ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দনেতস্ক শহরের চাসিভ ইয়ার শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে রুশ বাহিনীর রকেট হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ভবনের ধ্বংস্তুপে ২০ জনেরও বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছেন ধারণা ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগের কর্মকর্তাদের।
রোববার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত হওয়া এই দিকে এই হামলা হয়েছে বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন দনেতস্কের গভর্নর পাভলো কিলিলেনকো। রয়টার্সকে তিনি বলেন, রকেট হামলায় ৫ তলা ওই ভবনটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। চাসিভ ইয়ারের যে এলাকায় ভবনটি ছিল সেখানে এখন পাহাড় পরিমাণ ধ্বংসস্তুপ।
‘ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকে পড়াদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে,’ রয়টার্সকে বলেন কিরিলেনকো।
হামলার নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালাচ্ছে। চাসিভ ইয়ারে হামলার পর এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘পরিকল্পিত ভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। রুশ বাহিনী যদি দাবি করে যে ভুলবশত বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা হয়েছে, কিংবা সেটি যে আবাসিক ভবন তা তারা জানতো না— কেউ তা বিশ্বাস করবে না।’
‘রাশিয়ার প্রতিটি খুনির জন্য শাস্তি অনিবার্য এবং তাদেরকে তা ভোগ করতে হবে।’
ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা এখনও চলছে। ওই ভবনের বাসিন্দা ল্যুদমিলা নামের এক নারী হামলা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘প্রথম রকেটটি যখন আঘাত হানে তখনই পড়িমরি করে পরিবারের সদস্যদের সহ ভবনের বেসমেন্টে আশ্রয় নেই। সারা রাত সেখানে ঠায় বসে থাকার পর সকালে বেসমেন্ট থেকে বাইরে এসে দেখি, আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।’
আমাদের মতো আরও অনেকেই বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন। যারা তাড়াতাড়ি আসতে পারেননি, তারাই ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছেন।’
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই প্রদেশ দনেতস্ক ও লুহানস্কে রুশভাষী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বেশ তৎপর। এই দু’টি প্রদেশকে ইউক্রেনের সীমানা থেকে বের করে নেওয়া রুশ বাহিনীর চলমান অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষ্য।
মূলত ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণার দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
বুধবার ১৪২তম দিনে গড়িয়েছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অভিযান। এই চার মাস সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্ক, ইউক্রেনের দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম, মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে।