ইউরোপের অনেক শহরে একাধিকবার যাবার সুযোগ হয়েছে। কখনও কাজে গিয়েছি, কখনও ঘুরতে যাওয়া হয়েছে। ইতালির মিলান এরকম এক শহর আমাদের কাছে। ইতালির মিলানে বাংলাদেশি অ্যাম্বেসিতে একবার লাইনে দাঁড়ালাম পাসপোর্ট রিনিউ করতে। সহধর্মিণীকে একটি চেয়ারে বসিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ইতালিতে নামকরা শহরগুলোতে যে সংখ্যক বাংলাদেশি দেখেছি, আশা করেছিলাম ভালই লাইন হবে এবং তাই সত্যি হলো। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ দেখি দুজন দেশি মানুষের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেছে। একজন নাকি আগে থেকেই লাইনে ছিলেন। একটু কাজের জন্য বাইরে যাওয়াতে, আরেকজন সেখানে দাঁড়িয়ে গেছেন। শুরু হয়ে গেলো তুমুল বাকবিতণ্ডা। একজন আরেকজনকে তুই করে বলা শুরু করলো। একজন বললো, জানিস আমার দাদা অমুক গ্রামের মাতবর। আরেকজন বললো, আমার বাবা অমুক জায়গার চেয়ারম্যান। সে এক ভয়ংকর যুদ্ধ। অবশেষে ভিতর থেকে অফিসার এসে তাঁদের থামালো, এর মধ্যে একজন ইতালিয়ানও আছেন। কাজ শেষ করে বাইরে এসেও দেখি উনাদের ঝগড়া শেষ হয়নি। প্রবাসের শুরুর দিকের এরকম ঘটনায় আমরা খুবই অবাক হলাম। দেখি বাইরে এসেও উনাদের বাপ-দাদারা কে কি করতেন তা নিয়ে কথা হচ্ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম, জানতে ইচ্ছা হচ্ছিল, উনারা কি করেন কিন্তু কেউ নিজেদের বিষয়ে কিছু বললো না। এরপরেও প্রবাস জীবনে অনেকের অর্থ, বিভিন্ন বাহ্যিক বিষয়ের অহংকার দেখেছি। অনেকেই ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং ভাবখানা এমন থাকে যে বাকিরা সবাই তাঁদের অধীনে চলবে। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় একটি কথা লেখা থাকে, ব্যবহারে বংশের পরিচয়। বেশি লেখা থাকে দেখেই হয়তো আমরা এর গুরুত্ব কখনও বুঝিনি, হয়তো বুঝবোও না। কথায় আছে, যার নয়ে হয়না, তাঁর নব্বইতেও হয়না। আমার বংশে কে কী ছিল বা আছে, এটা নিয়ে এত না ভেবে, আমি কে এবং কী, আমার ব্যবহার কেমন? এই প্রশ্নগুলো নিজেকে বেশি করে করা উচিত।
শেষ করছি একটি ছড়া দিয়ে:
আমার ভাই অর্থ অনেক
সালাম ঠুকে সবাই
সবকিছু কিনে নিবো
আমার অনেক বড়াই।
সম্মানবোধ শুধু আমার
বাকিরা সব তুচ্ছ
ভাত ছিটালে আসবে যে কাক
হয়ে যাবে পুচ্ছ।
কাকগুলো সব উড়ে যায়
থাকবে শুধু ভাত
পৃথিবীটা শূন্য খুবই
আজব ধারাপাত।