নাসুম আহমেদের ওই ওভার সামনে আসবে। বাংলাদেশের বোলিংয়ের ১৫তম ওভারটি সামনে আসতে বাধ্য। এক ওভারে ৩৪ রান খরচ করা নাসুমই তো ডোবালেন বাংলাদেশকে! না হলে হয়তো সহজ লক্ষ্য পেতো সফরকারীরা। কিন্তু হিসাবের খাতা উল্টেপাল্টে লড়াই করার মতো স্কোর গড়ে নেয় জিম্বাবুয়ে। এরপর বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের আনন্দে মেতেছে আফ্রিকার দেশটি। শুধু কি তাই, তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি জিতে নেওয়ায় বাংলাদেশকে সিরিজ হারের লজ্জা দিয়েছে জিম্বাবুয়ে।
(মঙ্গলবার) হারারে স্পোর্টস ক্লাবের শেষ টি-টোয়েন্টি ১০ রানে জিতে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। রায়ান বার্লের ঝড়ো হাফসেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৫৬ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ১৪৬ রান করতে পারে। ফলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় জিম্বাবুয়ে। প্রথম ম্যাচ জিম্বাবুয়ে জিতলেও দ্বিতীয়টিতে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। ফলে শেষ ম্যাচে এসে নিষ্পত্তি হলো সিরিজ।
টি-টোয়েন্টিতে আরেকবার ধরাশয়ী বাংলাদেশ। এবার শিকার জিম্বাবুয়ের। নতুন নেতৃত্বে নতুন দল নিয়ে যে স্বপ্নের পথে পা বাড়িয়েছিল, সেটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের পাল্লা সবসময় হেলে থাকে বাংলাদেশের দিকে, সেটা যে ফরম্যাটেই হোক না কেন; সেই তাদের বিপক্ষে সিরিজ হার, নিশ্চিতভাবেই বড় ধাক্কা দেশের ক্রিকেটের জন্য। কারণ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অবস্থা যে আসলেই ভয় ছড়ানো, সেটি চোখে আরও স্পষ্ট করে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো এবারের সিরিজ।
১৫৭ রানের লক্ষ্য, টি-টোয়েন্টিতে মোটেও কঠিন বলা চলে না। তার ওপর হারারের এই স্টেডিয়ামে মোটামুটি রান উৎসবই হয়েছে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের ২০০ ছাড়ানো ইনিংসের বিপরীতে বাংলাদেশ করেছিল ১৮৮। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং ভালো না হলেও বাংলাদেশ ছিল সাবলীল। সেই হারারেরেই ব্যর্থ হলো সফরকারী টপ অর্ডার!
নুরুল হাসান সোহান চোটে পড়ায় নেতৃত্বের দায়িত্ব পড়লো মোসাদ্দেক হোসেনের কাঁধে। কিন্তু তিনি সিরিজ হার ঠেকাতে পারেননি। পারেননি দলের ব্যাটাররাও। লিটন দাস শুরুতে মৃদু ঝড় তুললেও সেটি থামে ৬ বলে ১৩ রানে। অভিষিক্ত পারভেজ হোসেন ইমনের ইনিংস মাত্র ২ রানে শেষ। এনামুল হক আবারও ব্যর্থ। ১৩ বলে করেন ১৪ রান। নাজমুল হোসেন শান্ত ভালো শুরু পেয়েও ২০ বলে ১৬ রান করে আউট। তাতে ৬০ রানে নেই ৪ উইকেট।
‘বিশ্রাম’ থেকে ডেকে নেওয়া মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন পথ দেখাতে থাকেন। তাতে জয়ের সম্ভাবনাও উঁকি দিতে থাকে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে আবারও ছন্দপতন। ২৭ বলে ২৭ রান করে এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের বিদায়ের পরপরই যে ফিরে যান অধিনায়ক মোসাদ্দেক (০)। ব্র্যাড এভান্স তাকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন।
এরপর আফিফ ও মেহেদী হাসান আবারও আশা জাগান। যদিও সফল হতে পারেননি। মেহেদী ১৭ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২২ রান করে বিদায় নেওয়ার পরই আসলে হার একরকম নিশ্চিত হয়ে যায়। আফিফ টিকে থাকলেও শেষরক্ষা হয়নি। বাঁহাতি ব্যাটার ২৭ বলে ৩ বাউন্ডারিতে অপরাজিত থাকেন ৩৯ রানে।
ব্যাটারদের ব্যর্থতা অবশ্যই আছে। তবে নাসুম কাঠগড়ায় উঠবেন নিশ্চিতভাবে। তার এক ওভারে খরচ করা ৩৪ রানেই তো হয়েছে বাংলাদেশের সর্বনাশ!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১৫৬/৮ (বার্ল ৫৪, জঙ্গোয়ে ৩৫, আরভিন ২৪, চাকাভা ১৭; মেহেদী ২/২৮, হাসান মাহমুদ ২/২৮, মাহমুদউল্লাহ ১/৮)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৬/৮ (আফিফ ৩৯*, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মেহেদী ২২, শান্ত ১৬, এনামুল ১৪, লিটন ১৩; নিয়াউচি ৩/২৯, এভান্স ২/২৬)।
ফল: জিম্বাবুয়ে ১০ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ জিম্বাবুয়ে ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: রায়ান বার্ল।
সিরিজসেরা: সিকান্দার রাজা।