‘রাস্তা পারাপারের সময় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে গর্ভের সন্তান বেরিয়ে এলো এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর। ঘটনাস্থলেই সেই নারী ও তার স্বামী মারা গেছেন। তাদের ছয় বছর বয়সী আরেক সন্তানও হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায়। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ময়মনসিংহের ত্রিশালের। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোট বিল্ডিং সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হন- ত্রিশাল উপজেলার রাইমনি গ্রামের ফকির বাড়ির মোস্তাফিজুর রহমান বাবলুর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), তার স্ত্রী রত্না (৩০) ও মেয়ে সানজিদা (৬)। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী তাজ ও মাহী এন্টারপ্রাইজের একটি মালবাহী ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট ২০৩৫৮০) রাস্তা পারাপারের সময় তাদের চাপা দেয়। চালক ও হেলপার পলাতক।’ এমন নির্মমতার সংবাদকে সামনে রেখেই সেভ দ্য রোড-এর এবারের প্রতিবেদন। যেখানে উঠে এসেছে বাইকশূণ্য পদ্মা সেতু, ২৫% ভাগ বাইক নিয়ে সড়ক-মহাসড়ক-সেতুগুলোতে ঘটেছে ১ হাজার ৯৫৬ দুর্ঘটনা, আহত হয়েছেন ১ হাজার ৬১২ এবং নিহত হয়েছেন ৩২৪ জন।
প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ ঈদযাত্রা এবং বাড়ি ফেরত মানুষের মধ্যে ৯৬ লক্ষ মানুষ সড়ক- রেল ও নৌপথে চরম ভোগান্তি সহ্য করে ২ থেকে ৪ গুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করেছে এবার। বাকি ২৯ লক্ষ মানুষ নিজস্ব বাহন বা অন্য কোন আরামদায়ক বাহনে যাতায়াত করলেও রেলের ছাদে চড়ে বাড়িতে গিয়েছে অর্ধ লক্ষ মানুষ। তবুও সহ্য করতে হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের লাঠির আঘাত, থাকতে হয়েছে বগিতে বন্দী দিনের অধিকাংশ সময়। ছিলো মোটর সাইকেলের ‘মুভমেন্ট পাশ’ নাম উদ্ভট সিদ্ধান্তও। মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়ির পথে যেতে না পারায় অনেককে পরতে হয়েছে এ্যাম্বুলেন্স-মাইক্রোবাস-ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার এমনকি কোরবানীর পশুবহনকারী পিকআপ-ভ্যান-ট্রাকের পাল্লায়ও। এসব বাহনে নির্মমভাবে কোরবানীর পশুর মত গাদাগাদি করেও বাড়িতে যেতে হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষকে। দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল চালানোর পাশাপাশি নিয়ম না মানা এবং হেলমেট ব্যবহারে অনীহার কারণে ৪১৮ টি দুর্ঘটনায় আহত ৩৬৮ এবং নিহত হয়েছে ৫৫ জন; যার অধিকাংশই বাইক লেন না থাকার কারণে প্রাইভেট কার, ট্রাক, বাস-মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বাহনের পেছন থেকে ধাক্কা দেয়ার কারণে ঘটেছে। কোন রকম বিরতি না নিয়ে টানা ট্রাক চালানোর কারণে অসাবধানতা ও ঘুমন্ত চোখে-ক্লান্তি থাকায় প্রসূতি মায়ের মত ৮৮ জন নিহত হয়েছেন ৫০২ টি দুর্ঘটনায়; আহত হয়েছেন ১৭৪ জন। চরমভাবে অচল রাস্তা-ঘাট আর সড়কপথ নৈরাজ্যের কারণে ৫১১ টি বাস দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৩৬ জন এবং নিহত হয়েছেন ১০২ জন; পাড়া-মহল্লা-মহাসড়কে অসাবধানতার সাথে চলাচলের কারণে লড়ি-পিকআপ-নসিমন-করিমন-ব্যাটারি চালিত রিক্সা-বাইসাইকেল ও সিএনজি দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫২৫ টি আহত হয়েছেন ৪৩৪ জন এবং ৭৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ৫ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত নৌপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯৬ টি। আহত ১২৭ জন, নিহত হয়েছেন ১৭ জন; প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ রেলপথে চরম ভোগান্তি সহ্য করে চলাচলে যেমন ভোগান্তি সহ্য করেছে, ছাদ থেকে পরে, অসচেতনতা বশত রেল ক্রসিং-এ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১২২ টি। আহত হয়েছে ২১২ জন, নিহত হয়েছে ১১ জন। আকাশপথে দুর্ঘটনা ঘটলেও যাত্রী না থাকায় কোন নিহত নেই, তবে ১ টি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের দুটি বিমান, আহত হয়েছেন ৩ জন। এছাড়াও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে ২৭ জনকে।
১৭ জুলাই প্রেরিত প্রতিবেদনে সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা জানান, এই প্রতিবেদন ২৪ টি জাতীয় দৈনিক, ১৭ টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ২১ টি টিভি-চ্যানেলের পাশাপাশি সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, সেভ দ্য রোড-এর প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদীসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সক্রিয় সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবকদের তথ্যে তৈরি করা হয়েছে। সেভ দ্য রোড-এর গবেষণা সেল-এর তথ্যে আরো উঠে এসেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে গত ১২ দিনে ২১ টি দুর্ঘটনার কথা। এতে আহত হয়েছেন ২৭ জন।
৩৭ লক্ষ ৫৩ হাজার নিবন্ধিত মোটর সাইকেল-এর মালিক; যারা ভ্যাট-ট্যাক্সসহ বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্বকে সমৃদ্ধ করছে। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে বাইক লেন-এর দাবিতে রাজপথে যেমন থেকেছে সেভ দ্য রোড, তেমনি এই প্রতিবেদনের মাধ্যমেও গণমাধ্যমযোদ্ধা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সংসদীয় কমিটির সদস্য-সচিব-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যৌক্তিক বিবেচনায় বাইকের বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার-ই হবে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের জন্য কল্যাণকর সিদ্ধান্ত।