কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল পরিবহনের বাসটির মালিক সোলায়মান হকের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলায়। ওই বাসের এক সাবেক সুপারভাইজারের বাড়িও পাবনায়। গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাতের ঘটনায় ধর্ষণের শিকার নারী ওই সুপারভাইজারের সাবেক স্ত্রী।
টাঙ্গাইলে ঈগল পরিবহনের বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় বাসটির মালিক সোলায়মান হক এবং সাবেক সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বাসটির চালক মনিরুল ইসলামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়ার প্যারাকপুরে। সুপারভাইজার রাব্বি হোসেন পাবনার রাধানগরের যুগিপাড়া এবং হেলপার দুলাল মিয়া পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছার টেবুনিয়ার সিট গোডাউন এলাকার বাসিন্দা। ওই নারী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দা।
ওই নারীর সাবেক স্বামী বর্তমানে পাবনা-রংপুরগামী একটি বাসের সুপারভাইজার। তিনি বলেন, প্রায় চার বছর আগে ওই নারীর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। কিন্তু মাত্র সাত দিনের মাথায় আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। তবে আমি ঈগল বাসের সুপারভাইজার থাকা অবস্থায় আমার হেলপার (বর্তমান সুপারভাইজার) রাব্বির সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। শুনেছি শুধুমাত্র রাব্বির বাসেই সে চলাচল করে, অন্য কোনো বাসে যায় না। তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগও আছে বলে আমি জেনেছি। হয়তো তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে। প্রতিবারই তার সাবেক স্ত্রী রাব্বির বাসেই চলাচল করে। ডাকাতরা এত যাত্রী থাকতে কেন তাকেই ধর্ষণ করল?
বাস মালিক সোলায়মান হক বলেন, বাসের বর্তমান চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারের সঙ্গে সাবেক সুপারভাইজারের ভালো সম্পর্ক আছে। তাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই। তারা সবাই ভালো ছেলে। তারা কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নেই।
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরতি পথে পাবনার ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া মোড়ে ওই দিনের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে সবার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। এরপর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ফিরে সেখান থেকে বাসটি রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পথে একবার আমার সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। এরপর রাত ৩টার দিকে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায় সুপারভাইজার।
সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, তারা ২৪-২৫ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দেন। পথে সিরাজগঞ্জের নাইটিঙ্গেল হোটেলের আগে থেকে চারজন, হোটেল পার হয়ে তিন এবং এর কিছু দূর গিয়ে আরও তিনজন মোট ১০ জন টিকিটবিহীন যাত্রী ওঠানো হয়। পরে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর পাকুল্লা থেকে যাত্রী বেশে বাসে ওঠা ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে মারধর করে যাত্রীদের জামা-কাপড় দিয়েই তাদের হাত-মুখ ও চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর তারা চালককে মারধর করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতি ও ধর্ষণ করে। এরপর ডাকাতরা মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ার একটি বালুর ঢিবিতে বাসটি কাত করে রেখে পালিয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাতে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী ঈগল পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি ও এক যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। যা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনায় ডাকাতি ও ধর্ষণের মূলহোতা রাজা মিয়া নামে একজনকে টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে ডাক্তারি পরীক্ষার পর বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুনের আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ওই নারী।