শ্রীলঙ্কায় সরকার পতনের দাবিতে গত কয়েক মাস ধরেই বিক্ষোভ চলছে। দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তবে বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ তাতে কমছে না। এবার তাদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের দেশত্যাগের পর বুধবার (১৩ জুলাই) পুলিশের বাধা সত্বেও বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করে সেটির দখল নিয়ে নেয়। এ সময় তাদের হাতে ছিল শ্রীলঙ্কার জাতীয় পতাকা। তাদের দাবি, রাজাপাকসের সঙ্গে সঙ্গে রনিল বিক্রমাসিংহেকেও পদত্যাগ করতে হবে।
তবে বিক্ষোভকারীদের আসার আগেই নিরাপদে সেখান থেকে বেরিয়ে যান বিক্রমাসিংহে। টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, “শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ‘আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করার’ নির্দেশ দিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ফ্যাসিবাদীদের ক্ষমতা দখল করতে দিতে পারি না। আমাদের অবশ্যই গণতন্ত্রের জন্য এই ফ্যাসিবাদী হুমকির অবসান ঘটাতে হবে।”
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আগত বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া টিয়ারশেলে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মে মাসে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মাহিন্দা রাজাপাকসে সরে দাঁড়ালে ষষ্ঠবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপ পালিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেশে জরুরি অবস্থা ও পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে কারফিউ জারির ঘোষণা দেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী, দেশের প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৩০ দিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন। তবে রনিল বিক্রমাসিংহেকে শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদেও দেখতে আগ্রহী নন বিক্ষোভকারীরা।
এর আগে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একটি সামরিক বিমানে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপ পালিয়ে যান বলে জানান দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তারা। ৭৩ বছর বয়সী গোটাবায়া, তার স্ত্রী ও এক দেহরক্ষীসহ চার যাত্রী নিয়ে সামরিক বিমান অ্যান্তোনভ-৩২ মঙ্গলবার মধ্যরাতে বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালদ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করে।
বুধবার স্থানীয় সময় ভোর রাত ৩টায় গোটাবায়া মালদ্বীপের রাজধানী মালে পৌঁছান। মূলত শ্রীলঙ্কার কোনো আইনেই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের বিধান নেই। তবে পদত্যাগের পর গ্রেপ্তার হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবারের মধ্যেই গোতাবায়ার পদত্যাগের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি তিনি।