টানা প্রায় পাঁচ মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে এই সামরিক অভিযান চললেও সম্প্রতি পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে চলমান এই আক্রমণ আরও জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে মস্কো।
আর এতেই ইউক্রেনে কমপক্ষে আরও ১৭ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রোববার (১৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী তার প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করার ঘোষণা দেওয়ার পর ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন শহরে রুশ সেনাদের ক্ষেপণাস্ত্র এবং শেল নিক্ষেপের ঘটনায় কমপক্ষে আরও ১৭ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চলছে এমন সকল এলাকায় রাশিয়ার হামলা আরও তীব্র করার নির্দেশনা দিয়েছেন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু। আর এরপরই ইউক্রেনে রুশ হামলায় আরও প্রায় দেড় ডজন বেসামরিক প্রাণহানির খবর সামনে এলো।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
বিবিসি বলছে, রাশিয়া মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প এলাকা ডনবাস দখল করতে চাইছে। এই ভূখণ্ডটি লুহানস্ক এবং দোনেতস্ক নামে দু’টি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সেখানে রুশপন্থি দু’টি বিদ্রোহী স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
আলজাজিরা বলছে, রাশিয়ার সামরিক অভিযান বর্তমানে পূর্ব ডনবাস অঞ্চলকেন্দ্রীক হলেও উত্তর ও দক্ষিণ ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলেও রুশ সামরিক বাহিনী নতুন করে হামলা করছে। এছাড়া ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গুরুতর বোমা হামলা করেছে রুশ সেনারা।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় কমান্ডারদের আশঙ্কা, ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোতে দ্বিতীয় দফায় সর্বাত্মক রুশ হামলা হতে পারে।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার খারকিভের নিকটবর্তী ও রাশিয়ান সীমান্ত থেকে মাত্র ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) উত্তরে অবস্থিত ইউক্রেনের চুহুইভ শহরে রুশ হামলায় কমপক্ষে ৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত তিনজন।
এদিকে এই এলাকার পার্শ্ববর্তী সুমি অঞ্চলের আঞ্চলিক গভর্নর দিমিত্রো জাইভিতস্কি শনিবার টেলিগ্রামে বলেছেন, সুমি অঞ্চলে রুশ সীমান্তের কাছেই তিনটি শহর ও গ্রামে মর্টার ও আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এসব হামলায় একজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত এবং কমপক্ষে সাতজন আহত হয়েছেন।
এছাড়া শনিবার দোনেতস্কের গভর্নর বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের এই অঞ্চলের শহরগুলোতে রুশ সেনাদের হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সাতজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। এসব হামলায় আহত হয়েছেন আরও ১৪ জন।
একইদিন দোনেতস্ক অঞ্চলের পোকরোভস্ক শহরের উপকণ্ঠের বাসিন্দা এক নারী বলেন, শনিবার বিকেলে রকেট হামলায় তার একজন প্রতিবেশী নিহত হয়েছেন।
তেতিয়ানা পাশকো নামের ওই নারী বার্তাসংস্থা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, রাশিয়ার ওই হামলায় তিনি নিজেও পায়ে আঘাত পেয়েছেন এবং হামলায় তার পরিবারের একটি কুকুরও প্রাণ হারিয়েছে।