নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। সংকট এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, এর জেরে সৃষ্ট গণআন্দোলনে দেশটির ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ না করেই বিদেশে পালিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এখনও বিক্ষোভকারীদের দখলে।
অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় জর্জরিত দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটির বর্তমান এই অবস্থার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মূলত শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে অশান্তি সৃষ্টির জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে সেখান থেকে খাদ্যপণ্য সরবরাহ বন্ধের কারণে শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে অশান্তি সৃষ্টির জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনে আক্রমণে রাশিয়া যে প্রধান কৌশলগুলো ব্যবহার করেছে তার মধ্যে একটি হলো দেশটিতে ‘অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টি করা। তার অভিযোগ, (ইউক্রেন থেকে) সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় ব্যাঘাতের কারণে বেশ কয়েকটি দেশ খাদ্য ও জ্বালানির ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে এবং এতে করে রাশিয়ার এজেন্ডাই উপকৃত হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে এশিয়ান লিডারশিপ কনফারেন্সে বক্তৃতার সময় শ্রীলঙ্কার সংকট তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে একটি সামাজিক বিস্ফোরণ ঘটবে। এটা কীভাবে শেষ হবে তা এখন কেউ জানে না।’
এএনআই বলছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে বিশ্বের ৯৪টি দেশের আনুমানিক ১৬০ কোটি মানুষ অর্থ, খাদ্য, বা জ্বালানি সংকটের মতো অন্তত একটি সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। আর সরাসারি প্রভাব পড়েছে এমন দেশগুলোর প্রায় ১২০ কোটি মানুষ মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না।
ফলে নজিরবিহীন এই সংকটের জন্য রাজাপাকসে পরিবারসহ দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারকে দায়ী করে শ্রীলঙ্কায় গণআন্দোলন প্রকট আকার ধারণ করেছে। আন্দোলনের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আগেই পদত্যাগ করেছিলেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এমনকি রাজাপাকসে পরিবারের অন্য সদস্যরাও সরকার থেকে সরে এসেছিলেন।
বাকি ছিলেন কেবল দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। বুধবার তার পদত্যাগের কথা থাকলেও দিনের আলো ফোটার আগেই সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পাড়ি জমান তিনি। যদিও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি তিনি।
তবে গোতাবায়ার পলায়নের কয়েক ঘণ্টা পরই শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। এরপরই শ্রীলঙ্কাজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন তিনি। মূলত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদমাধ্যম বলছে, শ্রীলঙ্কায় পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে আগামী ২০ জুলাই। রাজাপাকসের পলায়নের পর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত ওই পদে অস্থায়ী ভাবে দায়িত্বপালন করবেন রনিল বিক্রমাসিংহে।