এ বছর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ছাত্রলীগের হাতে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। তবে কোথায় ভর্তি হবেন, সে বিষয়ে শুরু থেকেই কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন ফাইয়াজ। যদিও বুয়েটে ভর্তি হতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত বুয়েটে ভর্তি হওয়ারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আবরার ফাইয়াজ। শুধু তাই না, আবরারের বড় ভাই বুয়েটের শিক্ষার্থী থাকার সময়ে যে হলে ছিলেন, সেই শেরেবাংলা হলেই থাকার ব্যাপারেও অনাগ্রহ নেই তার। অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই।
বুধবার (১৩ জুলাই) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা জানান আবরার ফাইয়াজ।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফাইয়াজ লিখেছেন, “পরিবারের সবার মতামতের ভিত্তিতে আমি বুয়েটের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু আপনারা অনেকেই নিজেদের মতামত জানিয়েছিলেন তাই এই ব্যাপারটা আপনাদের জানানো।
পরিবারের কেউই তার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেননি জানিয়ে আবরার বলেন, সত্যি বলতে বাসার কেউই সরাসরি আইইউটি বা বুয়েট এমন কিছু বলেনি। প্রায় সবাইই বলেছে যেখানে আমার ইচ্ছে সেখানেই ভর্তি হতে। তাই বলা যায়, আমার ইচ্ছে অনুসারেই এখানে (বুয়েট) ভর্তি হতে চাওয়া।
বুয়েটে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে আবরার বলেন, সবাই প্রথম থেকেই যে বিষয় নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, সেটি নিরাপত্তার ব্যাপারে। এটা আসলে আমি কখনোই ভাবিনি। আবার ভাইয়ার কথা মনে পড়বে, এ কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ব, এ রকম কিছু নিয়েও চিন্তিত ছিলাম না আসলে। আমার ইচ্ছে আছে ভাইয়ার শেরেবাংলা হলেও সিট পেলে থাকব।
পরামর্শ দেওয়া এবং পাশে থাকা ব্যক্তিদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আবরার বলেন, আপনারা অনেকেই আমাকে নিজের ছোট ভাই ভেবে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। অনেকেই অনেক কিছু বুঝানোর জন্য নিজেদের মূল্যবান সময় ব্যয় করেছেন। আমি সত্যিই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
শিক্ষকদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু মানুষের ধন্যবাদ একটু বেশিই প্রাপ্য। তারা হলেন আমার শিক্ষকরা। সত্যি বলতে গত প্রায় দুই বছর ৯ মাসে আমি যেখানেই একদিন হলেও পড়েছি প্রত্যেকেই নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে আমাকে মানসিকভাবে সমর্থন দিয়ে গেছেন। আমি আসলে অবাক হয়ে গেছি বেশ কিছু ক্ষেত্রে যে আমাদের প্রথমবার দেখা হয়েছে কিন্তু তাদের ব্যবহারে মনে হয়েছে যেন আমরা কত পরিচিত। আর পড়ালেখার বিষয়ে তাদের অবদান তো ছিলই। এমনকি বিষয়ের পছন্দের ক্ষেত্রেও তারা অনেক সাহায্য করেছেন। আল্লাহ তাদের প্রত্যেককেই ভালো, সুস্থ রাখুক এটাই চাই সবসময়।
সবশেষে নিজের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন আবরার ফাইয়াজ।
প্রসঙ্গত, আবরার ফাইয়াজ বর্তমানে গাজীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। বুয়েটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৪৫০তম স্থান অর্জন করে যন্ত্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান আবরার ফাইয়াজ। পরবর্তীতে ঢাবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের “ক” ইউনিটের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় ৪৪তম হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান, ফার্মেসি, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস ও ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদভুক্ত “ক” ইউনিটেও ভর্তির সুযোগ পান ফাইয়াজ।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের (ইইই) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় সে বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সেখানে বলা হয়, শিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
গত বছরের ২১ জানুয়ারি অভিযোগপত্রটি আমলে নেন আদালত। পরে ২ সেপ্টেম্বর ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত তিন আসামি পলাতক।