বাংলাদেশের ৭৩% মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের “বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি” শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে এ প্রতিবেদন যৌথভাবে প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন সংস্থা (ইফাদ), ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘের সদস্য প্রায় সব দেশের তথ্য এ প্রতিবেদনে আছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে মোট জনসংখ্যার হারে স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ্যের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে নেপাল, তারপরই পাকিস্তানের অবস্থান। ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা ভালো। ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা ও ভুটান।
বাংলাদেশে একজন মানুষের দৈনিক স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য খরচ পড়ে প্রায় ২৭৬ টাকা। জাতিসংঘের পাঁচটি সংস্থার ওই প্রতিবেদনে দেশে খাদ্য অনিশ্চয়তায় থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৪-১৬ সময়কালে তীব্র থেকে মাঝারি ধরনের খাদ্য অনিশ্চয়তায় ছিল ৫ কোটি ৪ লাখ মানুষ। তিন বছর পর ২০১৯-২১ সময়কালে একই ধরনের খাদ্য অনিশ্চয়তায় ছিল ৫ কোটি ২৩ লাখ মানুষ। অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার ৩২% এ অনিশ্চয়তায় ছিল।
এ হিসাবে ৬৮% মানুষের খাদ্য বিষয়ে অনিশ্চয়তা নেই। তবে তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারে না। পাঁচটি সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালে স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য একজন মানুষের দৈনিক প্রয়োজন হতো ২৭২ টাকা ১৬ পয়সা।
ওই সময় দেশের ১১ কোটি ৯৮ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ্য ছিল না। ২০২০ সালে দৈনিক স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য খরচ বেড়ে হয় ২৭৫ টাকা ৭৬ পয়সা। কিন্তু দেশের ১২ কোটি ১১ লাখ মানুষের দৈনিক ওই পরিমাণ টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই। এই সামর্থ্যহীন মানুষ মোট জনসংখ্যার ৭৩.৫%।
খাদ্য অনিশ্চয়তায় থাকা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে না পারার প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যে, বিশেষ করে পুষ্টি পরিস্থিতির ওপর। দেশের ১১.৪% মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। দেড় দশক আগে এ হার ছিল ১৪.২%।
প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১০% শিশু কৃশকায় অর্থাৎ এরা তীব্র অপুষ্টির শিকার। পাশাপাশি একই বয়সী ৩০% শিশু খর্বকায়, অর্থাৎ বয়সের তুলনায় এদের উচ্চতা কম। অন্যদিকে ২% এর বেশি শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। বিভিন্ন সময়ের শিশু পুষ্টির যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কৃশকায় ও খর্বকায় শিশুর হার দিন দিন কমছে, তবে অস্বাভাবিক বেশি ওজনের শিশুর হার বাড়ছে।
বয়স্ক মানুষের মধ্যেও বেশি ওজনের প্রবণতা বাড়ছে। ২০১২ সালে অস্বাভাবিক ওজনের মানুষ ছিল মোট জনসংখ্যার ২.৮%। ২০১৬ সালে তা বেড়ে ৩.৬% এ দাঁড়ায়।
নারীদের পুষ্টি পরিস্থিতির অবনতির কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০১২ সালে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ৩৬% মধ্যে রক্তস্বল্পতা ছিল। ক্রমে এ হার কমে আসার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ২০১৯ সালে একই বয়সী নারীদের ৩৭% এর এই সমস্যা ছিল।
জন্মের পর শুধু মায়ের দুধ খেলে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ২০১২ সালে জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের দুধ খাওয়া শিশুর সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ। ২০২০ সালে সেই সংখ্যা কমে হয় ১৮ লাখ। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে দেখা গেছে।
বৈশ্বিক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপদ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার পাওয়া প্রত্যেক মানুষের অধিকার। স্বাস্থ্যকর খাবার ও টেকসই কৃষি–খাদ্যব্যবস্থায় বিনিয়োগ করার অর্থ আগামী প্রজন্মের জন্য বিনিয়োগ করা। এ কাজে জাতিসংঘের এ পাঁচ সংস্থা সরকারগুলোকে সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।