নবী মুহাম্মদ-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকারী ভারতের রাজনীতিবিদ বিজেপির বহিস্কৃত নেত্রী নূপুর শর্মার পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে নড়াইলে ব্যাপক সংঘর্ষ ও তিন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। আটক করা হয়েছে রাহুল দেব অপি নামের পোস্টদাতা এক কলেজছাত্রকে।
শনিবার সদর উপজেলার মির্জাপুর আদর্শ কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। এতে এক কলেজ শিক্ষকসহ অন্তত ১০ ছাত্র ও স্থানীয় বাসিন্দা এবং ২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
ঘটনায় মির্জাপুর কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, শিক্ষক প্রশান্ত কুমার রায় এবং অজিত কুমার বিশ্বাসের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
মির্জাপুর কলেজের প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগের ছাত্র জীবন শেখ জানান, একই বিভাগের ছাত্র রাহুল দেব অপি তার রাহুল দেব রায় নামের ফেসবুক আইডিতে দু’দিন আগে নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করেন। যাতে তিনি লেখেন, ‘‘প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রী রাম’’। পোস্টটি তাকে মুছে ফেলতে বললেও তিনি তা করেননি। শনিবার কলেজে এসে বিষয়টি প্রিন্সিপাল স্যারকে জানালেও তিনি সন্তোষজনক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এ ঘটনার জেরে ৪০০ থেকে ৫০০ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেন। এ সময় কলেজের গ্যারেজে থাকা তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। বিছালী পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ও সদর থানা পুলিশ এসেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর আদর্শ কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অচিন চক্রবর্তী জানান, কলেজের অধ্যক্ষ আমাকে বিষয়টি জানালে আমি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ফোন করি। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মির্জাপুর কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে এ ব্যাপারে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর থানার ওসি শওকত কবীর বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। ইটপাটকেলের আঘাতে দুই পুলিশ সদস্যের হাত সামান্য কেটে গেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া যুবককে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।
নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, নড়াইল-১ আসনের এমপি রোববার মীর্জাপুর এলাকায় এসে এ বিষয় নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। ওই এলাকায় যাতে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।