মেঘনায় “অস্বাভাবিক জোয়ারে” নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন ও জাতীয় উদ্যান পানির নীচে ডুবে গেছে। পর্যাপ্ত উঁচু জায়গার অভাবে উদ্যানের অনেক হরিণ পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে হরিণগুলো লোকালয়ে কিংবা পার্শ্ববর্তী চরে আশ্রয় নিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সেলিম হোসেন।
বন বিভাগ জানায়, নিঝুম দ্বীপ ও জাহাজমারা ইউনিয়নের ১০টি চর নিয়ে ২০০১ সালে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। এ বনে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার হরিণ আছে।
মো. সেলিম হোসেন বলেন, “গত কয়েকদিনের অস্বাভাবিক জোয়ারে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন ও জাতীয় উদ্যান পানির নীচে ডুবে গেছে। এর ফলে কিছু হরিণ সাঁতার কেটে পার্শ্ববর্তী চরে আশ্রয় নিয়েছে। বন বিভাগের লোকজন এ বিষয়ে সর্তক আছেন।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিঝুম দ্বীপের হরিণগুলো লোকালয়সহ অন্যত্র আশ্রয় নিতে গিয়ে বন্য কুকুর ও শিয়ালের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এ কারণে সুখচর ইউনিয়নের নলচিরা রেঞ্জের চর জাগলায় ভেসে আসা হরিণের ছানাগুলোকে উদ্ধার করে আবার বনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আফসার দিনাজ বলেন, “গত ৪-৫ দিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে পুরো দ্বীপ তলিয়ে গেছে। দ্বীপের জাতীয় উদ্যান, ফসলি জমি ও শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মেঘনা নদীর নিকটবর্তী হলেও নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণে কোনো বাঁধ নেই। ফলে জোয়ারে সময় দ্বীপের গ্রাম ও ফসলি জমি ভেসে যায়। সেই সঙ্গে হরিণসহ অন্যান্য প্রাণী পানিতে তলিয়ে যায়।”
এ বিষয়ে বন বিভাগের নিঝুম দ্বীপ রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, “গত বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট উঁচু জোয়ারে নিঝুম দ্বীপ পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। সেই পানিতে মানুষের বসতবাড়ি ও গবাদিপশুর সঙ্গে জাতীয় উদ্যানের হরিণের আবাসস্থল তলিয়ে যাচ্ছে।”
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালী) মো. ফরিদ মিঞা বলেন, “জোয়ারের পানির কারণে হরিণের আবাসস্থল তলিয়ে গেছে। কিছু হরিণ লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। স্থানীয়রা হরিণ দেখলে বন বিভাগকে জানাচ্ছে।”
হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিল দাস বলেন, “বেড়িবাঁধ না থাকায় নিঝুম দ্বীপের অনেকগুলো ছোট-বড় মৎস্য খামারের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে করে মাছ চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তবে কী পরিমাণ খামার ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে তা আরও ২-৩ দিন পরে হিসাব করে বলা যাবে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাসেত সবুজ বলেন, “যেসব ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভাঙা রয়েছে সেসব জায়গায় আউশ ধান ও আমনের বীজতলা পানির নীচে তলিয়ে গেছে। আউশ ধান কিছু দিন পানির নীচে থাকলেও তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু আমনের বীজতলার অনেক ক্ষতি হবে। কয়েকদিন পর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে সঠিক হিসাব বলা যাবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, “নিঝুম দ্বীপ এলাকায় জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে আড়াই থেকে তিন ফুট বেশি পরিমাণ পানি থাকে। সোমবার সকালেও নিঝুম দ্বীপে তিন ফুট পানি রয়েছে।”