কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীতে একটি মন্দির ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল (৮ আগস্ট) রাতে রাত ১২টা থেকে ১টার দিকে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের নাগডাঙ্গা গ্রামের রতিকান্ত রায়ের বাড়ি সংলগ্ন মন্দিরে এই ঘটনা ঘটে।
আজ (৯ আগস্ট) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩৫ বছর আগে লালমনিরহাট জেলার মোগলহাট এলাকার আব্দুস ছামাদ ঘাটিয়ালের কাছে তিন দাগে ৬০ শতক জমি বিক্রি করেন রতিকান্ত রায়ের দাদা শিরিষ চন্দ্র রায়। সেই জমির মধ্যে দুই শতক জায়গায় মন্দিরটিও ছিল। ছামাদ ঘাটিয়ালের এক স্ত্রী ও তার দুই ছেলে দীর্ঘদিন ধরে সেখানেই বসবাস করে আসছিল। এরমধ্যে মন্দিরের দুই শতক জায়গার পরিবর্তে অন্য জায়গায় দুই শতক জমি লিখে দেয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল ছামাদের দুই ছেলে। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সালিশ বৈঠক হলেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সর্বশেষ গত ৬ মে, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, মেম্বার ও ইউপি চেয়ারম্যান এক সালিশে দুই শতক জায়গা মন্দির ও সড়কের জন্য ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেন ছামাদের দুই ছেলেকে।
সোমবার (৮আগস্ট) দুপুরে মন্দির সংলগ্ন জায়গা থেকে বাঁশ কাটতে যায় ছামাদের বড় ছেলে শহিদুল। সে একটি বাঁশ কাটার পর, রতিকান্ত ও তার ভাই শিবচরণ বাধা দেয়। এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে, রাতেই মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকার উভয় সম্প্রদায়ের লোক হতবাক। স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনার যথাযথ তদন্ত দাবি করেন।
মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য মহাদেব রায়ের ছেলে রতিকান্ত রায় জানান, “পারিবারিকভাবে আমার বাপ-দাদারা মন্দিরে পূজা-অর্চনা করে আসছে। মাঝরাতের দিকে প্রতিবেশীদের ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখি মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছে ও আগুন জ্বলছে। নেভানোর আগে মন্দিরের ৪০ভাগ আগুনে পুড়ে গেছে। কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে আমি দেখতে পাইনি। আমি এর বিচার চাই।”
এদিকে, ছামাদ ঘাটিয়ালের ছোট ছেলে দিনমজুর আজিমুল জানান, ১৯৮৮ সালে তার বাবা ছামাদ ঘাটিয়াল তার মাসহ দুই ভাইকে তিন দাগে ৬০শতক জমি কিনে এখানে বাড়ি করে দেন। ছামাদ ঘাটিয়াল আরেক স্ত্রীসহ লালমনিরহাট জেলার মোগলহাটে বসবাস করেন। এখানে তিন দাগে প্রাপ্ত ৩৫ শতক, ১১শতক ও ১৪ শতক দাগের মধ্যে ১৪ শতক জমির মধ্যে মন্দিরটি অবস্থিত। এনিয়ে রতিকান্ত ও তার ভাই শিবচরণের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঐ পরিবারের বিরোধ চলছে।
আজিমুল বলেন, “মন্দিরে আগুন দিলে আমাদের কি লাভ। আমাদেরকে ফাঁসানোর জন্য এটা করা হয়েছে। আমরা এখানে প্রায় ৩০টি হিন্দু পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মিলেমিশে বসবাস করে আসছি। আমরা এই কাজ কেন করতে যাবো।”
ফুলবাড়ী নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রতন রায় বলেন, “প্রতিমা ভাংচুর ও মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা তাদের জন্য হুমকি। দুর্বৃত্তরা হিন্দুদের মাঝে আতংক সৃষ্টি করতে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। ন্যায় বিচার না পেলে, আন্দোলনের পথ বেছে নেয়া হবে।”
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “আমরা ১০টার দিকে খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। সকলের সঙ্গে কথা বলে অনুমান করা হচ্ছে রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে দুর্বৃত্তরা মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টিও উঠে এসেছে। আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনায় থানায় মামলা দেয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদেরকে জানিয়েছি। তারা নিজেদের মধ্যে বুঝে পরবর্তীতে মামলা করবে বলে জানিয়েছে। মামলা হলে তদন্ত করে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা জানান, “আমি দুপুরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। সকল পক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছি। এ ব্যাপারে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছি।
সূত্রঃ একাত্তর টিভি