চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত সামরিক মহড়ার মানচিত্র (ডানে), ২০১৬ সালে গুয়াংডং প্রদেশের ঝানজিয়াংয়ে চীন-রাশিয়ার নৌবাহিনীর যৌথ মহড়া
চীনের সামরিক হুমকি অগ্রাহ্য করে তাইওয়ান সফরে গেছেন মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। আর এর জেরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়ে তাইওয়ানের চারপাশে সামরিক মহড়ার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং।
এরপরই চীনের এই পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তাইওয়ান। ভূখণ্ডটির সরকারের অভিযোগ, চীনের সামরিক মহড়া তাইওয়ানের আকাশ ও সমুদ্রপথ অবরোধের সমান। বুধবার (৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যান্সি পেলোসির সফরের প্রধান প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাইওয়ানের চারপাশের অবস্থানগুলোতে সামরিক মহড়া চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বেইজিং। বড় মাপের এই মহড়ায় সরাসরি গোলাবর্ষণের ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আর চীনের এই পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা করেছে ভূখণ্ডটির সরকার। তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী বলেছে, এই ধরনের মহড়া ‘তাইওয়ানের আঞ্চলিক স্থান আক্রমণ’ এবং ‘তাইওয়ানের আকাশ ও সমুদ্র অবরোধের সমান।’
বিবিসি’র চীন সংবাদদাতা স্টিফেন ম্যাকডোনেল দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি মানচিত্র টুইট করেছেন। ওই মানচিত্রে চীনের পরিকল্পিত মহড়ার অবস্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিকল্পিত এই মহড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে রোববারের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে এর আগেই অবশ্য তাইওয়ান ছাড়বেন ন্যান্সি পেলোসি।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাইও এই মহড়ার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, পেলোসির সফরের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এটি একটি অপ্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড এবং পুরো (তাইওয়ান) প্রণালীজুড়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাইওয়ান।
অন্যদিকে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘তাইওয়ানের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে এমন যেকোনো পদক্ষেপ প্রতিহত করবে’ তাদের সামরিক বাহিনী।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে পৌঁছান ন্যান্সি পেলাসি। ১৯৯৭ সালের পর এটি কোনো মার্কিন শীর্ষ রাজনীতিকের তাইওয়ান সফর। এই সফরকে কেন্দ্র করে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে।
দফায় দফায় হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই স্পিকারের তাইওয়ান সফরকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি চীন। আর তাই ন্যান্সির সফরের প্রতিক্রিয়ায় রাতেই তাইওয়ানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেয় চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উইউ কিয়ান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। উইউ কিয়ান বলেন, ‘চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং তারা সামরিক অভিযানের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমরা তাইওয়ানের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে অভিযান চালাব।’
এছাড়া বেইজিংয়ে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নসকে মঙ্গলবার গভীর রাতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করে। এসময় চীনা এই মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলে, ওয়াশিংটনকে ‘মূল্য চুকাতে হবে’।
অন্যদিকে চীনের সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জি ফেংকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, ‘তাইওয়ানে পেলোসির সফরের এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত জঘন্য এবং এর পরিণতি হবে অত্যন্ত গুরুতর।’