গত ৩২ বছরে (১৯৮৮-২০২০) দেশের হাওর এলাকায় জলাধারের জায়গা ৯০% কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বিশ্ববিদ্যালয়টির দুই শিক্ষার্থীর এক গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফলে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (২৪ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে “ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) এর হাওর এলাকার ভূমি ব্যবহারের কয়েক দশকের পরিবর্তন ও এবারের বন্যার ব্যাপকতা” শীর্ষক আলোচনায় এ গবেষণা ফল প্রকাশ করা হয়।
বুয়েটের শিক্ষার্থী ইনজামাম-উল-হক রিফাত ও মারিয়া মেহরিন গবেষণাকর্মটি ২০২১ সালের মার্চ মাসে শুরু করে ২০২২ সালের জুনে শেষ করেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮৮ সালে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হাওরে জলাধার ছিল ৩ হাজার ২৬ বর্গ কিলোমিটার। যা ২০২০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৯৯ বর্গ কিলোমিটার। অপরদিকে, জলাধারে গড়ে উঠেছে অবকাঠামো। ১৯৮৮ সালে হাওর অবকাঠামো আচ্ছাদিত এলাকা ছিল ৯৮৮ বর্গকিলোমিটার এবং ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৪০ বর্গ কিলোমিটার।
আইপিডির নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, “২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে হাওরে জলাধার সবচেয়ে বেশি কমেছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০২০ সালে ভূমির ব্যবহারে বেশি পরিবর্তনের কারণ হাওর উন্নয়ন বোর্ডের মাস্টারপ্ল্যান।”
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “হাওরে এবারের বন্যার জন্য অনেকে অল ওয়েদার সড়কসহ নানান কারণের কথা বলছেন। তবে হাওর এলাকায় বন্যার মূল কারণ জলধারণের জায়গা কমে যাওয়া।”
আইপিডির পরিচালক আরিফুল ইসলাম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে রক্ষা পেতে ভূমি বৈচিত্র্য অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা করার আহ্বান জানান।
পরিকল্পনাবিদ চৌধুরী মো. জাবের সাদেক বলেন, “ভয়াবহ পরিমাণ জলাধার কমেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো, যতটুকু হাওর এলাকা আছে, ততটুকু আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের এ জন্য ডিজিটাল মনিটরিং করতে হবে।”
তিনি উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে পরিবেশগত প্রভাব ও পরিকল্পনাগত প্রভাব কঠোরভাবে নির্ণয় ও প্রয়োগের আহ্বান জানান।
গবেষক ইনজামাম জানান, তিনি গবেষণাটি করতে স্যাটেলাইটের ছবি ও গুগল আর্থের সহযোগিতা নিয়েছেন। তার গবেষণা সুপারভাইজার ছিলেন বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক মো. শাকিল আকতার।