চীনের দফায় দফায় হুঁশিয়ারির মধ্যেই তাইওয়ানে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১১টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টা) তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে বিমানবন্দরে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি অবতরণ করে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এদিকে, ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে পৌঁছার খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তাইওয়ান প্রণালী অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে এই উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব দেশটিকে নিতে হবে। পাশাপাশি, চীনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাগত স্বার্থকে অবমূল্যায়নের জন্য ও মূল্য দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।
ন্যান্সি পেলোসির সফর ঘিরে মঙ্গলবার দিনভর তাইওয়ান সীমান্তের আকাশসীমায় টহল দিয়েছে চীনা যুদ্ধবিমান। ন্যান্সি তাইপেতে অবতরণের কিছুক্ষণ আগে তাইওয়ান প্রণালী অতিক্রম করে কয়েকটি চীনা বিমান তাইওয়ানের আকাশ সীমায় প্রবেশ করে।
চীনা যুদ্ধবিমানের সম্ভাব্য হামলা এড়াতে চীন সাগর এড়িয়ে ফিলিপাইন ঘুরে তাইপেতে পৌঁছেছে পেলোসিকে বহনকারী উড়োজাহাজ। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর সি-৪০ যুদ্ধবিমানের একটি বহর উড়োজাহাজটির নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল।
১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম মার্কিন কোনো শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক তাইওয়ান সফরে গেলেন।
তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এ পর্যন্ত ন্যান্সি পেলোসির সফর নিয়ে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেয়নি। তবে ন্যান্সি তাইপের বিমানবন্দরে পৌঁছার পর দ্বীপ ভূখণ্ডটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ নিজে উপস্থিত থেকে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক মানুষ।
পেলোসিকে অভ্যর্থনা জানাতে তাইপের বিভিন্ন ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল পেলোসির এই আগমন লাইভ সম্প্রচার করেছে।
১৯৪০ সালের গৃহযুদ্ধে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তাইওয়ান। তারপর থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী রাজনীতিকরা নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে দাবি করলেও চীন এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে এখনও নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।
৩৬ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ ভূখণ্ডের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব এবং প্রায় ৩ লাখ সক্রিয় সদস্যের একটি সেনাবাহিনী।
এখন পর্যন্ত অবশ্য খুবই অল্প কয়েকটি দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনো দূতাবাস খোলেনি দেশটি।
তবে তাইওয়ান বিষয়ক একটি আইনের আওতায় এই স্বাধীনতাকামী দ্বীপভূখণ্ডকে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
যেসব ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে কূটনৈতিক তিক্ততা চলছে, সেসবের মধ্যে প্রধানতম ইস্যু তাইওয়ান।