অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন বর্ষীয়ান চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার। রবিবার পরিস্থিতির আচমকা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ভেন্টিলেশনে রাখতে হয় তাঁকে। কিন্তু চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ৯১ বছর বয়সে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন।
আজ সোমবার সকাল ১১ টা বেজে ১৭ মিনিটে এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
জানা গেছে, গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। পাশাপাশি ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও ছিল তাঁর। গত ১৪ জুন কিডনির সমস্যা সহ বয়সজনিত একাধিক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তরুণ মজুমদার। তাঁকে উডবার্ন ওয়ার্ড থেকে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। এরপরে তাঁকে রবিবার ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। সেখানেই তিনি আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯৩১ সালে অধুনা বাংলাদেশের বগুড়া জেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ৷ পড়াশোনা শেষ করে সিনেমার বিজ্ঞাপনের কাজ করলেও নজর ছিল পরিচালনায়। তিনি শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিলে ‘যাত্রিক’ দল গঠন করেছিলেন। ১৯৫৯ সালে দলের প্রথম পরিচালিত ছবি ছিল চাওয়া পাওয়া। ১৯৬২ সালে ওই দলের ‘কাঁচের স্বর্গ’ ছবি পেয়েছিল জাতীয় পুরস্কার। পরে অবশ্য ওই দল থেকে বেরিয়ে আসেন পরিচালক তরুণ মজুমদার। এরপরে তৈরি করেন একাধিক হিট ছবি। তার নির্মিত জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে পলাতক, নিমন্ত্রণ, সংসার সীমান্তে, গণদেবতা, বালিকা বধূ, কুহেলী, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ফুলেশ্বরী, দাদার কীর্তি, ভালোবাসা ভালোবাসা, পরশমণি, আলো এবং সাম্প্রতিককালে ভালোবাসার বাড়ি ৷ ‘ভালোবাসার বাড়ি’তে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন বাংলা টেলিভিশনের আজকের জনপ্রিয় অভিনেতা প্রতীক সেন।
প্রয়াত তরুণ মজুমদার পদ্মশ্রীর পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তরুণ মজুমদার। এছাড়াও ৪ টি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। রয়েছে ৭টি বিএফজেএ পুরস্কার, ৫টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ৷ তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বাম যুবনেতা শতরূপ ঘোষ। কিংবদন্তির প্রয়াণে শোকাহত টলিউড ৷ শোকবার্তা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ হল চলচ্চিত্র জগতের দীর্ঘ একটা অধ্যায়৷ বাংলা সংস্কৃতি জগৎ হারাল আরও এক কিংবদন্তিকে ৷ তবে সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে তিনি বরাবর থাকবেন চিরতরুণ৷