দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২৫ জুন উদ্বোধন হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর।এ দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করার পর ২৬ জুন ভোর থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতুটি। এই সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ অঞ্চলের মানুষের নানা আবেগ ও অনুভূতি।সেই সঙ্গে রয়েছে এই সেতু সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানার বিপুল আগ্রহ।
সেতু বিভাগ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সেরকম কিছু তথ্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
পানি প্রবাহের দিক দিয়ে পৃথিবীতে আমাজন নদীর পরই অবস্থান পদ্মার। প্রমত্তা এই নদীতে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের সাফল্য। এই সেতু রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশকে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার সঙ্গে যুক্ত করবে।
নদীশাসন, পাইল ও বিয়ারিংয়ের ব্যবহারসহ পদ্মা সেতু কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্বে রেকর্ড করেছে।
মূল সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর। উদ্বোধন হবে ২০২২ সালের ২৫ জুন। সেই হিসেবে, পুরো সেতু নির্মাণে সময় লেগেছে মোট ২ হাজার ৭৬৮ দিন। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন কারণে কাজের গতি কমলেও একদিনের জন্যও কাজ থেমে থাকেনি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজে ২০টি দেশের মানুষের মেধা জড়িয়ে আছে। দেশগুলো হচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, ডেনমার্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, তাইওয়ান, নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ।
ব্রিটিশ নাগরিক রবিন শ্যামের নেতৃত্বে পদ্মা সেতুর বিশদ নকশা করা হয় হংকংয়ে। নকশা প্রণয়নে ব্যবস্থাপক ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কেন হুইটলার।
সেতুর নির্মাণকাজের তদারকির নেতৃত্ব দেন নিউজিল্যান্ডের নাগরিক রবার্ট জন এভস। আর নদীশাসনের নকশা প্রণয়নে ছিলেন কানাডার ব্রুস ওয়ালেস। এ কাজে আরও ছিলেন জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৌশলীরাও।
পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ১৩৮ ব্যক্তি। এর মধ্যে প্রকল্প পরিচালকসহ বড় পদে আছেন ৩২ জন। তাদের মধ্যে মো. শফিকুল ইসলাম সড়ক ও জনপদের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে থাকাকালে ২০১১ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক হন। তার অধীনে ঠিকাদার নিয়োগ ও নির্মাণকাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। আগামী বছর জুন পর্যন্ত তিনি পরিচালক হিসেবে থাকছেন।
প্রকল্পের উপপরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্বে রয়েছেন সওজের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান।
পদ্মা সেতুতে ১০টি দেশের বিপুল উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কিছু না কিছু উপকরণ ব্যবহার হয়েছে আরও প্রায় ৫০টি দেশের।
বাংলাদেশের বাইরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি উপকরণ চীন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, লুক্সেমবার্গ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়েছে।
মূল সেতুতে প্রায় ২ লাখ ৮৯ হাজার টন স্টিলের প্লেট লেগেছে, যার পুরোটাই এসেছে চীন থেকে।