অপহরণ, মাদক, জাল টাকার অবৈধ ব্যবসা, ডাকাতি, স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়াচ্ছেন মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেছে, গ্রেপ্তার ও আইনি ব্যবস্থা নিয়েও কোনোভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। পুলিশ বলছে, ইয়াবা, আইস ও ফেনসিডিলসহ মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গারা এখন শুধু মাদক ব্যবসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও কন্ট্রাক্ট কিলিং এর মতো বড় ধরনের অপরাধেও জড়িত ।
চট্টগ্রামের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে ৪৬২ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাদের কাছ থেকে ১,৩২৯,৮২৫ পিস ইয়াবা, প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ও তিনটি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের সূত্র আরও জানায়, ২০১৭ সালে ১৩ জন, ২০১৮ সালে ৩০ জন, ২০১৯ সালে ২৬ জন, ২০২০ সালে ৯১ জন, ২০২১ সালে ১৮৬ জন এবং এই বছরের জুন পর্যন্ত মাদক, টাকা ও স্বর্ণের বারসহ ১১৬ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যাতি চাকমা বলেন, “চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোহিঙ্গারা এখন উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদক বেচাকেনা ও বহনে ব্যবহার হচ্ছে রোহিঙ্গারা। সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে তিনটি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে রোহিঙ্গারা শুধু মাদক বেচাকেনা ও বহনে সীমাবদ্ধ নয়; সোনা চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধেও জড়িয়ে পড়েছে।”
কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার ১৮ হাজার টাকার জাল নোটসহ তিন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।
কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল কবির বলেন, “‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জাল টাকাসহ তিন রোহিঙ্গাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। আগে ইয়াবাসহ একাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জাল টাকাসহ গ্রেফতারের ঘটনা এবারই প্রথম। তারা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তিন রোহিঙ্গা পালিয়ে চট্টগ্রামে এসেছিল বলে জানিয়েছে আমাদের। মাদক ছাড়াও হত্যাকাণ্ডে জড়িয়েছে তারা।”
এর আগে শুক্রবার চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুর এলাকা থেকে দেড় কোটি টাকার স্বর্ণের বারসহ মা-ছেলেকে আটক করা হয়।
তারা পরিচয় গোপন করে ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। তাদের কাছ থেকে আটটি স্বর্ণের বার, পাঁচটি চেইন, এক জোড়া চুড়ি, তিন জোড়া কানের দুলসহ আরও কিছু মালামাল জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে গত দুই দিনে পৃথক ঘটনায় চার বাংলাদেশিকে অপহরণ করেছে রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা। তারা মুক্তিপণও দাবি করেছে।তবে
সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা অপহরণকারীদের আটক করতে সক্ষম হয়। আট ঘণ্টার অভিযানের পর অপহৃত চারজনকে উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পের ভেতরে নিরাপত্তা জোরদার করায় রোহিঙ্গারা এখন পালিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-১৬) ক্যাপ্টেন তরিকুল ইসলাম বলেন, “আমার এলাকায় সাত মাসে ৩০টি অপহরণের ঘটনায় দুই বাংলাদেশিসহ ৩৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচটি মামলায় সাত অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে এটা খুবই স্পষ্ট যে রোহিঙ্গারা মাদকের জন্য এসব অপরাধ করছে।”
এদিকে, সোমবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা জনগণ একটি রাষ্ট্রহীন ইন্দো-আর্য জাতিগত গোষ্ঠী যারা প্রধানত ইসলাম ধর্মের অনুসারী এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের বসবাস।
রাখাইন রাজ্যে সামরিক দমন-পীড়ন শুরু হলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। এর আগে, বাংলাদেশে আরও প্রায় ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছিল।