সুচরিতা বুঝতেই পারল না, ভিতরে ভিতরে প্রদীপের সঙ্গে সুবিমল রায়ের কানাকানি কতটা গভীর হয়ে উঠেছে। প্রদীপের শেষ ভাবনা, সুচরির উপর জোর খাটিয়ে প্রমাণ করে দিতে হবে, সুবিমল বললেও সামনা সামনি সে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করতে পারে। কুল্পিতে কর্মীসভার দিনক্ষণ আগেই শুনেছিল সুচরিতা। তা নিয়ে নিজের ভাবনায় দোল খেল বেশ কয়েকবার। কদিন আগে পর্যন্ত মনে মনে ভেবে রেখেছিল, প্রদীপের সম্মতি নেই বলেই সে কর্মীসভায় যাবে না কিন্তু বুধবার সকাল হলে অন্য ভাবনায় দুলতে বাধ্য হল। নেতৃস্থানীয় হতে গেলে আলোচনা সভায় যাওয়া খুব প্রয়োজন, না গেলে বড়ো হওয়ার সিঁড়িপথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পাবেû। আগেই প্রদীপ মন্তব্য করেছিল, অত দূরে গিয়ে লাভ নেই, মন চেয়েছে যখন স্থানীয় রাজনীতিতে লেগে থাকতে পারো।
সুচরিতা হ্যাঁ বা না কিছুই বলে নি, ভেবেছিল, কিছুদিন বাকি রয়েছে যখন ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কিন্তু বুধবার এলেই সেই ভাবনা সম্পর্ণ একমুখি হয়ে উঠল যা সুচরিতাকে বার বার তাড়িয়ে নিয়ে ফিরল। শেষে সিদ্ধান্ত নিল, অন্তত সুবিমলকে খুশি করতে ওই কর্মীসভায় যেতেই হবে। পরিচিতি বাড়বে, মূল মুখগুলোকে চিনে নেওয়া সম্ভব হবে, ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যাবে। নিজের জন্যে এসব ভাবনাও সুচরির মাথায় ছিল।
প্রদীপও মানসিক স্তরে এতটুকু পিছিয়ে থাকল না। নিষেধ সত্ত্বেও কর্মীসভায় যায় কিনা, তা জানার জন্যে দুপুরের পরে মথুরাপুর স্টেশনে ঢোকার মুখে একটা দোকানের ভিতরে অপেক্ষায় থাকল। বিকেল দুটোয় বাইরে এসে দেখল, সুবিমল পাশের চা দোকানে ঢুকছেন, মূল উদ্দেশ্য, সুচরিকে সঙ্গে নিয়ে কুল্পির কর্মীসভায় যাবেন। প্রদীপের মধ্যে চনমনে উতলা ভাব, বারকয়েক দোকানের ভিতর-বাহির করল। সুচরিতা এলে তাকে বাধা দিয়ে কীভাবে বিরত করতে হবে, সেই অবস্থান ঠিক করে ফেলল। ভিতরে একটাই প্রশ্ন, কে সুবিমল রায়? এই লোকটাকে তোয়াক্কা না করেই তো কলেজ স্পোর্টস-এ সুচরির সমর্থনে টেক্কা দিতে পেরেছিল সে। আরও কিছু সময় পরে বাজারের গলিপথ দিয়ে সুচরিতা চা দোকানের সামনে এসে উপস্থিত হতেই সুবিমলের সাদর সম্ভাষণ, কুল্পিতে যাবে তো?
সেজন্যে এসেছি।
বেশ তো চলো। সুচরির গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা সুবিমলের প্রত্যাশায় উষ্ণতার আগুন। প্রদীপ পায়ে পায়ে সুচরির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সুচরির উপর তার জোর কত বেশি তা সুবিমলকে দেখাতে বলল, বাণী সিনেমায় চলছে ‘চক দে ইণ্ডিয়া, টিকিট কেটে রেখেছি, মিনিট দশেক পরে ট্রেন।
সুচরিতা তো তো করতে লাগল।
চারটেয় শো শুরু, এই ট্রেনে না গেলে সো ধরতে পারব না।
সুচরিতার মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সমুদ্র, মুখের উপর সুবিমলের জোড়া চোখ ঘুরছে।
প্রদীপ আরও জোর দেখিয়ে বলল, এত কিন্তুর কী আছে?
সুবিমলের চাপা প্রশ্ন, তাহলে কী কর্মীসভায় যাবে না?
আবার আপনি প্যানপ্যানানি শুরু করলেন? প্রদীপের তির্যক প্রশ্ন।
সুবিমল বুঝতে পারলেন, প্রদীপ তার ইচ্ছাকে খণ্ড খণ্ড করে দিতে চাচ্ছে।
সুচরিতা কর্মীসভায় যাওয়ার তুলনায় সিনেমা যাওয়ার দিকে বেশি করে ঝুঁকে পড়েছে। হাসিমুখে সুবিমলের মন্তব্য, খুব ভালো বই, নেতৃত্ব কাকে বলে তা শাহরুখ খানকে দেখলে বুঝতে পারবে। পরশু জয়নগরে আরেকটা কর্মীসভা আছে, জয়কে দিয়ে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দেব।
তাহলে আসছি সুবিমলদা, সুচরিতার দুঠোঁটের ফাঁকে এক চিলতে মিষ্টি হাসি। সামনে চলতে চলতে একবার পিছনে তাকিয়ে সুবিমলকে দেখে নিল। মেয়েটার মধ্যে যে আনুগত্য দেখানো শুরু হয়েছে, তা বুঝতে সুবিমলের কোনো অসুবিধা হল না। জয় আসতেই বিড় বিড় করে বললেন, ছেলেটা খুব বেড়ে গেছে রে, প্রবল ঝড়ে শুয়ে পড়ার সময় হয়ে গেছে।
জয়ের চাপা মন্তব্য, সেদিন আমার উপর খেঁকিয়ে উঠেছিলেন, আজ নিজের চোখে দেখতে পেলেন। ফেবিকুইকের মতো পিছনে লেগে থাকা ছাড়া ছেলেটার কোনো কাজ নেই।
তুই আবার ফেবিকুইক নিয়ে পড়লি কেন?
জয় আর সেই প্রসঙ্গে ঢুকল না, বলল, এই ট্রেনে যাবেন তো?
মনে রাখিস, রাজনৈতিক সংগঠন ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে চলে না, একটা নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। আমরা তো কারুর অপেক্ষায় হাতপা গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। নতুন কেউ এলে তাকে জায়গা করে দেওয়ার জন্যে অবশ্যই ভাবব, না এলে যেমন চলছে, তেমনিই চলবে।
স্টেশনে ট্রেন ঢুকলেই সুবিমল জয়কে সঙ্গে নিয়ে কম্পার্টমেন্টে উঠে বসলেন। যেতে খুব বেশি সময় লাগল না। কুল্পি স্টেশনে নেমে হেলতে দুলতে হেঁটে চললেন রায়বাবু, পাশে পাশে জয়শংকর। তার বিনীত প্রশ্ন, প্রদীপ আজ এমন আচরণ করল কেন জানেন?
তোর কী মনে হচ্ছে?
খেলার মাঠে আপনার শাসন ভুলতে পারে নি বলেই আজ তার বদলা নিল। আপনাকে ছোটো করতেই ছেলেটা এমন কাণ্ড ঘটালো।
সঠিক হিসেব দিতে পারলি তুই।
গুরু, আর চুপ করে থাকা উচিত হবে না।
সবুরে মেওয়া ফলে রে। আসল সমস্যা অন্যত্র, একটু বেশি চাপ দিলে ছেলেটা জয়ন্ত দেবনাথের দিকে ঘুরে যেতে পারে। সুচরিতা এখনও মানসিক টানাপোড়েনে রয়েছে, প্রদীপের টানে সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে টার্ন নিলে আমরাই সমস্যায় পড়ে যাব। দেবনাথ শালাকে সেই সুযোগটুকু দিতে যাবি কেন? আজ আবার থানায় গিয়েছিল কালিতলার ঘটনা নিয়ে। কেবল তুই পারিস একটা কৌশলি অবস্থান নিতে, তাতেই ছেলেটা কাত হয়ে পড়তে পারে।
ভালো করে বুঝিয়ে বললে একটা চেষ্টা নিয়ে দেখতে পারি।
তাহলে ফেরার পথে বুঝিয়ে বলব তোকে, আমার স্থির বিশ্বাস, প্রদীপ কাবু হয়ে পড়বে, ওকে হাবুডুবু খেতেই হবে।
কর্মীসভায় সুবিমলের উপস্থিতি মুহূর্তে পরিবেশকে অনেকখানি ভারী করে তুলল। চা বিস্কুট এল, সকলের মুখে মুখে তা সারা হল। জয় বলল, আর দেরি করবেন না, শুরু করে দিন। আলোচ্য বিষয়, সামাজিক অবক্ষয় দূরীকরণে রাজনৈতিক দল ও মায়েদের বিশেষ ভূমিকা।
সুবিমল সভাপতির আসনে বসে কিছু সময় থমকে থাকলেন, এদিক ওদিক বার দুই দেখে নিলেন। প্রায় সকলে এসে গেছে, সংখ্যা পাঁচশোর উপরে। সমীরকে সামনে পেয়ে বললেন, কী ব্যাপার, এতদিন দেখি নি কেন? এসেছ যখন, তোমাকে দিয়েই আলোচনা শুরু করব।
পরে বলব বলে ভেবেছিলাম।
ভালো বলতে পারো, তাই তোমাকে দিয়ে শুরু করতে চাচ্ছি।
সমীর আর দ্বিমত করল না, এত বড়ো মূল্যায়নের পরে কিছুতেই না বলা চলে না। প্রথমেই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়ে দিল, আজকাল কেউ কেউ মনে করেন, সামাজিক অবক্ষয়ের পিছনে রাজনৈতিক দলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আমি সেই মতামতের সঙ্গে কখনো একমত হতে পারি নি, আজও সেই স্ট্যাণ্ড নিয়ে কথা বলতে চাই। রাজার নীতিই রাজনীতি যাতে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য ব্যক্তির নিজস্ব ইচ্ছা লাগে। পাশাপাশি এও সত্য, রাজনীতি চলে একান্তভাবে সংগঠনের প্রয়োজনে, দলের শ্রীবৃদ্ধির তাগিদে, দেশের সার্বিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে। সেই দায়বদ্ধতার সঙ্গে সামাজিক অবক্ষয় দূর করার দায়বদ্ধতাকে মিল করে দেখলে ভুল করা হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি স্রেফ আক্রোশ নিয়ে এভাবে আক্রমণ তুলে আনা ঠিক নয়। তবে এও সত্য যে সামাজিক অবক্ষয় দূর করার ক্ষেত্রে মায়েদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। Charity begins at home—গৃহকোণেই জীবনের সব সদগুণের শুভ সূচনা ঘটে। বাড়িতে বাড়িতে মায়েরা সচেতন হয়ে উঠলে তাদের পরিচর্যায় যে যোগ্য সামাজিক ছেলে তৈরি হবে, তারাই পারে সামাজিক অবক্ষয় দূর করার জন্য একটা শক্তপোক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে। সেই পথে কম বেশি সামাজিক অবক্ষয় দূর করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
চারদিকে চড়চড় শব্দে হাততালি পড়ল, গম্ভীর সুবিমলের প্রশ্ন, সুচরিতা এসেছে কী?
দাদা, এই তো আমি।
তোমাকে কিছু বলতে হবে।
আপনি হুকুম করছেন যখন….।
হেসে উঠে সুবিমল বললেন, ‘হুকুম’ শব্দটা উচ্চারণ করে কী ঠিক করলে? আমরা পরস্পর সহকর্মী, শুধুমাত্র আজকের অনুষ্ঠান পরিচালনা করার দায়িত্ব পড়েছে আমার উপর। হুকুম করার আমি কে?
তাহলে শব্দটা উইদড্র করছি। প্রথমেই বলি, সমীরদার সঙ্গে কিছুতেই একমত হতে পারছি নে। আজকাল আমরা যেসব সামাজিক অবক্ষয়ের মুখোমুখি হচ্ছি, তার জন্যে মূলত রাজনীতিকরা দায়ী, এড়িয়ে গিয়ে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই। নিজেকে বাঁচাতে প্রাণভয়ে পালালে পিছন থেকে সামাজিক অবক্ষয়ের আক্রমণ আরও তীব্রতর হয়ে উঠবে। যত্রতত্র লোক টানার জন্যে আমরা গর্ব করে বলি, রাজনৈতিক দল সবচেয়ে বড়ো সামাজিক সংগঠন অথচ সামাজিক অবক্ষয়ের দায় স্বীকার করব না, তা হয় না। এ দায়বদ্ধতা স্বীকার করতেই হবে। বেকার সমস্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, নারী নির্যাতনের খবর দুবেলা পাচ্ছি, শিশু-পাচার দৃষ্টান্তের অভাব নেই, রাস্তায় মেয়েদের উপর শ্লীলতাহানির খবরে সোসাল মিডিয়াতে হাঁকডাকের শেষ নেই। বেকারত্ব বাড়লে কিছু শিক্ষিত যুবক যে বিপথগামী হবে, তা নিয়ে কী দ্বিমত হতে পারি? তাদের বিকৃত চেতনা দিন দিন যেভাবে প্রকটভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, তা সমগ্র দেশকেও টলিয়ে দিতে পারে। হেরোইন খাওয়া যুবকের রোগ সংক্রামক হয়ে অন্য যুবককে গ্রাস করতে পারে। স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও আমাদের ভাবতে হচ্ছে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে। সমাজে লিঙ্গ বৈষম্যের এ কুফল সকলকে মানতেই হবে। এ নিয়ে রাজনীতিকদেরও সেভাবে সরব হতে দেখি না। সব দলের ক্ষেত্রে সেকথা কমবেশি সত্যি। টাকার লোভে যারা শিশু পাচার করছে, তাদের অনেকেই শিক্ষিত লোক, হতাশায় অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারলে এতদিনে সমাজ থেকে এসব দূর করা সম্ভব হত কিন্তু তা হয়েছে কী? নারী পুরুষের সমান অধিকার আজও আমরা দিতে পারি নি। সামাজিক অবক্ষয় দূর করার জন্যে সমীরদা মায়েদের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলেছেন, লিঙ্গবৈষম্য বর্তমান থাকলে তাতে কী সার্থক হওয়া সম্ভব? আমার মধ্যেও প্রশ্ন জাগছে, অন্যতম সিনিয়র লিডার সমীরদার বিরোধিতা করে এভাবে বক্তব্য রাখা কী ঠিক হল? ক্ষমা চেয়ে নিয়ে কথা শেষ করছি। কেবলমাত্র বিষয়কে ধরতে গিয়ে এত কথা বলতে হল আমাকে।
সকলে থমকে গেল সুচরিতার বক্তব্যে। যে যার মতো মন্তব্য করতে শুরু করল। রবীন বলল, রাজনৈতিক দলের উপর দোষারোপ চাপিয়ে দিয়ে সুচরিতা ঠিক কাজ করল না।
নিধুর মন্তব্য, বলতে বলতে এতটা লাগামহীন হয়ে পড়া ঠিক নয়।
প্রবীর বলল, আসলে সুচরিতা সুকৌশলে নিজেকে সবার সামনে নারীবাদী হিসেবে তুলে ধরতে চাইল।
রতনের মন্তব্য, যাই পারে বলুক, সুচরিতা আসরটা বেশ জমিয়ে দিতে পেরেছে।
রহিমের খাঁটো কথা, সুবিমলদার নজর কাড়তে সুচরিতা এত কথা বলতে পারল।
সুবিমল বুঝলেন, এ বিতর্ক চলতে থাকলে তলে তলে সংগঠন ভাগ হয়ে যেতে পারে, তাই ইতি টানতে বললেন, যে কেউ কোনো বিষয়ের উপর নিজের মতো করে বলতে পারেন, তা নিয়ে এত বিরুদ্ধ মন্তব্য ঠিক নয়। রথীনকে বলছি ছোটো করে বক্তব্য রাখতে।
সুচরিতার সঙ্গে সহমত হয়েও বলতে চাই, শুধু রাজনৈতিক দল নয়, দেশের আপামর মানুষকে নিয়ে একসঙ্গে সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই-এ নামতে হবে। দেশের আম-মানুষকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দল উদ্যোগ নিলে তা সম্পূর্ণ সফল নাও হতে পারে। তার অর্থ এই নয় যে নীতি আদর্শ বাদ দিয়ে আম-মানুষের কাছে আত্মসমর্থন করতে হবে। কোথাও বিচ্যুতি থাকলে বুঝিয়ে সুজিয়ে তাকে আদর্শের পথে টেনে আনা যেতে পারে। এর বাইরে কোনো পথ নেই। সামাজিক অবক্ষয় দূর করার ক্ষেত্রে মায়েদের অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে, বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। সেই শিশুরা মাতৃত্বের যাদু লাভ করে উপযুক্ত নাগরিক হয়ে ওঠে। সামাজিক অবক্ষয় দূর করতে তাদের ভূমিকা মনে রাখার মতো হয়ে উঠতে পারে। সেজন্যে মাকে সার্বিকভাবে সচেতন হতে হবে, শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, অবক্ষয় কীভাবে সমাজদেহকে পঙ্গু করে তোলে, তা নিয়ে সূক্ষ্ম ভাবনাচিন্তা গ্রহণ করতে হবে।
রথীনের সমর্থনে চারদিকে চড়চড় করে হাততালি পড়ল। সুচরিতা চেঁচিয়ে বলল, আমার মতামত সমর্থন করার জন্য রথীনদাকে ধন্যবাদ।
সুবিমলবাবু উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আর কী কেউ কিছু বলবে?
আপনাকে অনেকটা সময় নিয়ে বলতে হবে, মতামত জানালো সামিম। সাগিরের মন্তব্য, দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রসঙ্গটা আরও পরিষ্কার করে দিন।
সাজিদ বলল, খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ, ভালো করে বলুন, গ্রামীণ আলোচনায় আমরা তা তুলে ধরতে চাই।
ফণিভূষণের মন্তব্য, একমাত্র সুবিমলদাই পারেন আলোচনাকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করে তুলতে।
দাদার উপর আমাদের নির্ভরতা দিন দিন বেড়ে চলেছে, চাপা স্বরে রথীনের সাফ কথা।
সুবিমল উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, জয় নিজে থেকে বলতে চাইল না কিন্তু জানি, দীর্ঘদিন সংগঠনের সঙ্গে লেপ্টে থাকার সূত্রে ওর অভিজ্ঞতা অনেক গভীর। তাই জয়কে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি।
জয় ভাবতে পারে নি, গুরু এভাবে তার মূল্যায়নকে সামনে তুলে আনবেন। গর্বে ভরে উঠল বুক। প্রথমেই তোল্লা দিয়ে বলল, সুবিমলদা আমার রাজনৈতিক অভিভাবক, সব কিছু শিখেছি ওঁর হাত ধরে। আজকের আলোচনায় যা বলব তাতে সুবিমলদার ভাবনা চিন্তা থাকবেই, সেজন্যে শুরুতে ঋণ স্বীকার করছি। কোনোক্রমে অস্বীকার করা চলে না যে রাজনীতি হল সমাজ জীবনের মূল চালিকাশক্তি। তাই সমাজ জীবনে যদি কোনো অবক্ষয় থাকে, তা দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিতেই হবে। এ দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে মূল দায়িত্ব বলে কিছু থাকে না। সমাজকে সারিয়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের। এ নিয়ে মায়েদের ভূমিকার কথা ভাবলে গর্বে বুক ভরে ওঠে। অ আ ক খ শেখার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। সমাজের মধ্যে আমরা যে আচরণ করি, সবই মায়ের স্নেহ মমতায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব। স্মৃতিসাগরে চোখ রাখলে প্রথমেই মায়ের মুখ দেখতে পাই। তাই সামাজিক অবক্ষয় দূর করার ক্ষেত্রে মায়েদের সচেতন দৃষ্টিভঙ্গীকে মূল চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য করা চলে। আজকের শিশুরা মায়েদের কাছে সযত্নে ললিত পালিত হয়ে আগামি দিনে প্রকৃত সমাজমুখি হয়ে উঠতে পারে, সেই অর্থে সামাজিক অবক্ষয় দূরীকরণে মায়েদের ভূমিকায় গর্বিত না হয়ে পারা যায় না।
চারদিকে হাততালির ফোয়ারা জানিয়ে দিল জয়ের ছোট্ট বক্তব্য কতখানি হৃদয়গ্রাহী হয়েছে। সুবিমল বলতে উঠে জয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে পারলেন না। বললেন, শুধুমাত্র জয়ের বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করার মধ্যে আজকের আলোকপাত সীমাবদ্ধ রাখব। সামাজিক অবক্ষয় দূর করার দায়িত্ব রাজনীতিকদের নিতে হবে কেন, এমন প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। যেটুকু করতে পেরেছি তা প্রচার করে যদি আমরা নির্বাচনে জেতার আশা করি, তাহলে যা পারি নি, সেই দায় নেব না কেন? এ দায়িত্ব যত নিতে পারব, তত বেশি নিজেদেরকে দায়িত্ব সচেতন করে তুলতে পারব। কর্তব্য পালনের এ পথ অন্তহীন। যতটা সারতে পারলাম, তার জন্যে গর্ব থাকবেই কিন্তু যা পারলাম না, তার জন্যে মানসিক খেদ থাকলে আম-মানুষকে বোঝাতে পারব, ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য ছিল না। এ সদর্থক ভূমিকা শুধুমাত্র ব্যক্তিতে থেমে থাকবে না, অন্যদেরকেও যথেষ্ট প্রভাবিত করবে। ফলত সদর্থক রাজনীতির পল্লবিত স্রোত সামাজিক অবক্ষয় দূর করার ক্ষেত্রে নতুন পথ তৈরি করতে পারবে। জয় আজকের আলোচনায় সেই দর্শনকে তুলে ধরতে পারল। আমিও সেই দর্শনে বিশ্বাস করি। পুরুষের মতো নারীর ঐকান্তিকতাকে কিছুতেই অস্বীকার করা চলে না। বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। মায়েদের পরম আদরে গড়া শিশুরা আগামি দিনে মা, মাতৃত্ব, মাতৃভূমির নির্যাসকে সমতুল্য ভাবতে পারলেই সামাজিক অবক্ষয় দূর করার ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিতে পারবে। দেশ গঠনে, সমাজ গঠনে মায়ের কাছ থেকে সেটাই সেরা পাওনা। সেজন্যে সকলকে নারীর অগ্রাধিকার নিয়ে সরব হওয়া উচিত। সমাজসেবায় যাতে পুরুষ ও নারী সমান-সমান অধিকার লাভ করতে পারে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবার দিন এসেছে। তাহলে নারী পুরুষ মিলে সমবেত প্রচেষ্টায় সামাজিক অবক্ষয় দূর করা সম্ভব। বৃহৎ এ কর্মযজ্ঞে সফল হতে পারলে আগামি দিনে আমরা নতুন সমাজ পেতে পারি, নতুন ভারতও পেতে পারি।
বক্তব্য শেষ হতেই হাততালির ফোয়ারা ছুটল, নানা মন্তব্য করা শুরু হল….এজন্যেই সুবিমলদা আমাদের নেতা।
দারুণ বলেছেন।
দাদার বিশ্লেষণ আমার মন ছুঁয়ে গেছে।
আলোচ্য বিষয়ের উপর প্রকাশ্য জনসভায় সুবিমলদার বক্তব্য রাখতে দেওয়া উচিত।
এলাকায় এত ভালো কেউ বলতে পারেন না।
যোগ্যতার জোরে সুবিমলদা নিজের নেতৃত্ব ধরে রাখতে পেরেছেন। আনুগত্যের টুইটুম্বুর জোয়ারে সুবিমল একরকম ভেসে গেলেন, অভিভূত হলেন ভিতরে ভিতরে, বুঝলেন সকলে আবেগতাড়িত হতে পেরেছে তাঁর বক্তব্য শুনে, নেতৃত্বের যাদু দেখে।
সন্ধে সাতটায় সভা শেষ হলেই যে যার মতো বাড়িতে ফিরতে শুরু করল। জয়শংকর সেই সুযোগে সুবিমলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, রঘুর পাড়াতুতো দাদা এসেছে এখানে, বাজারে রঘু আপনার অপেক্ষায় আছে, জরুরি প্রয়োজনে কথা বলতে চায়।
ফেরার পথে পটলার দোকানে তো যেতেই হচ্ছে, তখন অন্য কোনো বাড়িতে বসে….
তাহলে তাই বলে দিচ্ছি। আজ অন্য কোনো প্রোগ্রাম নেই তো?
তা নেই।
তাহলে সময় নিয়ে কথা বলতে পারবেন।
সন্ধের শুরুতে সুবিমল জয়কে সঙ্গে নিয়ে কুল্পি স্টেশনে চলে এলেন। ট্রেন ঢুকতে তখনও মিনিট দশেক দেরি, জয়কে বললেন, চা খাবি?
তাহলে স্টেশনের উত্তর মাথায় যেতে হবে।
কেন, ওই তো চায়ের দোকান।
ওখানে ভালো চা করে না।
অগত্যা জয়কে সঙ্গে নিয়ে সুবিমল হাঁটতে শুরু করলেন। চা খাওয়া শেষ হল, দাম মিটিয়ে দিলেন, আবার পায়ে পায়ে প্লাটফর্মের মাঝামাঝি অবস্থানে এসে দাঁড়ালেন। আপ ট্রেন ঢুকল একটু পরে, সুবিমল কম্পার্টমেন্টে উঠে বসলেন। আধ ঘন্টার মধ্যে মথুরাপুর স্টেশনে নেমে রিকসায় চেপে বসলেন। পটলার চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে দেখলেন, রঘু আনমনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। জয়কে বললেন, ওকে নীহারের বাড়িতে যেতে বল্।
পটলার দোকানের ভিতরে ঢুকে সুবিমল গম্ভীর হয়ে গেলেন। রঘুকে হাতে পাবার পর থেকে রোজ রোজ সেই গম্ভীরতা বাড়ছে। প্রদীপের কথা একবার মনে না করে পারলেন না। ছেলেটা তাঁকে অহেতুক অপমান করল, বাড়তে বাড়তে হেঁতাল গাছ হয়ে গেছে, গোড়ায় কোপ না দিলে নয়।
নীহার পার্টির বিশ্বস্ত কর্মী। অনেকগুলো দৃষ্টান্তে সেই বিশ্বাস প্রমাণ করতে পেরেছে। অতীতের ভাবনাকে কেন্দ্র করে একটা নতুন ভাবনা জট পাকিয়ে উঠল সুবিমলের মাথায়। মনে পড়ল একটা পুরনো পরিসংখ্যান। গত নির্বাচনের সময় রঘুর পাড়াতে রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তিনি নাকি কাহারদের ভালো চোখে দেখেন না, কেবল উঁচু সম্প্রদায়ের লোকজনদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সেই রটনায় রঘু মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল বলেই তাঁর পক্ষে নির্বাচনের ফলাফল এত তলানিতে নেমে গিয়েছিল। এখন সেই রঘুকে হাতের মঠোয় নিয়ে খটিরবাজার এলাকায় নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি নতুন করে বাড়িয়ে তুলতে বদ্ধপরিকর হয়ে উঠেছেন। নীহারের বাড়িতে ঢুকে দেখলেন, চিন্তিত মুখে বারান্দায় বসে রয়েছে রঘু।
কী খবর রে? নতুন কোনো সমস্যা? সুবিমলের সচকিত প্রশ্ন।
সমস্যা আরও পাকিয়ে উঠেছে দাদা, একটা কিছু করুন।
সেদিন বললি,পাড়ার লোকজন তোর সঙ্গে রয়েছে, আজ আবার অন্য কথা বলছিস কেন?
পাড়ার কেউ বিরুদ্ধে নেই।
তাহলে নতুন কী সমস্যা?
বাজারের ভিতরের লোকজন আমার বিরুদ্ধে চলে গেছে, প্রবীর ঘোষালের পাড়ার লোকজন ভীষণ ক্ষেপে উঠেছে, আমি নাকি এ কাজ করে ঘোষালদের সম্মান পথের ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি। এত ভয় করছে যে বাজারে যেতে পারছি নে।
তাহলে কী কিছুদিন বাইরে গিয়ে থাকবি?
নিরাপদ জায়গা পেলে থাকতে কোনো অসুবিধা নেই।
ওরে, বেলেঘাটায় আমার নিজস্ব বাড়ি রয়েছে।
রঘু কেমন যেন স্বস্তিবোধ করল, সুবিমল নতুন ভাবনায় জড়িয়ে পড়ে পর পর যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ মিল করতে শুরু করলেন। আপন খেয়ালে মাথা দোলাতে থাকলেন, অস্ফুটে বললেন, কোথাও যেতে হবে না তোকে।
বিকল্প কোনো ব্যবস্থা?
হ্যাঁরে, ভালো প্লট পেয়ে গিয়েছি, গ্রামের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে শুধু প্রচারটা করিয়ে দিতে পারলেই হল।
কী বলতে হবে বলুন?
জয়ন্ত দেবনাথের গোপন সহযোগিতায় তুই এত বড়ো কাণ্ড ঘটাতে পারলি।
তাতে কী সুরাহা হবে?
পাগল ছেলে কোথাকার, ঘুঁটি সাজানোর সূক্ষ্ম হিসেবটা এখনও মাথায় নিতে পারলি নে? তুই তো এতদিন দেবনাথের সঙ্গে ছিলি, থানার ওসিও তাই জানেন। কেবল সেই কারণে বড়বাবু জয়ন্তকে টার্গেট না করে পারবে না। সেই সুযোগে আমরা সব কাজ সেরে ফেলব।
রঘু একটু হাসল, বলল, এবার বুঝেছি।
সুবিমল গম্ভীর হয়ে নিজের ভাবনায় ডুবে থাকলেন, একবার খিস্তিও দিলেন, দেবনাথ হারামিকে এবার কাবু না করে ছাড়ব না। এত বদমাস যে থানায় যাওয়ার খবর পেলেই নতুন ইস্যু তৈরি করে ওই ঢ্যামনা থানায় ঢুকবেই। বড়বাবুর কাছে গিয়ে প্যানপ্যানানির বায়নাক্কা না করে থামবে না, তাতেই ওসি কখনো কখনো নরমও হয়েছেন। রঘুকে বললেন, সন্তর্পনে বাড়িতে ফিরে যা, কাল সকাল থেকে লোকজনকে দিয়ে হাটে বাজারে প্রচারটা তুঙ্গে তুলে দে, বাকি কাজ আমিই শেষ করব, ওই ঢ্যামনাকে এবার মাটিতে না শুইয়ে ছাড়ব না।
আসছি দাদা।
সাবধানে যাস।
ও নিয়ে কিছু ভাববেন না।
নিরাপত্তার মেসিনপত্র সঙ্গে এনেছিস তো?
রঘুর মুখে মৃদু হাসি, সুবিমলের মনে অভিনব স্বস্তি, ছেলেটাকে কটাদিন নিরাপদে রাখতেই হবে। নীহারকে বললেন, হ্যাঁরে, চা খেতে দিবি তো?
রেডি হয়ে গেছে।
কুল্পির কর্মীসভায় গেলি না কেন?
কাল থেকে পেটের ট্রাবলে ভুগছি।
ওষুধ খেয়েছিস?
সকালে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম।
কাকে দেখালি?
ওমর ফারুককে।
সুবিমলের মুখে মিষ্টি হাসি, বললেন, বেশ করেছিস, ডাক্তারবাবু আমাদের লোক রে, প্যাডে লিখে দিলে দুস্ত রোগীদের নামমাত্র ফিজ্-এ দেখে দিয়েছেন,এমন বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।
নীহার হাসল, পূর্ব অভিজ্ঞতায় সে জানত, জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে সুবিমল রাজনীতির অঙ্ক না মিলিয়ে পা ফেলেন না। গত সপ্তাহে সুবিমল নীহারকে সঙ্গে নিয়ে এম.বি.বি.এস ওমর ফারুকের চেম্বারে গিয়েছিলেন। তাতেই বুঝেছিল,ডাক্তারবাবুর উপর সুবিমলের কতখানি দাপট রয়েছে। চা বিস্কুট খেয়ে বের হবার সময় সুবিমলের দৃঢ় আশ্বাস, আমাদের সব পেশেন্ট এখানে আসবে, তবে দুস্তদের একটু দেখবেন।
কবে দেখিনি বলুন?
তা অবশ্য ঠিক। ডাক্তারবাবুর মুখে মিষ্টি হাসি, সুবিমলের মধ্যে গর্বিত চেতনার বিস্তার। সেই সূত্র জানা ছিল বলেই নীহার পেটের ট্রাবল নিয়ে ডাঃ ওমর ফারুকের চেম্বারে গিয়েছিল।
চা খাওয়া শেষ হতেই সুবিমল জয়কে বললেন, তুই দেরি না করে ঘোষাল পাড়াতে যা। কয়েকজনের সঙ্গে তোর তো বেশ সখ্যতা রয়েছে, তাদের সঙ্গে আলাপ করলে বুঝতে পারবি, রঘুর বিয়েকে কেন্দ্র করে গ্রামের কত মানুষ জয়ন্ত দেবনাথে পক্ষে চলে গেছে। তারপর বিড় বিড় করে দ্রুততালে যা বললেন, তা বুঝতে পারল না জয়। কেবল অনুমান করতে পারল, সূক্ষ্ম ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন সুবিমল, রঘুকে দিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে না ফেলা পর্যন্ত থামবেন না। জয়কে উদ্দেশ্য করে একবার হুঙ্কার দিলেন যেন আকাশ কাঁপিয়ে গুড়গুড় শব্দ মাটির বুকে নামল। জয় বুঝল, প্রবল বর্ষণ শুরু হতে খুব বেশি দেরি নেই।
চলবে…