গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া৷ এরপর দেশটির একের পর এক শহর, এলাকা ধ্বংসলীলায় পরিণত।
সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ ফিরলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না। ক্ষণেক্ষণে মর্টারশেল, বোমা বিস্ফোরণের শব্দ।
এদিকে ভেঙে গেছে ব্রিজ, কালভার্ট, ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থাপনা। দোনবাস,দোনেৎস্ক, মারিওপোল, জাপোরিজঝিয়ার মত শহরগুলোতে মৌলিক চাহিদা পূরণই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরই মধ্যে ইউক্রেনে পালিত হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা।
যদিও ইউক্রেনে মুসলিমরা সংখ্যালঘু। ২০১৬ সালের জরিপমতে, দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যা মাত্র ০.৯ শতাংশ। এসব মুসলমানদের বেশিরভাগই ক্রিমিয়ায় থাকেন। রাজধানী কিয়েভেও থাকেন।
তবে দেশটিতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী মুসলিমরা রয়েছেন।
কেমন ঈদ উদযাপন করলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে অবস্থিত বাংলাদেশি অভিবাসীরা?
এ বিষয়ে তাদের একবাক্যে উত্তর, ‘নিরানন্দ এক ঈদ’।
গত দুই যুগ ধরে ইউক্রেনের খারকিভের বাসিন্দা খালেদা নাসরিন। পেশায় চিকিৎসক এই বাংলাদেশি শনিবার ঈদ উদযাপনে ট্রেনে যাচ্ছেন ডেনমার্কে।
তার মতে, ইউক্রেনে এমন ঈদ কখনোই আসেনি। খালেদা নাসরিনের জন্ম বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলায়।
বাংলাদেশের এক গণমাধ্যমকে খালেদা জানান, এবারের ঈদের দিনে আগের বছরগুলোর ঈদের স্মৃতি বেশ মনে পড়ছে।খারকিভে কত আনন্দেই না কাটতো ঈদের দিন। সব মুসলিমরা পবিত্র এই দিনে এক হতেন। আনন্দ করতেন। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারির পর রাশিয়ার আগ্রাসনে সব শেষ। পরিচিত কেউ নেই। তিনিও চলে এসেছেন জার্মানির কোলেন শহরে, যেখানে পরিচিত কেউ নেই। তাই ডেনমার্কে যাচ্ছেন এক আত্মীয়ের বাসায় ঈদ করতে।
খালেদা বলেন, খারকিভে বিগত ঈদগুলোতে টেবিল ভরপুর করে ফেলেতেন নানা খাবারে। বাঙালি খাবার পায়েস, সেমাই রান্না করতেন। নাশতা তৈরি করে স্বামীকে নিয়ে চলে যেতেন কোরবানির স্থানে। খারকিভে সাধারণত ছাগল কোরবানি হতো। মাংস বাসায় নিয়ে আসতেন। শুরু হতো মাংস রান্না। এরপর এক এক করে আসতে শুরু করতেন অতিথিরা। দিনভর বাংলাদেশিরা আসতেন। আর এবার ডাল-ভাতই খেতে পারছেন না তারা।
খালেদা বলেন, ‘এক তীব্র মনোকষ্ট আমাদের পুরো পরিবারকে গ্রাস করেছে। এ থেকে বের হতে পারছি না। কবে এ থেকে মুক্তি পাব, তা–ও জানি না।’
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানে এবারের ঈদ অনেক বেদনার। ঈদের দিনে কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজে যেতেন। এবার কিয়েভের ত্রয়সিনা এলাকার ছোট মসজিদেই নামাজ পড়েছেন। সেখানে ৬০ জন মুসল্লি পেয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৫ জন। ব্যাপারটি মানতে কষ্ট হচ্ছে হাবিবুরের
গাজীপুরে জন্ম নেওয়া হাবিবুর জানান, অন্য বছরগুলোয় ১০০ জনের মতো বাংলাদেশিকে পেতাম নামাজে। দিনভর চলত আড্ডা, খাওয়াদাওয়া, আনন্দ। ঈদের পশু কুরবানির জন্য কিয়েভের ভাসিলকোভ এলাকায় চলে যেতাম সবাই। সেখানে গরু ও ছাগল কুরবানি হতো। কিন্তু এবার সবে মাত্র ৫ জন। ভাসিলকোভ এলাকায় যুদ্ধাবস্থা চলছে। সেখানে সাধারণ নাগরিকদের যেতে সমস্যা হচ্ছে। পরিচিত বাঙালিরা কোথায় আছেন কেমন আছেন জানি না।’
রাজধানী কিয়েভের নিভকি এলাকার বাসিন্দা চুয়াডাঙ্গার হাসিনুল জানান, এবারের ঈদে আনন্দের চেয়ে ভয় বেশি কাজ করছে। কখন মাথার উপর মিসাইল এসে পড়ে সেই শঙ্কায় কাটে দিন। মরা কিছু করার থাকবে না। পরিচিত অনেকেই কিয়েভ ছেড়ে চলে গেছেন। আজ ঈদের জামাতে তাদের অনেককেই দেখিনি। তাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে কি না, তাও জানি না। এমন শঙ্কময়, হতাশা আর নিরানন্দ ঈদ এবার।