ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচরের কাছে ভেসে আসে নাবিক বিহীন বার্জ “আল কুবতান”। এটি চরনিজামের পূর্বপাশে আটকে রয়েছে। তবে ট্রলারে করে সেখানে গিয়ে জাহাজটির মালামাল নিয়ে যাচ্ছে চরনিজাম ও ঢালচরের স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রশাসন জাহাজটি হেফাজতে নিতে দেরি করার কারণে এভাবে মালামাল লুট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৫ জুলাই) কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন ভোলার মিডিয়া কর্মকর্তা লে. সাফিউল কিনজল জনমানবহীন বিদেশি জাহাজ ভেসে আসার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “এটি একটি বার্জ। এটিতে কোনো ইঞ্জিন নেই, তাই নাবিকও নেই। এই বার্জের ওপর মালামাল নিয়ে অন্য জাহাজ দিয়ে টেনে আনা হয়। ধারণা করা হচ্ছে অন্য জাহাজ টেনে আনার সময় এর চেন বা টানা ছিঁড়ে গেছে। তাই ভাসতে ভাসতে এখানে চলে এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কোস্টগার্ড সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। গুগলে খোঁজ করে জানা গেছে বার্জটি সিঙ্গাপুরের। বার্জের ওপরের ভেকু দুটি দুবাইয়ের তৈরি। পুরো বিষয়টি কোস্টগার্ড সদরদপ্তরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে জানানো হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার প্রথমে এই বার্জটি দেখতে পান চরনিজামের স্থানীয় বাসিন্দা সামসুদ্দিন সাগর। তখন তিনিসহ স্থানীয় কয়েকজন যুবক ট্রলারে করে ওই বার্জে গিয়ে দেখতে পান সেটিতে বিপুল পরিমাণ বোল্ডার পাথর ও দুটি ভেকু রয়েছে। তখনই বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়।
তবে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত প্রশাসন এটি হেফাজতে নিতে পারেনি বলে নিশ্চিত করেন চরনিজামের একাধিক বাসিন্দারা। দুর্গম এলাকা ও সমুদ্র উত্তাল থাকায় জাহাজের হেফাজত নিতে দেরি হচ্ছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল নোমান।
তিনি দাবি করেন, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশকে বৃহস্পতিবার রাতেই বিষয়টি জানিয়েছেন।
এদিকে, শুক্রবার সকালে আল কুবতানের তদারকি করতে চরমানিকা কোস্টগার্ডের একটি টিম ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে বলে জানান মনপুরার কোস্ট গার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মো. আসলামুল হক। তবে নেটওয়ার্ক সমস্যায় চরমানিকা কোস্টগার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকালে চরনিজামের পূর্বপাশে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এসে ভিড়ে আল কুবতান। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়।
ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে ভেসে আসা আল কুবতানের সঙ্গে ট্রলার আটকে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দাবি করছে, ইতোমধ্যে ট্রলারে করে নিয়ে গেছে অর্ধকোটি টাকার মালামাল। দ্রুত প্রশাসন জাহাজটির সুরক্ষা করতে না পারলে রক্ষিত মালামাল নিয়ে যাবে স্থানীয়রা।
এই বিষয়ে মনপুরা উপজেলার নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা চরফ্যাশনের ইউএনও আল নোমান বলেন, “জাহাজটির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বৃহস্পতিবার রাতেই নেভি, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশকে জানিয়েছি। দুর্গম সাগর পথ, তাই জাহাজটি হেফাজতে নিতে দেরি হচ্ছে। দ্রুত হেফাজতে নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”