প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতুর ৪২টি পিলার একটি সাহসী বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে এই সেতুর নির্মাণকাজ দুই বছর পিছিয়েছে। বুধবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে তিনি এ কথা বলেন।
২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী দেশের দীর্ঘতম, বহুল কাঙ্ক্ষিত সেতুটির উদ্বোধন করেন। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক প্রত্যাখ্যান করার পর নিজস্ব অর্থায়নে এই মেগা প্রকল্প নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ।
সিরাজগঞ্জ জেলার আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য মেরিনা জাহানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘‘পদ্মা সেতুর ৪২টি পিলার একটি সাহসী বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহস, আমাদের সহনশীলতা এবং আমাদের প্রতিশ্রুতি এই পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িত। সেতুটি নির্মাণে আমরা অনড় ছিলাম।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘অবশেষে আমরা অন্ধকার ভেদ করে আলো ফুটতে দেখলাম। পদ্মার ওপরে লাল, নীল, সবুজ ও সোনালি আলো জ্বলছে।’’
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘‘পদ্মা সেতু নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হলে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা এবং আইডিবি প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজ নির্মাণ তদারকিতে পরামর্শক সংস্থা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে ঋণ চুক্তি স্থগিত করে।’’
প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, ‘‘২০১৭ সালে কানাডার টরন্টোতে একটি আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে, বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে ফিরে আসার ঘোষণা দেয়।’’
তবে দেশ ও জনগণের স্বার্থে আমরা বিশ্বব্যাংকের ঋণ না নিয়ে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের উদ্বোধন আজ স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা, তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সেতুটি দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্রকে চূর্ণ করে দাঁড়িয়েছে, সব চ্যালেঞ্জকে জয় করেছে এবং হার না মানার দৃঢ় মনোবল দেখিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সেতুটি উদ্বোধনের পর লাখ লাখ বাংলাদেশির সঙ্গে তিনিও খুশি, গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত।
তিনি আবারও বলেন, ‘‘এই সেতুটি শুধু ইট, সিমেন্ট, ইস্পাত, লোহা ও কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়। এটি আমাদের গর্ব, আমাদের ক্ষমতা ও মর্যাদার প্রতীক। এই সেতুটি বাংলাদেশের জনগণের।’’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন দেশের দুই অঞ্চলকে একীভূত করে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক ও সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। বহুমুখী সেতুটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে রেল যোগাযোগ স্থাপন, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন, কৃষি, ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেকারত্ব কমানোর পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।