপন অঙ্গে গা এলিয়ে মৃদু বলে ওঠেঃ
এখনো সমর্থ আছো! ছবি আঁকছ, দেখি আকছার
তোমার ও সৃষ্টি-দেশে রেখে দিচ্ছি আমার সংসার

আমি যে নিদাঘ প্রিয়, উষ্ণ দেশে জন্মেছি যেহেতু
আমার শরীর ভরা নুন শুধু; নুন আর নুনের পাহাড়
তা ডিঙোতে পার যদি, নিয়ে যেতে পারি সেইখানে
যেখানে বল্মীক মধ্যে ঢেকে যায় অনাবৃত পুরোটা শরীর
যেখানে গুহার মধ্যে হিম থেকে জন্ম হয় আগুন নদীর
সাগরদাড়ির থেকে কপোতাক্ষ নদীজলে ডুবে উঠে ভেসে
ছুঁয়ে যেতে পারি ভাঙা লাল শালিখের ডানা শঙ্খচিলের ছদ্মবেশে।

- বিজ্ঞাপন -

আদিম রাক্ষস

দু’লক্ষ বছর প্রায় এক-ই ভাবে বসে থাকা ঘুমন্ত সে আগ্নেয়গিরিতে
কটু গন্ধ গন্ধকের, সাদা ছাই, তরল ধাতুর ধারা এখন কঠিন
গড়ানোর জমা দাগ আপাদ-মস্তক দেখে অনুভূত হ’তে থাকে
কোনোদিন এই খানে কী ভীষণ রক্ত ঝরে ছিল! হয়তো বা
অর্ধদগ্ধ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিয়ে খেলা করেছিল এক আদিম রাক্ষস!

একটা অদৃশ্য চোখ টুকে রাখছে ছবি তার, তারপর ছুটে যাচ্ছে আরো…
দৌড়তে দৌড়তে থাকে কঠিন আগ্নেয় শিলা, ছোট নুড়ি,
তার উপরে সদ্য ওঠা ঘাস
কলম ছলকে খোঁজে ছোট ছোট ঝোরা গুলো, ফড়িং গুলোর ওড়াউড়ি।
কাগজে চলকে যায় বিখ্যাত লোকের বাণী, রাংতা মোড়কে থাকা মন
কাচের জারের মধ্যে ফরমালিনে ডুবে থাকা হৃৎপিণ্ড নিয়ে খেলা করে!

মাটি

খুব বড় হয়ে যাচ্ছে ছায়ার নিচে থাকা সমস্ত ছায়ারা
বেঁটেদের বেঁটে বলা সৌজন্যবিরোধী, তবু মাঝে মাঝে
স্পষ্ট করে না বললে পপআপে খুলে যায় পুরোটা ঝিনুক
তখন আর চিহ্নগুলো পথিকআলোয় দৃষ্টিগোচরে থাকে না
এরকম হয় জেনে অণু-পরমাণুদের সেই মৌলিক গঠন
একেক রকম থেকে একসুরে বেজে ওঠে পিঁপড়েবৃত্তিতে
লাভের গুড়ের ভাগ কারা খেয়ে যাবে রোজ একথা ভাবার
জন্য তৈরি চেয়ার হাত বোলায় দাঁড়িতে: হাঃ মাটি তো আমার!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার দর্জিপাড়া ম্যাটারনিটি হোমে। পিতা প্রফুল্ল চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা রাজলক্ষ্মী দেবী। কবি বর্তমানে সপরিবারে কলকাতার বসবাস করেন। কবির, সাহিত্যের সব কটি শাখায় পারদর্শীতা আছে। তিনি অনুবাদ করেছেন বিভিন্ন ভাষার কবিতা। ছন্দ ও ছন্দহীনতায় সমান তাঁর ব্যুৎপত্তি রয়েছে। পুরাণ, দর্শন, সমাজতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান, সবকিছুই উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। কবির প্রকাশিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে “পদ্মকোরকের বুক শিশিরে ভেজেনি” (১৯৮৩), “অছান্দিক মন্ত্রমালা” (১৯৯৬), “শক্তিমান সুপারম্যান নারদ্রাকাদের দেশে” (ছড়া সংকলন, ২০০০), “অনত্থপদ সংহিতা” (২০১৫), “শঙ্খলাগা রোদে” (২০১৬), “অক্ষর ধানের” (২০১৯), “মেললহু ভূমিখণ্ডে” (২০১৯)। দীর্ঘকাল ধরে কবি লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। তিনি ১৯৮১ সাল থেকে অদ্যাবধি “ক্লেদজ কুসুম” নামে একটি বিখ্যাত লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে আসছেন। তাঁর লেখা প্রায় সব কটি বাণিজ্যিক-অবাণিজ্যিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন ভাষার কবিতার অনুবাদেও তিনি খ্যাতি লাভ করেছেন। কবির প্রাপ্ত সম্মাননার মধ্যে রয়েছে তাঁর দীর্ঘ কবিতার সংকলন “অনত্থপদ সংহিতা”(২০১৫) এর জন্য। “বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার”, “বেণুকা সাহিত্য সম্মান” (২০১৬), “মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার” (২০১৭) প্রভৃতি। এ ছাড়া “সৌহার্দ্য সত্তর” এর হয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ভ্রমণ করেছেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!