শুনে গা ঘিনঘিন করলেও বিশ্বে এই কফিরই দাম সবচেয়ে বেশি। যা এখন ভারতেও তৈরি হচ্ছে এবং বিক্রি হচ্ছে বিপুল দামে।
ভারতে চায়ের কদর বরাবরই কফির চেয়ে বেশি। তাই কফির বাজার ধরতে ইংরেজ আমলে ইংরেজিরা প্রথম চালু করেছিল কফি বোর্ড। বিভিন্ন অঞ্চলে খুলেছিল কফি হাউস। এখন অবশ্য অনেকেই চায়ের পাশাপাশি কফির স্বাদও যথেষ্ট পছন্দ করেন। কফির কদর ভারতে অতটা না থাকলেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে ঠান্ডা প্রধান দেশে কিন্তু কফির চাহিদাই বেশি। বিভিন্ন স্বাদের যেমন কফি রয়েছে, রয়েছে বিভিন্ন দামের কফিও। ভারতের দক্ষিণীরা আবার সংশোধিত কফির চেয়ে র কফিই পছন্দ করেন বেশি। যার স্বাদ বেশ তিতকুটে এবং গন্ধটাও জংলি জংলি।
তবে এখন পর্যন্ত এক বিশেষ প্রজাতির বেড়ালের মল থেকে তৈরি হওয়া কফির দামই সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই কফির ১ কেজির দাম পড়ে যায় প্রায় ২৫ হাজার টাকা।
এক ধরনের বেড়াল রয়েছে যাদের বলা হয় সিভেট ক্যাট। এরা সে সব জায়গায় বেশি থাকে, যেখানে কফির চাষ হয়। কফির ফল পেকে গেলে সেই পাকা শাঁস খেতে এরা খুব পছন্দ করে।
এ জন্য তারা কফি বাগানের আশপাশেই ঘুরঘুর করে। এই সিভেট বেড়াল কফি খাওয়ার পর তা তাদের পাকস্থলী থেকে নির্গত পরিপাক রসের সঙ্গে মিশে যায়। তার পর তার বর্জ্য অংশ মলত্যাগের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসে।
সিভেট ক্যাটের সেই মলই সংগ্রহ করে তা বিশেষ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। যা থেকে অবশেষে তৈরি হয় কফি। এই কফির দাম ও চাহিদা, দুইই বিশ্বে তুঙ্গে।
বিদেশে ই সিভেট ক্যাট খাঁচায় করে পোষা হয়। তারপর তাদের যতটা পারা যায় কফির ফল খাওয়ানো হয়। কফির ফল খাওয়ার পর তারা যে মলত্যাগ করে তা সংগ্রহ করে কফি তৈরি করা হয়। কিছু দিন হল ভারতের কর্ণাটকেও এই সিভেট বেড়ালের মল থেকে কফি তৈরি শুরু হয়েছে।
ভারতে অবশ্য বেড়ালগুলিকে খাঁচায় ভরে পোষার কোনও রেওয়াজ নেই। তারা কফির বাগানেই ছাড়া থাকে। কফির ফল খাওয়ার পর তারা কোথায় কোথায় মলত্যাগ করতে পারে তা কফি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রশিক্ষিত কর্মীদের খুব ভাল করেই জানা রয়েছে। সেখান থেকে তারা মল সংগ্রহ করে এবং সেই মল থেকেই তৈরি হয় এই বহুমূল্য কফি।
তবে হাতির মল থেকে তৈরি হওয়া কফির দামই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি। যে কফির এক কাপেরই দাম পড়ে যায় প্রায় ৩৫০০ টাকা! হ্যাঁ, এই কফিরই এক কিলোর দাম ১,৪০,০০০ টাকা। কিন্তু হাতির মলের কি এত দাম? আসলে এই কফির দাম এত বেশি হয় এর প্রক্রিয়ার কারণেই।
এই কফির বিন প্রথমে হাতে হাতে তোলা হয়। তার পরে তা রোদে শুকিয়ে ভাত, কলা এবং ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয় হাতির খাবার।
সেই খাবার খাওয়ার ১৫-১৭ ঘণ্টা পরে মলত্যাগ করে হাতি। সেই মল থেকে ফের হাতে হাতে বাছাই করা হয় কফির বিন। ভাল ভাবে তা পরিষ্কার করা হয়। এর পরে সেই কফির যে গন্ধ এবং স্বাদ হয়, তা আর অন্য কোনও কফি থেকে পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন অনেকে।
এই কফি তৈরি হয় মূলত তাইল্যান্ডের একটি ছোট্ট অঞ্চল— সুরিনে। বিশ্বের নানা প্রান্তে সেই কফি পৌঁছে দেয় ‘ব্ল্যাক আইভরি কফি’ নামক এক সংস্থা।
প্রথম দিকে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই প্রক্রিয়াকরণের জন্য কি হাতির শরীরে কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে? তখন সেই সংস্থা থেকে বলা হয়, ভাত ও ফলের সঙ্গে মিশিয়ে কফি খাওয়ালে তা হাতির স্বাস্থ্যের কোনও ক্ষতি করে না।
অনেকেই হয়তো বিড়ালের মল কিংবা হাতির মল থেকে বানানো কফির কথা শুনলে আর খেতে চাইবেন না। কিন্তু ওই সংস্থার দাবি, এই কফির স্বাদ এবং গন্ধ এমনই যে, একবার পান করলেই এর মাদকতা থেকে বেরোনো মুশকিল।