ফিনল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া আক্রমণ করলে লড়াই প্রস্তুত তার দেশ। এর জন্য কয়েক দশক ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, যদি এটি ঘটেই তবে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে ফিনল্যান্ড।
রাশিয়া ইউক্রেনে ঘোষণা দিয়েই সামরিক অভিযান শুরু করেছে। ফলে অপ্রত্যাশিত হামলার শঙ্কা রয়েছে, এমন ঝুঁকি থেকেই সীমান্তবর্তী দেশ ফিনল্যান্ড আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান জেনারেল টিমো কিভিনেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নর্ডিক দেশটি ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য অস্ত্রাগার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার এক হাজার ৩৪০ কিলোমিটারের স্থল সীমান্ত রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য যেকোনও সদস্য রাষ্ট্রের চেয়ে এই দেশটির সঙ্গেই সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে মস্কোর। ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের পর রাশিয়ার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় ফিনল্যান্ড। সোভিয়েত স্বৈরশাসক জোসেফ স্ট্যালিন সাবেক রুশ ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলে, তার সঙ্গে ১৯৩৯-৪০ সাল পর্যন্ত রক্তাক্ত উইন্টার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ফিনল্যান্ড। কমিউনিস্ট মস্কোর জন্য যুদ্ধটি এত অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়কর ছিল যে, এর ফলে ১৯৪১ সালে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারের সোভিয়েত আক্রমণের পথ সুগম করে।
বিশ্বের শান্তির দেশ হিসেবে পরিচিত ফিনল্যান্ড এখন পর্যন্ত কোনও সামরিক জোটে অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের মতো একটা হামলা করে বসতে পারে রাশিয়া, এই শঙ্কা থেকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগদানের পথে হেলসিংকি।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে সামরিক প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে দেশটিকে। এ নিয়ে জেনারেল টিমো কিভিনেন বলেন, ‘ইউক্রেনে যে ধরনের হামলা চালানো হচ্ছে তাতে সতর্কতামূলক প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের সামরিক প্রতিরক্ষাকে সুনির্দিষ্টভাবে গড়ে তুলেছি। তবে ইউক্রেনে কঠোর প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে রাশিয়াকে, যেটি ফিনল্যান্ডেও পড়তে হবে’।
তিনি আরও বলেন, ফিনল্যান্ড যে দুটি যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল সেসময় প্রায় ১ লাখ নাগরিক নিহত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ফিনল্যান্ডকে তার ভূখণ্ডের কিছু অংশ হারাতেও হয়।
এখন ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় শক্তিশালী আর্টিলারি মজুদ করছে দেশটি। যা ৩৭০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। এছাড়া ক্রুজ মিসাইলও ব্যাপকভাবে মজুদ করেছে দেশটি। ফিনল্যান্ড তার জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করছে। যা ন্যাটোর অনেক দেশের চেয়ে বেশি।
মস্কোর ভয়ে নতুন করে মার্কিন প্রতিরক্ষা জায়ান্ট লকহিড মার্টিনের কাছ থেকে চারটি অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ ক্রয় চুক্তির পাশাপাশি ৬৪টি এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমান অর্ডার করেছে দেশটি। শুধু তাই নয়, ২ হাজার ড্রোন কেনারও পরিকল্পনা করেছে হেলসিংকি। রুশ সীমান্তে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনেরও পরিকল্পনা রয়েছে ফিনল্যান্ডের। আর ন্যাটোয় যোগদানের আবেদনের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন ফিনিশ জেনারেল টিমো কিভিনেন।
তবে পশ্চিমা সামিরক জোটে যোগ না দিতে ফিনল্যান্ডকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিন বলছে, ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের যোগদান মস্কোর নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি।
সূত্র: রয়টার্স।