আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবকে কিছুদিন আগেই বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এবার সংস্থাটি জানালো, এখন পর্যন্ত বিশ্বে ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ ভাইরাসজনিত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ইউরোপে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্যমতে, আফ্রিকা মহাদেশে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও আক্রান্তদের ৯৮%-ই আফ্রিকার বাইরের বিভিন্ন দেশের। এ রোগে সমকামী পুরুষদের তুলনামূলকভাবে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।
বুধবার (২৭ জুলাই) জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, মহামারি হলেও এ প্রাদুর্ভাব ঠেকানো সম্ভব। যদি যৌনসঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটু সংযমী ও সচেতন হই, সেক্ষেত্রে এই রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই রোগ থেকে আত্মরক্ষা অনেকটাই নিজের ওপর নির্ভরশীল।
তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়া প্রায় ১০% রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। ইতোমধ্যে এই রোগে ৫ জন প্রাণ হারিয়েছে।
১৯৭০ সালে ডিআরসিতে মানুষের মধ্যে মাঙ্কিপক্স প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল। আফ্রিকায় বন্য প্রাণী ইঁদুর বা এজাতীয় কোনো প্রাণী থেকে মাঙ্কিপক্স প্রথম মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মাঙ্কিপক্সের জন্য বর্তমানে কোনো নির্দিষ্ট টিকা নেই, তবে গুটিবসন্তের টিকা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে ৪৫% পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ অনেকটা গুটিবসন্তের মতো। তবে তা মৃদু। শুরুতে জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, ক্লান্তি ভাব, অবসাদ ইত্যাদি দেখা দেয়। ফুলে যেতে পারে লসিকা গ্রন্থি। তিন দিনের মধ্যে সারা গায়ে ফুসকুড়ি ওঠে, যা পরবর্তীতে মুখে শুরু হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
গুটিবসন্তের মতোই প্রথমে লাল, তারপর ভেতরে জলপূর্ণ দানা, শেষে শুকিয়ে পড়ে যেতে থাকে। দুই থেকে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয় এই রোগ। তারপর আপনাআপনিই সেরে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ রোগ তেমন বড় কোনো জটিলতা সৃষ্টি করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ ও শরীরে চিকেন পক্সের মতো ফুসকুড়ি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে ফ্লুর মতো উপসর্গ যেমন জ্বর, পেশিতে ব্যথা এবং টনসিল হতে পারে।