মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ১৯৭১ সালের ১ আগস্টে নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে পণ্ডিত রবিশংকর ও জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিশ্বের প্রথম সেবামূলক কনসার্ট ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’- এই মহতি উদ্যোগের ৫০ বছর পূর্তিতে লেখক–গবেষক আবু সাঈদ ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের লেখক ও গবেষক প্রিয়জিৎ দেবসরকার যৌথভাবে লেখেন ‘‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: দুই বন্ধু এক দেশ।’
গত ১৭ জুন, শুক্রবার, সন্ধ্যা ৬টায়, বাংলাদেশের ঢাকার রাজধানীর কাঁটাবনের কবিতা ক্যাফে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠক ‘মুক্ত আসর’ এই বইটি নিয়ে ‘বইয়ের আলোচনা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া বাংলা দেশ গানটির মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সূচনা বক্তব্য দেন স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা। লেখক প্রিয়জিৎ দেবসরকারকে উত্তরীয় ও বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াজ জাতীয় কমিটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ইতিহাসবিদ ড.এ কে এম শাহনাওয়াজের সভাপতিত্বে বইয়ের আলোচনা শুরু হয়।
আলোচনায় প্রিয়জিৎ দেবসরকার বলেন, ‘মুক্ত আসরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ২০১৫ সাল থেকে। নানা উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করছি। করোনার সময়ে আমরা বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ সফলভাবে সম্পন্ন করি।তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা বিশ্বে কি ধরণের কাজ হয়েছে। সেটার উপর আমরা কাজ করব। দেখা গেল, বিশ্বের এই প্রথম সেবামূলক কনসার্ট নিয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ–নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বই আকারে তা প্রকাশিত হয়নি। আমরা বিভিন্ন তথ্য–লেখা সংগ্রহ করার কাজ শুরু করি। প্রায় তিনবছর পর বইটির আলোর মুখ দেখে। আমরা চাই, এই বই বিভিন্ন ভাষা অনুদিত হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক।’
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ১১২ পৃষ্ঠার আকারে ছোট বই হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। বইয়ের তিনটি অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমি মনে করি, বইয়ের দুই লেখক সুপরিকল্পিতভাবে গ্রন্থের বিষয়গুলো উপস্থাপনা করেছেন। পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মাত্র পাঁচ সপ্তাহের প্রস্তুতি এতো বড় তারকাসমৃদ্ধ কনসার্টের আয়োজন করেন। এখানে শুধু জগৎখ্যাত শিল্পীদের গান শোনার জন্য ৪০ হাজার মানুষ একত্রিক হয়েছিল এমনটি কিন্তু না, এখানে সমবেত হয়েছি এটা দেশের বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। তাঁদেরকে এই আয়োজনের মাধ্যমে গভীর ভাবে স্মরণ করি।
অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ বলেন, ‘ছোট এই বইটিতে প্রতিটি শব্দে একটি দায়িত্বশীলতা রয়েছে। ছোট কিন্তু অনেক বড় একটি ক্যানভাস এই বইটিতে। আমি পড়েছি এবং বিস্মিত হয়েছি। কনসার্ট ফর বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতাম না, এই বইয়ের মাধ্যমে জানিয়েছে। আমি এতোদিন শুধু জানতাম, এর মহান নায়ক জর্জ হ্যারিসন।কিন্তু এই বইটি পড়ে জানলাম, না, হ্যারিসন নয় মহানায়ক হলে পণ্ডিত রবিশঙ্কর। তিনিই ভেবেছে, তিনিই সমস্ত চিন্তা করেছেন এবং তিনি তাঁর বন্ধুকে উদ্বুদ্ধ করে আয়োজন করেছেন। এই বইয়ের মধ্যে দিয়ে নতুন কিছু জানলাম। বইয়ের বিন্যাসটা অত্যন্ত সুচিন্তিত। আমার জানার মতো এমন বই প্রকাশিত হয়নি। এই গ্রন্থটি একটি অনবদ্য সৃষ্টি। প্রথমবারের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা তৈরি করে আমাদের মাথায় কড়ানাড়া দিয়েছেন। এই কড়ানাড়ার জন্য আমি এই দুই লেখকের কাছে কৃতজ্ঞতা।’
আবু সাঈদ বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব কাহিনীগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। এই বইটির মাধ্যমে আমরা তা করার চেষ্টা করছি। ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ বিশ্বজনমত গঠনের জন্য বলিষ্ট ভূমিকা রাখে। আমরা চেষ্টা করেছি, দুই বন্ধু পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনে এই উদ্যোগে সঙ্গে যে সব বিশ্বখ্যাত তারকারা যুক্ত ছিলেন তারা কথাগুলো তুলে ধরতে। বইটি ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত করে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছায় দেওয়ার জন্য কাজ করছি।
অনুষ্ঠানে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজনের সঙ্গে যারা যারা যুক্ত ছিলেন তাদের কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করা হয়। পাঠকপর্বে বক্তব্য রাখেন মুক্ত আসরের উপদেষ্টা ফারাহ দিবা আহমেদ, সাবেক সচিব সাইদুর রহমান, এবিসি রেডিও নাদিয়া নিতুল ইসলাম, ইশরাত জাহান, কে জামান পূর্ণিমা, দেবব্রত নীল, নিঝুম, পুলক, শিবমসহ প্রমুখ।
আলোচনা ও পাঠকের প্রশ্ন উত্তর শেষে সংগীত পরিবেশন করবেন বিশিষ্ট নজরুল সংগীত শিল্পী উম্মে রুমা ট্রফি ও মুক্ত আসরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শায়লা রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মুক্ত আসরের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আয়শা জাহান নূপুর ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক নাফিজা রহমান মৌ। বইটি প্রকাশিত হয় স্বপ্ন’৭১ প্রকাশন থেকে। বইটি মূল্য ২৮০ টাকা।
বইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠানে মুক্ত আসরের সঙ্গে সহআয়োজক স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন ও বইবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘বইচারিতা।’