ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ভারত আজ কোন পথে? বাবরি মসজিদ ধ্বংস-পরবর্তী রাজনীতিতে বিজেপি যেমন সাফল্যের ফসল ঘরে তুলেছে, তেমনই কংগ্রেস-সহ স্বঘোষিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিও এর ফায়দা তুলেছে৷ তাই আজ বুলডোজার চলছে দেশে, তৈরি হয়েছে নাগরিকত্বের ধর্মীয় ভেদাভেদ৷ এর বিরুদ্ধে কোনও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না বিরোধী শিবির৷
দেশভাগ এই উপমহাদেশের এক মর্মান্তিক ট্রাজেডি৷ ভারত ভেঙে পাকিস্তান তৈরির সময় রাজনৈতিক নেতারা ভেবেছিলেন, কিংবা আরও পরিষ্কার করে বললে জনগণকে বুঝিয়েছিলেন, বিভাজনই সকল সমস্যার সমাধান৷ কিন্তু তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে৷ ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতও বারবার হোঁচট খেয়েছে৷ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়৷ সেইদিন শুধু ইট, পাথরের ইমারত ভাঙা হয়নি, চুরমার করে দেওয়া হয়েছে এ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সাংবিধানিক মূল্যবোধ ও সহিষ্ণুতার শিক্ষাকে। তারপর ৩০ বছর পেরিয়েছে৷ এই দেশ একটু একটু করে হিন্দু রাষ্ট্র হওয়ার পথে এগিয়েছে৷ বাবরির জায়গায় তৈরি হচ্ছে রামমন্দির৷ ঘটা করে তার সূচনা করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ বারাণসীর জ্ঞানভাপী, মথুরার শাহি ঈদগাহ মসজিদ নিয়েও বিতর্ক চলছে৷ সেগুলির অবস্থাও বাবরি মসজিদের মতো হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই৷ বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দেশে যে রাজনীতি শুরু হয়েছিল, তা আজ বহুদূর বিস্তৃত৷ উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত প্রভৃতি রাজ্যে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মুসলমানদের বাড়িঘর৷ তিন দশক আগে যে কাজটি উন্মত্ত করসেবকরা করেছিল, এখন তা করছে প্রশাসনের বুলডোজার৷ একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে বুলডোজার চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ যে ট্রাডিশন বাবরি ধ্বংসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল, তাই যেন সমানে চলেছে৷ এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বাবরি মসজিদের ঘটনাটি এ দেশে এক বাঁকবদলকারী ঘটনা৷ অভিজ্ঞ সাংবাদিক অমল সরকার সেই ঘটনার পর ভারতবর্ষের রাজনীতি, সমাজ নিয়ে এক অসাধারণ বিশ্লেষণ করেছেন ‘বাবরি ধ্বংসের তিন দশকঃ ষড়যন্ত্র সুবিধাবাদের আখ্যান’ গ্রন্থে (প্রকাশক-উদার আকাশ)৷ লেখক বিশ্লেষণী সাংবাদিকের দৃষ্টি দিয়ে গত তিন দশকে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ঘটনাকে নিজের মতো করে দেখার, বোঝার, গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর উপলব্ধি, ‘বাবরি মসজিদ ধ্বংস এ দেশের সমাজ ও রাজনীতির ডিএনএ-তে বদল এনে দিয়েছে। এক কথায় তা হল, দেশপ্রেমকে ছাপিয়ে গিয়েছে হিন্দুত্বে আস্থার প্রশ্ন। কেউ হিন্দুত্ববাদী মানেই দেশপ্রেমিক, এমন ধারণা এখন রাষ্ট্র স্বীকৃত।’ বাবরি মসজিদ কেন, কীভাবে, কাদের প্ররোচনায়, কাদের উদাসীনতায়, কাদের লোকদেখানো ধর্মনিরপেক্ষতায় ধ্বংস হয়েছিল, তার ব্যবচ্ছেদ করেছেন তিনি৷ কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন রাজীব গান্ধি, কল্যাণ সিং, আদবানি, অটলবিহারী বাজপেয়ীদের৷ এই মসজিদটি সাড়ে চারশো বছরের বেশি সময় ধরে অযোধ্যার ভূমিতে লোকচক্ষুর সামনে জলজ্যান্ত দাঁড়িয়েছিল৷ ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট এর জমি মালিকানার রায় দিতে গিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসে আস্থা রাখে বাস্তবকে উপেক্ষা করে৷ এমন বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছেন লেখক৷ এই বই শুধু বাবরির ইতিহাস নয়, মসজিদ ধ্বংস-পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক দলিল হয়ে উঠেছে৷
বাবরি মসজিদ ধ্বংস এমন একটি ঘটনা যার দায় শুধু বিজেপি বা সংঘ পরিবারের উপর চাপিয়ে দিতে রাজি নন এই বইয়ের লেখক৷ এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতিকে তিনি টেনে এনেছেন সামনে৷ সেখানে ‘হিন্দুত্বের’ দৌড়বাজিতে কংগ্রেস, বিজেপি কেউই কম যায় না৷ ‘সেকুলার’ শব্দটির আগে ‘সিউডো’ বিশেষণটির ব্যবহারকে জরুরি করে তোলে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির এই ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি৷ সিনিয়র অ্যাডভোকেট, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সালমান খুরশিদও বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়ে লিখেছেন বিশ্লেষণী গ্রন্থ ‘সানরাইজ ওভার অযোধ্যাঃ নেশনহুড ইন আওয়ার টাইমস’ (প্রকাশক- পেঙ্গুইন)৷ তাঁর বইয়ে আরএসএস-এর ‘হিন্দুত্ব’ ও আইসিসকে এক করেই দেখেছেন বলে বেশ বিতর্ক হয়েছিল৷ সেসব সমালোচনায় না গিয়েই বলা যায়, এই দুটি বইয়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংস-পরবর্তী রাজনীতির গতিপথ বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷ উঠে এসেছে বিস্তৃত প্রেক্ষাপট৷ বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার আগে দেশে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা বিশ্লেষণ না করলে এ ঘটনার ব্যাখ্যা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে৷ তাই যেভাবে আটের দশকের শেষদিকে রামায়ণের বীরগাথাকে জনমনে তুলে ধরা হয়েছিল দূরদর্শনের টিভি সিরিয়ালের মধ্য দিয়ে, সেটার দিকে যেমন আঙুল তুলতে হবে, তেমনই ১৯৮৯-এর লোকসভায় বিজেপির আসন বাড়ল কী করে সেটাও দেখতে হবে৷ রাম একটি পৌরাণিক ধর্মীয় চরিত্র৷ তাঁকে নিয়ে বাবরি পরবর্তী ৩০ বছরের রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে, এটা কীভাবে সম্ভব হল? বিরোধী শিবিরের কী ভূমিকা রয়েছে এতে? অমল সরকার তাঁর বইয়ে লিখছেন,’ লালকৃষ্ণ আদবানি ও তাঁর দল রামকে রাজনীতির ক্ষমতা দখলের বাহন হিসাবে দেখাতে চেয়েছেন৷ নইলে রামায়ণের একটি সংক্ষিপ্ত পর্বে যেখানে রামচন্দ্রকে তীর-ধনুক হাতে তুলে নিতে হয়, সেই রাম কেন বিজেপির আরাধ্য হবে? প্রজাবৎসল রাম নয়, আদবানি, মোদিদের হিন্দুত্বের প্রতীক যুদ্ধরত রাম৷’ অবসরপ্রাপ্ত আইএএস আধিকারিক জহর সরকারও এ বিষয়ে একমত৷ তিনিও একটি জায়গায় বলেছেন, “এ এক ইতিহাসের আজব খেলা যেখানে ‘মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে’—ধ্বংসকারীদের এই স্লোগানকে রায়ের মাধ্যমে পরিপূর্ণ সফল করা হয়েছে৷ ১৯৯২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ২২ বছর উদারনৈতিক সরকার দেশ শাসন করেছে৷ কিন্তু লিবার্যাল-সেকুলার সরকারগুলি এই সমস্যার ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানের কোনও চেষ্টাই করেনি৷ ১৯৮৭-এর জানুয়ারি থেকে ১৯৮৮-এর আগস্ট পর্যন্ত সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে জাতীয় দূরদর্শনে রামায়ণ সিরিয়াল সম্প্রচার করে ধর্মীয় উন্মাদনা জাগিয়ে তোলা হয়েছিল৷ তখন দেশের মসনদে ছিল সেকুলার কংগ্রেস৷ হিন্দুদের ধর্মীয় প্রণোদনা অবশ্যই জাগিয়েছিল এই সিরিয়াল৷ দেশের কোনও স্কলার এ বিষয়ে বলেন না তেমন৷ কিন্তু এই এপিক টিভি সিরিয়ালের সঙ্গে রামমন্দির ইস্যুর একটি সরাসরি যোগাযোগ আছে৷ আদবানি ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা ১৯৮৯ সাল জুড়ে যে ওয়ার ক্রাই জাগিয়ে তুলছিল তার সঙ্গেও এর সম্পর্ক রয়েছে৷” ১৯৮৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি ৮৫টি আসন পায়৷ ১৯৮৪-এর নির্বাচনে যেখানে তাদের আসন ছিল মাত্র দুটি৷ রাজীব গান্ধি বাবরি মসজিদের তালা খুলে দিয়ে কী করছেন তা কি তিনি বুঝতে পারছিলেন না? নাকি শাহ বানো মামলার পর নিজের অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা করছিলেন!
বাবরি মসজিদ নিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী প্রপাগান্ডা ছড়ানো যেমন হয়েছে, তেমনই তোষণের রাজনীতিও হয়েছে৷ সেটাকেই সুবিধাবাদের আখ্যান হিসেবে তুলে ধরেছেন লেখক৷ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, অযোধ্যার ওই বিতর্কিত স্থানের থানাটির নাম ‘রামজন্মভূমি থানা’ কেন? এই প্রশাসনিক স্বীকৃতি দিয়েছিলেন মুলায়ম সিং যাদব৷ তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্ব কালে এমন নামকরণ হয় কোতোয়ালি থানা ভেঙে৷ এখানে তিনিও হিন্দুত্বের তাস খেলতে ছাড়েননি৷ মুলায়মের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সালমান খুরশিদও৷
বাবরি মসজিদ ধ্বংস-পরবর্তী ভারতের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে কীভাবে এর রূপ বদলে গেছে৷ দেশে ক্রমশ কোণঠাসা হয়েছেন মুসলিমরা৷ জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ, সিএএ আইন, রামমন্দির নির্মাণ, তিন তালাক ইত্যাদি ইস্যুগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে৷ মুসলমানরা হয়ে উঠেছে বুলডোজারের মূল নিশানা৷ দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির বদল ঘটানোর চেষ্টা হচ্ছে ফ্যাসিবাদী কায়দায়৷ তাই ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বরের দিনটি সেই হিসেবে এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক টার্নিং পয়েন্ট৷ লেখক অমল সরকার একে চিহ্নিত করেছেন দেশের সাংবিধানিক মূল্যবোধ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ‘সূর্যাস্ত’ হিসেবে৷ ‘সানরাইজ ওভার অযোধ্যাঃ নেশনহুড ইন আওয়ার টাইমস’ গ্রন্থে সালমান খুরশিদ অবশ্য দেখতে পেয়েছেন এক নতুন ‘সূর্যোদয়’৷ শীর্ষ আদালতের রায়ের মাধ্যমে বিশ্বাসের উপর আস্থা রেখে একটি সামাজিক দ্বন্দ্ব ও আইনি বিতর্কের যদি সূর্যাস্ত হয়, তবে আশা ও নয়া ভারতের সূর্যোদয় হল, এটা ভাবতে ক্ষতি কী!
ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান হয়েছিল বটে, খণ্ডিত দেশের বৃহৎ অংশ ভারত শত দাবি সত্ত্বেও ধর্মের মায়াজালে নিজেকে আবদ্ধ করেনি। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি অনেক পরে অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রথম দিন থেকেই আমাদের সংবিধান সেই ভাবনার শরিক। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সংবিধানের সেই মূল ভাবনা এবং স্তম্ভটিকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে। সেদিন থেকেই ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হওয়ার পথে পা বাড়ায়। তিন দশক পর বলাই যায় পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ফারাক শুধু সংবিধানের ঘোষণাপত্রে। বাস্তবে আমরা এখন আর একটা পাকিস্তান। ওরা ঘোষিতভাবেই ইসলামিক রিপাবলিক, আমরা অঘোষিত হিন্দু রিপাবলিক।
বইয়ের লেখক সাংবাদিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনের বাইরে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ঘটনাকে নিজের মতো করে দেখা, বোঝা, গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাবরি ধ্বংস এ দেশের সমাজ ও রাজনীতির ডিএনএ-তে বদল এনে দিয়েছে। এক কথায় তা হল, দেশপ্রেমকে ছাপিয়ে গিয়েছে হিন্দুত্বে আস্থার প্রশ্ন। কেউ হিন্দুত্ববাদী মানেই দেশপ্রেমিক, এমন ধারণা এখন রাষ্ট্র স্বীকৃত।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে ঘৃণার রাজনীতির বিকাশ হয়েছে ভারত জুড়ে ভারতকে ক্ষতবিক্ষত করছে উগ্র হিন্দুত্ববাদের সমর্থকরা। স্যোসাল মিডিয়াতে এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে অখণ্ড দেশবাসীর মানবসত্তা নারী-পুরুষের মধ্যে এবং হিন্দু ও অন্য ধর্মের মানুষের মধ্যে বিভেদের পাঁচিল তুলে বিভাজন তৈরি করে বিপদে চালিত করছে মহান ভারতকেই। বিভাজন মুক্ত করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বিভেদকামী শক্তির পতন সুনিশ্চিত করতে হবে সর্বত্র। ভারতের বৈচিত্র্যময় চরিত্রের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা এমুহূর্তে অন্তত জরুরি কাজ। মানবতা মূল্যবোধ জাগ্রত হলে নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোসের ভারত অক্ষুণ্ন থাকবে। নইলে নিজেদের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়ে দুর্বল হবে দেশ, সেই সুযোগে আগ্রাসন নিয়ে ভারতভূমি বেদখল হচ্ছে তা রোধ করতে না পেরে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভাসানেই বলে দিচ্ছেন পোষাক পরিধান করা মানুষ দেখেই অপরাধী চিহ্নিত করা যায়। ভারত মুক্তির একটাই শর্ত অখণ্ড দেশবাসীর মধ্যে ঐক্যের বুনিয়াদ সুদৃঢ় করা।
লেখক পরিচিতি অমল সরকার বর্তমানে দ্য ওয়াল-এর এক্সিকিউটিভ এডিটর। এর আগে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এই সময়, বর্তমান, আজকাল, প্রতিদিন, কর্মক্ষেত্র, ভারতকথা, আকাশবাণী-তে কাজ করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় এমএ করার সময় থেকেই লেখালেখি শুরু। সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি খবরের কাগজের ‘চিঠিপত্র’ বিভাগে। চিঠির বয়ানে নাগরিক সমস্যা লিখে পাঠাতেন। চিঠি লিখতেন সাড়া ফেলে দেওয়া ঘটনাবলী নিয়ে নিজের মত জানিয়ে। বলাই যায় তিনি পাঠকের কলমের নাগরিক সাংবাদিক। বেশ কয়েক বছর যাবৎ তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ এবং বিভিন্ন কলেজের অতিথি অধ্যাপক।
তাঁর সাংবাদিকতার মেয়াদ তিন দশক উত্তীর্ণ। এই দীর্ঘ মসয় ধরে সাংবাদিকতার সুবাদে রাজ্যের নানা প্রান্তে, নানা রাজ্যে গিয়েছেন। এই তিন দশকে সমস্ত বড় নির্বাচন কভার করার অভিজ্ঞতা তাঁর ঝুলিতে। কভার করেছেন সমস্ত বড় রাজনৈতিক অধ্যায়, ঘটনা-দুর্ঘটনা।
পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানায় জমি আন্দোলন এবং বামফ্রন্ট সরকারের ভূমিকা নিয়ে তাঁর বই ‘জমির উলটপূরাণ’ নির্ভরযোগ্য সমকালীন দলিল হয়ে আছে।
২০১২ ছিল ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার ৭৫ বছর, দেশভাগের ৭৫ বছর এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। ৭৫ বছর আগের অখণ্ড দেশটির তিন টুকরো ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ আজ কোথায় দাঁড়িয়ে, দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ কীভাবে ক্রমশ শিল্প-ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা-সহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পিছিয়ে পড়ল, এ বাংলার জন্য রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের কার কী ভূমিকা, কীভাবে এগিয়ে গেল সেদিনের পূর্ব বাংলা, পরে পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশ, তা নিয়ে তাঁর গবেষণালব্ধ বই ‘আমার দেশ আমার দ্যাশ’ পাঠকমহলে বিপুল সাড়া ফেলে এবং বই সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস পরবর্তী ভারতের মন্দির-মসজিদ রাজনীতির নিষ্ঠাবান পর্যবেক্ষক তিনি।