দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দাবানলের ঝুঁকিতে পড়া ১৪ হাজারের বেশি মানুষ সরিয়ে নিয়েছে ফ্রান্স। স্পেন, ক্রোয়েশিয়া ও গ্রিসেও দ্রুত বাড়ছে দাবানল। ফ্রান্সের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা গিরোন্ড থেকে আগেই পর্যটকদের সরানো হয়েছে। এবার সেখান থেকে প্রহরিদের সরিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া টেস্তে-ডে-বুচ এবং লান্দিরাস এলাকাতেও দাবানল ছড়াচ্ছে।
স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে মিজাস পার্বত্য এলাকায় দাবানল বাড়তে থাকায় তিন হাজার দুইশ’ মানুষ সরে যায়। তবে পরে কিছু মানুষ আবারও সেখানে ফিরে যেতে পেরেছে। পর্তুগালের দাবানল বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে নতুন করে তা ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। পর্তুগিজ সরকার জানিয়েছে, গত সপ্তাহে তাপদাহে ৬৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের বেশির ভাগই বয়স্ক।
স্পেনের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা মালাগা থেকে খুব বেশি দূরে নয় মিজাস পার্বত্য এলাকার দাবানল। এছাড়া কাস্তিলা এ লিয়ন, গ্যালিসিয়া এবং এক্সট্রিমাডুরা প্রদেশেও আগুন বাড়ছে।
মালাগা এলাকায় বসবাসকারী এল্লেন ম্যাককার্ডি বলেন, ‘আমরা কেবলমাত্র কয়েকটি প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়েছি এবং সত্যিই দৌড়েছি, এবং সেই পর্যায়ে রাস্তায় থাকা সবাই দৌড়াচ্ছিল… সেখানে প্রচুর অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার ইঞ্জিন ছিল’।
পশ্চিমে মরক্কো থেকে পূর্বে ক্রিট পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর জুড়ে মোতায়েন রয়েছেন হাজার হাজার অগ্নিনির্বাপণকর্মী ও বহু পানি ছিটানো বিমান। গত মঙ্গলবার থেকে ওই অঞ্চল তীব্র তাপদাহে পুড়ছে, শুস্ক হয়ে পড়েছে গাছ।
মানুষের তৈরি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ আরও বেশি ঘন ঘন, আরও বেশি তীব্র এবং বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠেছে। শিল্প যুগ শুরুর পর্যায় থেকে বিশ্বের তাপমাত্রা ইতোমধ্যেই ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে আর সরকারগুলো কার্বন নিঃসরণ কমাতে না নিলে তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকবে।
ফ্রান্সের আবহাওয়া বিভাগ রবিবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠার পূর্বাভাস দেয়। এছাড়া সোমবার তাপদাহের নতুন রেকর্ড তৈরি হতে পারে বলেও জানিয়েছে তারা। পর্তুগালে তাপমাত্রা সম্প্রতি ৪৭ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে।
যুক্তরাজ্যে চলছে তীব্র তাপদাহ। সোমবার ও মঙ্গলবার দেশটিতে রেকর্ড তাপমাত্রার পূর্বাভাস রয়েছে। কয়েকটি অংশে তা ৪১ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. ইউনিস লো বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের চিহ্ন। এছাড়া তিনি জানান, তাপদাহের কারণে প্রতিবছর দুই হাজার মানুষের বেশি মৃত্যু ঘটছে।
মরক্কো ১৩০০ এর বেশি মানুষকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। উত্তরাঞ্চলের দাবানল মোকাবিলায় মোতায়েন করা হয়েছে আরও বেশি অগ্নি নির্বাপণকর্মী। সবচেয়ে বেশি কবলিত এলাকা লারাচে প্রদেশ। ক্রিটে গ্রিক অগ্নি নির্বাপণকর্মীরা উত্তর উপকূলে রেথিমনো পার্বত্য এলাকায় একটি বড় দাবানল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। শনিবার তারা আংশিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়।
দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্ক এবং ক্রোয়েশিয়ার আদ্রিয়াটিক উপকূলের কিছু এলাকাও দাবানল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। ক্রোয়েশিয়ার অবকাশ শহর জাদার এবং সাইবেনিকের কাছে বেশ কয়েকটি দাবানল ছড়িয়েছে। তবে এই অঞ্চল থেকে খুব বেশি মানুষ সরানো হয়নি।
সূত্র: বিবিসি