রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পারমাণবিক যুদ্ধে কেউ বিজয়ী হতে পারে না এবং এ ধরনের কোনো যুদ্ধ কখনোই শুরু করা উচিত নয়। সোমবার (১ আগস্ট) পারমাণবিক অপ্রসারণ চুক্তির (এনপিটি) সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের কাছে একটি চিঠিতে এই মন্তব্য তিনি।
সোমবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। মূলত ইউক্রেনে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। এই সময়ের মধ্যে একাধিকবার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কাও সামনে এসেছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘আমরা এই সত্য মেনেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছি যে, পারমাণবিক যুদ্ধে কেউ বিজয়ী হতে পারে না এবং এ কারণে এটি (পরমাণু যুদ্ধ) কখনোই হওয়া উচিত নয়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সকল সদস্যের জন্য সমান এবং অবিভাজ্য নিরাপত্তার পক্ষে দাঁড়িয়েছি আমরা।’
রয়টার্স বলছে, সোমবার এনপিটি ফোরামে প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই বক্তব্য কার্যত রাশিয়াকে একটি দায়িত্বশীল পারমাণবিক শক্তি হিসাবে চিত্রিত করার লক্ষ্যেই দেওয়া হয়েছে। তবে এদিনের এই বক্তব্য পুতিন এবং অন্যান্য রাশিয়ান রাজনীতিবিদদের আগের বক্তব্যের বিপরীত। মূলত প্রেসিডেন্ট পুতিনসহ অন্য রুশ নেতাদের পূর্ববর্তী বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি পশ্চিমা দেশগুলোতে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেওয়া বক্তৃতায় ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসন শুরুর কথা জানিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর পুতিন রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রাগারের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বাইরের শক্তিগুলোকে সতর্ক করেছিলেন যে, (ইউক্রেনে) হস্তক্ষেপ করার যে কোনো প্রচেষ্টা আপনাকে ‘এমন পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে যা আপনি আপনার ইতিহাসে কখনও সম্মুখীন হননি’।
এর কয়েকদিন পর রাশিয়ার পারমাণবিক বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেন ভ্লাদিমির পুতিন। ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর থেকে এমন ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা আর দেখা যায়নি এবং রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে প্রকাশ্যেই কথা বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক উইলিয়াম বার্নস গত এপ্রিলে বলেছিলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া যে ধাক্কা খেয়েছে, তাতে ‘আমরা কেউই কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বা কম মাত্রার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাব্য হুমকিকে হালকাভাবে নিতে পারি না।’
অবশ্য রাশিয়ার সামরিক মতবাদে রাশিয়ান রাষ্ট্রের অস্তিত্বের হুমকির ক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। এছাড়া পশ্চিমারা ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে এবং মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘প্রক্সি যুদ্ধ’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে।
এর আগে গত এপ্রিল মাসে নিজেদের নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সারমাটের প্রথম পরীক্ষা চালায় রাশিয়া। অত্যাধুনিক রুশ এই ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম। মস্কো বলছে, আগামী শরতের মধ্যে এই অস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া।