বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল হওয়ার পর বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে বানের পানিতে মৃত্যুর খবর আসছে। তবে সঠিক কোনো সরকারি পরিসংখ্যান না থাকায় মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
রবিবার (১৯ জুন) রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সিলেট সদরে তিনজন এবং সুনামগঞ্জের ছাতকে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে, সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাও ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামে বন্যার পানিতে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। তারা হলেন- সদর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা এ কে আবুল কাশেম (২৪) ও তার দাদি ছুরেতুন নেছা (১০৫)।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা প্রভাষক সেলিম আহমদ জানান, আবুল কাশেমদের পরিবার উপজেলার মদীনা মার্কেট এলাকায় থাকে। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে নৌকা নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আটকে পড়া বৃদ্ধ দাদি ও চাচাতো বোনদের উদ্ধার করতে যান তিনি।
সবাইকে নিয়ে শহরে ফেরার পথে সুজাতপুর আইডিয়াল স্কুল এলাকায় তীব্র স্রোতে তাদের নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় তার ছোট চাচাতো দুই বোন উল্টে যাওয়া নৌকা ধরে প্রাণে বাঁচলেও তাদের দাদি আবুল কাশেমকে আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। এতে দুজনই তলিয়ে যান।
শুক্রবার ছুরেতুন বেগমের মরদেহ ভেসে উঠে। রবিবার সকালে একই জায়গায় ভেসে ওঠে আবুল কাশেমের মরদেহ। দুজনকেই দাফন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কান্দিগাও ইউনিয়নের নলকট গ্রামে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তীব্র স্রোতে আব্দুল হাদি (১৮) নামের এক তরুণ ভেসে গিয়েছিলেন। রবিবার তার বাড়ির পাশে মরদেহ ভেসে ওঠে।
নলকট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালিক মামুন লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়া বাজার থেকে বানের পানিতে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী হানিফা বেগমের (৯) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার বিকেলে পার্শ্ববর্তী কাইতকোনা এলাকা থেকে তার মরেদহ উদ্ধার করা হয়। হানিফা শান্তিগঞ্জ উপজেলার বড়মোহা গ্রামের মৃত জিলু মিয়ার মেয়ে। মামা বাড়িতে বেড়াতে এসে বানের পানিতে ডুবে মারা যায় মেয়েটি।
মৃতের মামা ছফেদ আলী পীর জানান, ঘটনার দিন হানিফাসহ তারা নৌকায় করে বাড়ি ফিরছিলেন। জাউয়া ডিগ্রি কলেজের কাছে তাদের নৌকাটি ডুবে যায়। বাকি আরোহীরা রক্ষা পেলেও হানিফা বানের পানিতে ভেসে যায়।
ঘটনার দু’দিন পর রবিবার বিকেলে তার লাশ ভেসে ওঠে। খবর পেয়ে স্বজনরা লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
ছাতকের সাংবাদিক সৈয়দ হারুন অর রশীদ জানান, সেখানে পানিতে ডুবে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- ছাতক পৌরসভার কানাখালি রোডের আখড়া এলাকায় পীযুস (৪০) ও ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার জুনেদ (২৭)। জুনেদ গত শনিবার ছাতক থেকে বাড়িতে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। রবিবার তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত কোন মৃত্যুর খবর তারা পাননি।
এর আগে শনিবার সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক দোয়ারাবাজার ও ছাতকের পাঁচজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিলেন।